০৫:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোটা আন্দোলন: সংঘর্ষে প্রাণ গেল ৫ জনের, বিজিবি মোতায়েন

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবির আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশ। আন্দোলন করতে গিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এবং পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কয়েকশ।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন প্রাণ হারান। রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মারা গেছেন। আর ঢাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে মারা গেছেন একজন হকার।

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত ৩

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা সোয়া তিনটার দিকে নগরীর মুরাদপুরে এই ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন তিনজনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

নিহত দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম এবং ওয়ার্কশপ কর্মচারী ফারুক। ওয়াসিমের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় আর ফারুকের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। বাকি একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আরও সাতজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

রংপুরে বেরবি শিক্ষার্থী নিহত

রংপুরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আবু সাঈদ নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারীসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ ব্যাচের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের জাফর পাড়ায়।

ঢাকায় সংঘর্ষে হকার নিহত

কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলনে ঢাকায় প্রাণ গেছে একজন হকারের। তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। স্থানীয়রা জানান, নিহত ওই ব্যক্তি পেশায় একজন হকার। তার আনুমানিক বয়স ২৫ বছর।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা এক যুবক আহত হন৷ গুরুতর আহত অবস্থায় ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন এক পথচারী। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পাঁচ জেলায় বিজিবি মোতায়েন

এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) সহিংস রূপ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে তিন শতাধিক আহত হন।

আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সারাদেশে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর অংশ হিসেবে আজ সকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে।

কোটা আন্দোলন: সংঘর্ষে প্রাণ গেল ৫ জনের, বিজিবি মোতায়েন

প্রকাশিত: ০৭:২৬:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবির আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশ। আন্দোলন করতে গিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এবং পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কয়েকশ।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন প্রাণ হারান। রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মারা গেছেন। আর ঢাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে মারা গেছেন একজন হকার।

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত ৩

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা সোয়া তিনটার দিকে নগরীর মুরাদপুরে এই ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন তিনজনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

নিহত দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম এবং ওয়ার্কশপ কর্মচারী ফারুক। ওয়াসিমের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় আর ফারুকের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। বাকি একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আরও সাতজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

রংপুরে বেরবি শিক্ষার্থী নিহত

রংপুরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আবু সাঈদ নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারীসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ ব্যাচের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের জাফর পাড়ায়।

ঢাকায় সংঘর্ষে হকার নিহত

কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলনে ঢাকায় প্রাণ গেছে একজন হকারের। তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। স্থানীয়রা জানান, নিহত ওই ব্যক্তি পেশায় একজন হকার। তার আনুমানিক বয়স ২৫ বছর।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা এক যুবক আহত হন৷ গুরুতর আহত অবস্থায় ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন এক পথচারী। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পাঁচ জেলায় বিজিবি মোতায়েন

এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) সহিংস রূপ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে তিন শতাধিক আহত হন।

আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সারাদেশে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর অংশ হিসেবে আজ সকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে।