১১:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দুর্ভোগ চরমে

সিলেটের তিন জেলায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি

ছবি-শরীফ আহমদ

টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে সিলেটের সুরমা-কুশিায়ারা, সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও মৌলভীবাজারের মনু নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে গ্রামীণ সড়ক, ঘরবাড়ি ও ফসিল জমি। এতে তিন জেলায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

এক বর্ষায় ছয়বার ডুবল সিলেট শহর

টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরের বেশ কিছু এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ নিয়ে চলতি বর্ষায় ছয়বার জলাবদ্ধ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সিলেট নগরবাসী। সোমবার রাত থেকেই নগরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে নগরের মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়ি, তালতলা, জামতলা, কুয়ারপা শিবগঞ্জ, শাহজালাল উপশহর, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, মজুমদারি, চৌকিদেখী, দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা। এর আগে গত ২৮ মে থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে প্রথম দফায় সিলেটজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে গত ১৬ জুন আবার বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েন সিলেটের বাসিন্দারা।

এছাড়া জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুরসহ সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো আবারও বন্যার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। গোয়াইনঘাট উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে ১৫১টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র এক সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর অমলশিদে ৮৯, শেওলায় ২৬, শেরপুর ১৭ ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানিয়েছেন বন্যা মোকাবিলায় সব ধরণের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জেলায় ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পরিস্থিতিতির খবরাখবর রাখার জন্য সব উপলোর ইউএনওদের নির্দশেনা দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয়বারের মতো ডুবল সুনামগঞ্জ

পাহাড়ি ঢলে দ্বিতীয়বারের মতো সুনামগঞ্জেও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলা। দুই উপজেলার ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় তলিয়ে গেছে পৌর শহরের কাজীর পয়েন্ট, উত্তর আরপিননগর, নতুন পাড়া, হাসননগরসহ বেশ কিছু এলাকা। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে তাহিরপুর উপজেলা। দোয়ারাবাজার উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে সুরমা, লক্ষ্মীপুর ও বাংলাবাজারসহ তিন ইউনিয়নের। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কমলে নদীর পানি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

মৌলভীবাজারে বাঁধ ভেঙে ঢুকছে পানি

আজ মঙ্গলবার সকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা এলাকায় কুশিয়ারার পানি উপচে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে হামরকোনা, ব্রাহ্মণগ্রাম ও শেরপুর বাজারের একাংশ প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনার প্রতিরক্ষা বাঁধের ১৫ থেকে ২০ ফুট জায়গা ভেঙে গেছে। ওই ভাঙা অংশ দিয়ে গ্রামের দিকে পানি ঢুকছে। জেলার মনু, কুশিয়ারাসহ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। মনু নদের পানি আজ দুপুরে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘কুশিয়ারার পানি বাড়াটা ভয়ের। কুশিয়ারায় পানি বাড়লে মনুর পানি কমবে না। কুশিয়ারা নদীর খলিলপুর এলাকায় পাউবোর স্থায়ী কোনো বেড়িবাঁধ নেই। হামরকোনায় এলজিইডির রাস্তা ভেঙে খলিলপুর ইউনিয়নে পানি ঢুকছে। ভাঙা মেরামতের জন্য বালুভর্তি এক হাজার সিন্থেটিকের বস্তা পাঠিয়েছি।’

দুর্ভোগ চরমে

সিলেটের তিন জেলায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি

প্রকাশিত: ০৭:৪৫:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪

টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে সিলেটের সুরমা-কুশিায়ারা, সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও মৌলভীবাজারের মনু নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে গ্রামীণ সড়ক, ঘরবাড়ি ও ফসিল জমি। এতে তিন জেলায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

এক বর্ষায় ছয়বার ডুবল সিলেট শহর

টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরের বেশ কিছু এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ নিয়ে চলতি বর্ষায় ছয়বার জলাবদ্ধ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সিলেট নগরবাসী। সোমবার রাত থেকেই নগরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে নগরের মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়ি, তালতলা, জামতলা, কুয়ারপা শিবগঞ্জ, শাহজালাল উপশহর, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, মজুমদারি, চৌকিদেখী, দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা। এর আগে গত ২৮ মে থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে প্রথম দফায় সিলেটজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে গত ১৬ জুন আবার বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েন সিলেটের বাসিন্দারা।

এছাড়া জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুরসহ সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো আবারও বন্যার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। গোয়াইনঘাট উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে ১৫১টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র এক সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর অমলশিদে ৮৯, শেওলায় ২৬, শেরপুর ১৭ ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানিয়েছেন বন্যা মোকাবিলায় সব ধরণের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জেলায় ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পরিস্থিতিতির খবরাখবর রাখার জন্য সব উপলোর ইউএনওদের নির্দশেনা দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয়বারের মতো ডুবল সুনামগঞ্জ

পাহাড়ি ঢলে দ্বিতীয়বারের মতো সুনামগঞ্জেও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলা। দুই উপজেলার ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় তলিয়ে গেছে পৌর শহরের কাজীর পয়েন্ট, উত্তর আরপিননগর, নতুন পাড়া, হাসননগরসহ বেশ কিছু এলাকা। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে তাহিরপুর উপজেলা। দোয়ারাবাজার উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে সুরমা, লক্ষ্মীপুর ও বাংলাবাজারসহ তিন ইউনিয়নের। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কমলে নদীর পানি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

মৌলভীবাজারে বাঁধ ভেঙে ঢুকছে পানি

আজ মঙ্গলবার সকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা এলাকায় কুশিয়ারার পানি উপচে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে হামরকোনা, ব্রাহ্মণগ্রাম ও শেরপুর বাজারের একাংশ প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনার প্রতিরক্ষা বাঁধের ১৫ থেকে ২০ ফুট জায়গা ভেঙে গেছে। ওই ভাঙা অংশ দিয়ে গ্রামের দিকে পানি ঢুকছে। জেলার মনু, কুশিয়ারাসহ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। মনু নদের পানি আজ দুপুরে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘কুশিয়ারার পানি বাড়াটা ভয়ের। কুশিয়ারায় পানি বাড়লে মনুর পানি কমবে না। কুশিয়ারা নদীর খলিলপুর এলাকায় পাউবোর স্থায়ী কোনো বেড়িবাঁধ নেই। হামরকোনায় এলজিইডির রাস্তা ভেঙে খলিলপুর ইউনিয়নে পানি ঢুকছে। ভাঙা মেরামতের জন্য বালুভর্তি এক হাজার সিন্থেটিকের বস্তা পাঠিয়েছি।’