০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসপাতালে যাচ্ছেন না খালেদা, ফিরোজায় চিকিৎসা চলবে

মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে আপাতত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা গুলশানের ভাড়াবাসা ফিরোজায় চলবে। যদি প্রয়োজন হয়, যেকোনো সময় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। বুধবার গভীর রাতে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজার গেটে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, দুপুরের পর থেকে ম্যাডাম খালেদা জিয়া অসুস্থতাবোধ করছিলেন। এ কারণে ইফতারের পর অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার নেতৃত্বাধীন মেডিকেল বোর্ড, সঙ্গে ভার্চুয়ারি লন্ডন থেকে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত নেন তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। এ জন্য আপাতত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বাসাতে থাকবেন। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে।

জাহিদ আরও জানান, সন্ধ্যার চেয়ে এখন অনেকটাই সুস্থতাবোধ করছেন খালেদা জিয়া। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

এর আগে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে নেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছিল বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। তার অসুস্থতার খবর পেয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা তাবিথ আউয়াল, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্নাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ফিরোজায় ছুটে যান।

এর আগে গত ১৩ মার্চ খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ফুসফুসের পানি অপসারণের পর এক্সরে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফিসহ কিছু পরীক্ষা করানো হয়। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে পরদিন মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে বাসায় ফেরেন।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে ৬ মার্চও তার পরিবারের পক্ষ থেকে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশসহ (খালেদা জিয়াকে দ্রুত বিদেশে পাঠানো জরুরি) সেই আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা নাকচ করে দেয় সরকার। বরং আগের মতো দুই শর্তে (বিদেশে যেতে পারবেন না ও ঢাকায় থেকে চিকিৎসা) বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে সরকার। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর এ বিষয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২৫ মার্চ থেকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত থাকবে।

গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালীতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে তার রক্তনালীতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।

খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভার সিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। কারাগার থেকে বেরোনোর পর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে নেওয়া হয়। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়। তখন থেকে ছয় মাস পর পর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।

সূত্র: যুগান্তর

হাসপাতালে যাচ্ছেন না খালেদা, ফিরোজায় চিকিৎসা চলবে

প্রকাশিত: ০২:০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে আপাতত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা গুলশানের ভাড়াবাসা ফিরোজায় চলবে। যদি প্রয়োজন হয়, যেকোনো সময় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। বুধবার গভীর রাতে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজার গেটে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, দুপুরের পর থেকে ম্যাডাম খালেদা জিয়া অসুস্থতাবোধ করছিলেন। এ কারণে ইফতারের পর অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার নেতৃত্বাধীন মেডিকেল বোর্ড, সঙ্গে ভার্চুয়ারি লন্ডন থেকে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত নেন তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। এ জন্য আপাতত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বাসাতে থাকবেন। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে।

জাহিদ আরও জানান, সন্ধ্যার চেয়ে এখন অনেকটাই সুস্থতাবোধ করছেন খালেদা জিয়া। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

এর আগে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে নেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছিল বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। তার অসুস্থতার খবর পেয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা তাবিথ আউয়াল, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্নাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ফিরোজায় ছুটে যান।

এর আগে গত ১৩ মার্চ খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ফুসফুসের পানি অপসারণের পর এক্সরে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফিসহ কিছু পরীক্ষা করানো হয়। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে পরদিন মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে বাসায় ফেরেন।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে ৬ মার্চও তার পরিবারের পক্ষ থেকে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশসহ (খালেদা জিয়াকে দ্রুত বিদেশে পাঠানো জরুরি) সেই আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা নাকচ করে দেয় সরকার। বরং আগের মতো দুই শর্তে (বিদেশে যেতে পারবেন না ও ঢাকায় থেকে চিকিৎসা) বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে সরকার। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর এ বিষয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২৫ মার্চ থেকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত থাকবে।

গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালীতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে তার রক্তনালীতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।

খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভার সিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। কারাগার থেকে বেরোনোর পর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে নেওয়া হয়। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়। তখন থেকে ছয় মাস পর পর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।

সূত্র: যুগান্তর