ভোটের বাকি আর মাত্র ৩দিন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট ৬ আসনে শেষ মুহুর্তে জমেছে নির্বাচনের আমেজ বিরামহীন চলছে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনা। বসে নেই হেভিওয়েট ৩ প্রার্থীর সমর্থকরা, কমর বেধে মাঠে আছেন বীরমুক্তিযুদ্ধা বীর বিক্রম শমসের মুবিন চৌধুরী। তার সঙ্গী হয়েছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি এলিম সহ একডজন আওয়ামীলীগ নেতা। সময় যত গড়াচ্ছে নির্বাচনের বাতাস প্রবল হচ্ছে।
সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে নির্বাচনী প্রচারণা বেশ জমে উঠেছে। চা-স্টল থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে প্রত্যাবর্তন না পরিবর্তন এই আলোচনা। সময়ে সময়ে পাল্টাচ্ছে ভোটের গতিপথ। এজন্য জয়-পরাজয়ের চিত্র অনেকটা জটিল হয়ে উঠছে। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির হেভিওয়েট দু’প্রার্থীসহ ৬ জন।
এরমধ্যে নৌকা প্রতীকের নুরুল ইসলাম নাহিদ, সোনালী আঁশ’র শমসের মুবিন চৌধুরী বীরবিক্রম ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থী সরওয়ার হোসেন এর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।
সিলেট-৬ সংসদীয় আসনে এবার ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং শমসের মুবিন চৌধুরী, জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিব ছাড়া অপর ২জন নতুন মুখ। এর মধ্যে কানাডার নাগরিকত্য ত্যাগ করে বিগত কয়েক বছর থেকে মাঠে আছেন সরওয়ার হোসেন, এ আসনে নুরুল ইসলাম নাহিদ পরপর ছয়বার নির্বাচন করে চারবার বিজয়ী ও দু’বার শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। শমসের মুবিন চৌধুরী বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের একপর্যায়ে তিনি ভোটের মাঠ ও রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান নতুন করে তৃণমূল বিএনপি থেকে আবারো সক্রিয় হন ভোটের মাঠে, অপর প্রার্থী সেলিম উদ্দিন বিগত নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হন এবং বিরোধী দলীয় হুইপ হিসেবে নির্বাচিত হন বাকি ২জন প্রার্থীর কেউই অতীতে এ আসনে নির্বাচন করেননি।
শুরু থেকেই মাঠে না থাকলেও তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন, সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত শমসের মুবিন চৌধুরী বীর বিক্রম, ছিলেন আলোচনার শীর্ষে। নৌকার নুরুল ইসলাম নাহিদ ও ঈগল প্রতীকের সরওয়ার হোসেনের নাম ছিলো ভোটারদের মুখে মুখে। আওয়ামী লীগের সিংহভাগ নেতা এমপি নাহিদের পক্ষে থাকলেও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান, আবুল কাশেম পল্লব সহ বেশ কিছু নেতা রয়েছেন সরওয়ার হোসেনের সাথে।
বিয়ানীবাজারে এতোদিন ঈগল এগিয়ে থাকলেও বর্তমানে সেই অবস্থানের কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে।বিপরীতে নৌকার পালে দখিনা হাওয়ার আভাস মিলেছে। সচেতন মহল ও ভোটারদের সাথে কথা বলে নির্বাচনী মাঠের এমন তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে।
সিলেট-৬ আসনে দু’টি উপজেলা ও দু’টি পৌরসভা রয়েছে। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গোলাপগঞ্জে নৌকার প্রার্থী ও বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচিত হন। আবার, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন এর সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আব্দুল বারী ও বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, গোলাপগঞ্জ পৌর সভার সাবেক মেয়র জাকারিয়া হুসেন পাপলু এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী শমসের মুবিন চৌধুরীর সাথে গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির সাফি চৌধুরী এলিম ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ রয়েছেন। তবে নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি’র সাথে দু’উপজেলা চেয়ারম্যান না থাকলেও বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র ফারুকুল হক ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল রয়েছেন। ভোটের হিসেবেও যুদ্ধ চলছে নৌকা-ঈগল-সোনালী আঁশ এর মধ্যে।
এ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মো. সেলিম উদ্দিন প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় তাঁর উল্লেখযোগ্য পোস্টার, ব্যানার রয়েছে। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ছড়ি প্রতীকের আতাউর রহমান আতা ও ইসলামী ঐক্যজোটের মিনার প্রতীকের প্রার্থী সাদিকুর রহমান এর তেমন কোন প্রচারণা চোখে পড়েনি।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শমসের মুবিন চৌধুরী বলেন, ‘এখনো নির্বাচনী পরিবেশ খুব ভালো। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে সহযোগিতা করছেন। একজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভোটাররা আমাকে কাছে টেনে নিচ্ছেন। আমি আশাবাদী, সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ী হবো।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) সরওয়ার হোসেন বলেন যেখানেই যাচ্ছি, ভোটারদের সাড়া পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ,আমি শতভাগ আশাবাদী বিজয় আমার পক্ষে আসবে।
এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭২ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৯৪ জন পুরুষ ভোটার, ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৫৮ জন নারী ভোটার এবং ১ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।