বৃষ্টি ও উজানের ঢল থামায় সিলেটের নদ নদীগুলোর পানি কিছুটা কমেছে। তবে সুরমা-কশিয়ারা নদীর পানি ছয়টি পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ এখনও কাটেনি। দুর্গত এলাকায় খাবার, শিশুখাদ্য ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গত সোমবার থেকে সিলেটে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে গত ২৯ মে সিলেটে বন্যা হয়েছিল, সেটি ৮ জুনের পর অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়। এর রেশ না কাটতেই ফের বন্যার কবলে পড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বানভাসি মানুষেরা।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, নগর ও জেলার মোট ১৩০টি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকার ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৮৪ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে ১ হাজার ৬০২টি গ্রাম। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ২০ হাজার ৭৮৬ জন মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য রান্না করা ও শুকনা খাবারসহ বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও সিলেটের অধিকাংশ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও পানিতে নিমিজ্জিত রয়েছে। তবে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ ও সদর উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় পানি কমার খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খববর পাওয়া গেছে। একদিনের ব্যবধানে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে গোয়াইনঘাটের সারি নদীর পানি থেকে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তথ্যমতে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এই পানি শেওলা পয়েন্ট ৩৩ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। এই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০২ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সব কটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে।
এদিকে সিলেট নগরের জলাবদ্ধ এলাকাগুলোয় পানি কিছুটা কমলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। জমে থাকা পানিতে ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মীরাবাজার, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, তোপখানা, বেতেরবাজার, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপাড় ও মণিপুরি রাজবাড়ি এলাকা এখনো জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সিলেটে আগামী দুই দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।