এক মাসে তিন দফা বন্যা ও কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলমান অস্থিরতার কারণে সিলেটে পর্যটন খাতে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন টাকার অংকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার উপরে দাঁড়িয়েছে। পর্যটন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গেল তিন মাস ধরে সিলেটে পর্যটক খরা চলছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ বিল ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না হোটেলগুলো। তারা বলছেন সিলেটের পর্যটন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে এই মুহুর্তে সরকারি প্রনোদনার বিকল্প নেই।
জানা গেছে, দেশেরে অন্যতম পর্যটন নগরী সিলেট। জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি পিকনকস্পট রয়েছে সেখানে। যে কারণে বছরজুড়ে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে সিলেটে। পর্যটন শিল্পকে ঘিরে সিলেটে গড়ে ওঠেছে কয়েকশ’ হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস। কিন্তু সেই স্বপ্ন মিলিয়ে যায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে। দেশজুড়ে কোটা সংস্কার বিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তীতে সংঘাত-সংঘর্ষ ও কারফিউয়ের কারণে পর্যটনখাতের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
সিলেটের কয়েকজন হোটেল ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে সারা দেশে পর্যটন ব্যবসা কমলেও সিলেটে পর্যটক আগমন হয় সবেচেয়ে বেশি। বর্ষায় প্রকৃতি নবযৌবন লাভ করে, এতে সৌন্দর্য্য বাড়ে প্রকৃতিনির্ভর সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর। ফলে ওই সময় সারাদেশের পর্যটকদের ঝোঁক থাকে সিলেটে। কিন্তু এক মাসে তিন দফা বন্যা আর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলমান অস্থিরতার কারণে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ছিল। ফলে গেল তিন মাস ধরে সিলেটের বেশিরভাগ হোটেল পর্যটকশূন্য রয়েছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ জানান, গেল তিন মাস ধরে সিলেটের পর্যটন খাত কঠিন সময় পার করছে। বন্যা ও আন্দোলনের কারণে সিলেট বিভাগে এই খাতে পাঁচশত কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে। এই খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারি প্রনোদনার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণ এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভ্যাট রেয়াত দেওয়া হলে এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন।
সহিংসতায় সিসিকের ৫ কোটি টাকা ক্ষতি
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ৫ কোটির টাকার উপরে ক্ষতি হয়ে বলে জানিয়েছেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান।
তিনি জানান, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নগরীর বন্দরবাজার থেকে ধোপাদিঘীরপাড় ও মদিনা মাকের্ট থেকে তেমুখী সড়কে লোহা দিয়ে বানানো ডিভাইডার, রেলিং ও সৌন্দর্যবধনে লাগানো গাছের ক্ষতি করা হয়েছে। এছাড়াও সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার ১০টি ট্রাক, ২০০টি ডাস্টবিন ও বিদ্যুতের খুঁটি ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে সিটি করপোরেশেনের ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।’
সরেজমিনে গেলে দেখা গেছে, নগরের আম্বরখানা থেকে তেমুখী সড়কের সড়ক বিভাজকগুলো ভাঙা। মাঝখানে সৌন্দর্যবধনের জন্য লাগানো গাছ ও রেলিং ভেঙে ফেলা হয়েছে। বন্দরবাজার এলাকার ধোপাদিঘীরপাড়েও ভাঙচুর করা হয়েছে।