কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে জেলার ১৩ উপজেলায় ৯৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে ৭ লাখ ১১ হাজার ২২৬ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
গত সোমবার থেকে সিলেটে তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সিলেটের প্রধান সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে পানি জমে সিলেট নগরেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নগরের শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাট, যতরপুর, মীরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, শামীমাবাদ, মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়ি, তালতলা, জামতলা ও চৌকিদেখী এলাকাসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দী অবস্থায় আছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানিয়েছেন, নগরের মীরাবাজার এলাকার কিশোরী মোহন বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে ৮০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা বাসিন্দাদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
অপরদিকে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ সবচেয়ে বেশি বন্যার কবলে পড়েছে। জকিগঞ্জের কয়েকটি জায়গায় কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম। এছাড়াও জেলার সব কটি উপজেলায় প্লাবন দেখা দিয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তাঁর উপজেলার ১৫১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় ৯৮ হাজার বাসিন্দা। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।
জৈন্তাপুর উপজেলার ইউএনও উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, মঙ্গলবার দুপুর থেকে বৃষ্টি কমে আসায় পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দুপুরের পর অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ছয়টি পয়েন্টেই পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সকাল নয়টার দিকে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৪৩ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৮ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ ছাড়া দুই দফা বন্যায় সব নদ-নদী ও হাওর এলাকা পানি ভর্তি থাকায় পানি কমছে ধীরে।