০৪:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে ৭টি লাইফ স্কিল আপনার সন্তানকে শেখাতে হবে

আপনার সন্তান আপনার আয়না। আপনি তাকে যা শেখাবেন, সে সেভাবেই প্রতিফলিত করবে। মা-বাবা হওয়া অনেক বড় দায়িত্ব। আরেকজন নতুন মানুষকে পুরো পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করা সহজ কথা নয়। মা-বাবা হলে তাই অনেক ভেবেচিন্তে কাজ করতে হয়। সন্তান যেন বড় হয়ে নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারে, সেভাবে গড়ে তুলতে হয়। প্রত্যেক মা-বাবারই সন্তানকে বেসিক লাইফ স্কিল শেখানো জরুরি। যেন তারা পরনির্ভরশীল না হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ৭টি লাইফ স্কিল সম্পর্কে, যা আপনার সন্তানকে শেখানো জরুরি-

১. রান্না করা

সন্তানকে মাস্টারশেফ বানাতে হবে না, অন্তত মা-বাবা অনুপস্থিতিতে যেন নিজের খাবারটা নিজে তৈরি করে খেতে পারে সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। ছেলে কিংবা মেয়ে, সবার জন্যই রান্না জানা সমান জরুরি। শুরুতেই কঠিন রান্না শেখানোর প্রয়োজন নেই। তার স্কুলের টিফিনের জন্য স্যান্ডুইচ, নুডলস কিংবা সালাদ কিভাবে তৈরি করতে হয় তা শেখান। এরপর ধীরে ধীরে চলনসই রান্নাও শিখিয়ে ফেলুন। চুলা এবং মাইক্রোওয়েভ কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তাও শিখিয়ে দিন। এভাবে সে প্রয়োজনীয় রান্না শিখে ফেলবে।

২. নিজের যত্ন নেওয়া

শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই নিজের যত্ন নিতে পারে না। এক্ষেত্রে তাকে আপনাদের সাহায্য করতে হবে। যখন কিছুটা বড় হবে তখন নিজে নিজে গোসল করা, দাঁত ব্রাশ করা, হাত ধোওয়া, জুতা পরা, পোশাক পরিবর্তন করার মতো অভ্যাস করাবেন। সেইসঙ্গে তাকে এর প্রয়োজনীয়তাও বুঝিয়ে বলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন। বাড়িতে একটি চার্ট সেট করুন যাতে তারা প্রতিদিন সম্পূর্ণ করা প্রতিটি কাজকে টিক দিতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা এই রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

৩. অর্থ ব্যবস্থাপনা

বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিও অর্থ ব্যবস্থাপনায় দক্ষ নন। যা নানা অসুবিধার কারণ হতে পারে। আপনার সন্তানকে তাই ছোটবেলা থেকেই  অর্থ সম্পর্কে শেখানোর চেষ্টা করুন। সন্তানের জন্য অঢেল সম্পদ না রেখে বরং তাকে অর্থ ব্যবস্থাপনা শেখানো বেশি জরুরি। কীভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে হয়, কীভাবে অতিরিক্ত খরচ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হয় তা তাকে শেখান। সঠিক খাতে খরচ করা একটি বড় গুণ। এটি শিশুকে শেখাতে হবে।

৪. সাহায্য চাওয়া

আপনার সন্তানকে প্রয়োজনের সময় সাহায্য চাওয়া শেখাতে হবে। এমন অনেককিছুই থাকতে পারে যা আমার ঠিক বুঝতে পারি না। তখন অন্য কারও সাহায্য নিয়ে সেটি বোঝার বা জানার চেষ্টা করা দোষের কিছু নয়। এতে মানুষ ছোটও হয়ে যায় না। এগুলো তাকে বোঝান। কোনোকিছু সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা থাকলে বা বুঝতে না পারলে অনুমান না করে কাছাকাছি কারও সাহায্য নিতে বলুন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লাইফ স্কিল যা অনেকের মধ্যেই অনুপস্থিত।

৫. ঘর গোছানো

ঘর গোছানো কেবল নারীর কাজ নয়। তাই আপনার সন্তান ছেলে হোক কিংবা মেয়ে, তাকে ঘর গোছানো শেখান। শিশুর কাছ থেকে নিখুঁতভাবে গোছানো আশা করবেন না। তবে তার ছোট্ট হাতেই যতটুকু সম্ভব গুছিয়ে রাখতে শেখান। কীভাবে বিছানা তৈরি করতে হয়, ময়লা কোথায় ফেলতে হয়, রান্নাঘর কীভাবে পরিষ্কার করতে হয় তা শেখানো গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো তার পুরো জীবনের জন্যই জরুরি।

৬. লন্ড্রি

শিশুরা শুরুতেই এই কাজে আগ্রহী নাও হতে পারে। কিন্তু তাকে বোঝাতে হবে কোনো কাজই ছোট নয়। আবার নিজের কোনো কাজের জন্য সব সময় অন্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়াও উচিত নয়। তাই তাকে নিজের কাপড় ধোওয়া, তোয়ালে ভাঁজ করা, ময়লা কাপড় আলাদা রাখা, ধোওয়া কাপড় ভাঁজ করে রাখা শেখাতে হবে। এভাবে অভ্যাস করলে তার পরবর্তী জীবন আরও সহজ হবে।

৭. ফরম পূরণ

এটি এমন একটি জিনিস যা আপনার সন্তানের সারাজীবন করতে থাকবে। আপনার তত্ত্বাবধান ছাড়াই তাকে সঠিকভাবে ফর্ম পূরণ করতে শেখান। তার কাছে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিন, এটি তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার জন্য প্রস্তুত করার একটি উপায়। এই অভ্যাস সন্তানকে কেবল স্বাধীনই করে না বরং তার আত্মবিশ্বাসের স্তরকেও বাড়িয়ে তোলে।

বিষয়

যে ৭টি লাইফ স্কিল আপনার সন্তানকে শেখাতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫২:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

আপনার সন্তান আপনার আয়না। আপনি তাকে যা শেখাবেন, সে সেভাবেই প্রতিফলিত করবে। মা-বাবা হওয়া অনেক বড় দায়িত্ব। আরেকজন নতুন মানুষকে পুরো পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করা সহজ কথা নয়। মা-বাবা হলে তাই অনেক ভেবেচিন্তে কাজ করতে হয়। সন্তান যেন বড় হয়ে নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারে, সেভাবে গড়ে তুলতে হয়। প্রত্যেক মা-বাবারই সন্তানকে বেসিক লাইফ স্কিল শেখানো জরুরি। যেন তারা পরনির্ভরশীল না হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ৭টি লাইফ স্কিল সম্পর্কে, যা আপনার সন্তানকে শেখানো জরুরি-

১. রান্না করা

সন্তানকে মাস্টারশেফ বানাতে হবে না, অন্তত মা-বাবা অনুপস্থিতিতে যেন নিজের খাবারটা নিজে তৈরি করে খেতে পারে সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। ছেলে কিংবা মেয়ে, সবার জন্যই রান্না জানা সমান জরুরি। শুরুতেই কঠিন রান্না শেখানোর প্রয়োজন নেই। তার স্কুলের টিফিনের জন্য স্যান্ডুইচ, নুডলস কিংবা সালাদ কিভাবে তৈরি করতে হয় তা শেখান। এরপর ধীরে ধীরে চলনসই রান্নাও শিখিয়ে ফেলুন। চুলা এবং মাইক্রোওয়েভ কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তাও শিখিয়ে দিন। এভাবে সে প্রয়োজনীয় রান্না শিখে ফেলবে।

২. নিজের যত্ন নেওয়া

শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই নিজের যত্ন নিতে পারে না। এক্ষেত্রে তাকে আপনাদের সাহায্য করতে হবে। যখন কিছুটা বড় হবে তখন নিজে নিজে গোসল করা, দাঁত ব্রাশ করা, হাত ধোওয়া, জুতা পরা, পোশাক পরিবর্তন করার মতো অভ্যাস করাবেন। সেইসঙ্গে তাকে এর প্রয়োজনীয়তাও বুঝিয়ে বলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন। বাড়িতে একটি চার্ট সেট করুন যাতে তারা প্রতিদিন সম্পূর্ণ করা প্রতিটি কাজকে টিক দিতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা এই রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

৩. অর্থ ব্যবস্থাপনা

বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিও অর্থ ব্যবস্থাপনায় দক্ষ নন। যা নানা অসুবিধার কারণ হতে পারে। আপনার সন্তানকে তাই ছোটবেলা থেকেই  অর্থ সম্পর্কে শেখানোর চেষ্টা করুন। সন্তানের জন্য অঢেল সম্পদ না রেখে বরং তাকে অর্থ ব্যবস্থাপনা শেখানো বেশি জরুরি। কীভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে হয়, কীভাবে অতিরিক্ত খরচ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হয় তা তাকে শেখান। সঠিক খাতে খরচ করা একটি বড় গুণ। এটি শিশুকে শেখাতে হবে।

৪. সাহায্য চাওয়া

আপনার সন্তানকে প্রয়োজনের সময় সাহায্য চাওয়া শেখাতে হবে। এমন অনেককিছুই থাকতে পারে যা আমার ঠিক বুঝতে পারি না। তখন অন্য কারও সাহায্য নিয়ে সেটি বোঝার বা জানার চেষ্টা করা দোষের কিছু নয়। এতে মানুষ ছোটও হয়ে যায় না। এগুলো তাকে বোঝান। কোনোকিছু সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা থাকলে বা বুঝতে না পারলে অনুমান না করে কাছাকাছি কারও সাহায্য নিতে বলুন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লাইফ স্কিল যা অনেকের মধ্যেই অনুপস্থিত।

৫. ঘর গোছানো

ঘর গোছানো কেবল নারীর কাজ নয়। তাই আপনার সন্তান ছেলে হোক কিংবা মেয়ে, তাকে ঘর গোছানো শেখান। শিশুর কাছ থেকে নিখুঁতভাবে গোছানো আশা করবেন না। তবে তার ছোট্ট হাতেই যতটুকু সম্ভব গুছিয়ে রাখতে শেখান। কীভাবে বিছানা তৈরি করতে হয়, ময়লা কোথায় ফেলতে হয়, রান্নাঘর কীভাবে পরিষ্কার করতে হয় তা শেখানো গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো তার পুরো জীবনের জন্যই জরুরি।

৬. লন্ড্রি

শিশুরা শুরুতেই এই কাজে আগ্রহী নাও হতে পারে। কিন্তু তাকে বোঝাতে হবে কোনো কাজই ছোট নয়। আবার নিজের কোনো কাজের জন্য সব সময় অন্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়াও উচিত নয়। তাই তাকে নিজের কাপড় ধোওয়া, তোয়ালে ভাঁজ করা, ময়লা কাপড় আলাদা রাখা, ধোওয়া কাপড় ভাঁজ করে রাখা শেখাতে হবে। এভাবে অভ্যাস করলে তার পরবর্তী জীবন আরও সহজ হবে।

৭. ফরম পূরণ

এটি এমন একটি জিনিস যা আপনার সন্তানের সারাজীবন করতে থাকবে। আপনার তত্ত্বাবধান ছাড়াই তাকে সঠিকভাবে ফর্ম পূরণ করতে শেখান। তার কাছে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিন, এটি তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার জন্য প্রস্তুত করার একটি উপায়। এই অভ্যাস সন্তানকে কেবল স্বাধীনই করে না বরং তার আত্মবিশ্বাসের স্তরকেও বাড়িয়ে তোলে।