সুদের হার নির্ধারণ করার নতুন পদ্ধতি চালু করার পর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ঋণের সুদহার ধীরে ধীরে বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে স্মার্ট পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ঋণ ও আমানতের সুদের হার নির্ধারণ করা হয়, তা সবশেষ সামান্য বেড়েছে। ফলে এই হারের ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুদের নতুন হার নির্ধারণ করতে পারবে।
যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, সেটি পরিচিত স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাইয়ে স্মার্ট রেট ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে যা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
ফলে চলতি মাসে ব্যাংক ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার বেড়ে হতে পারে ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ। জুলাইয়ে এই হার ছিল ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। অন্যদিকে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণের সুদহার বেড়ে হতে পারবে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ।
অবশ্য একবার সুদহার কার্যকর করা হলে পরবর্তী ছয় মাসে তা আর পরিবর্তন করা যায় না। এ জন্য এখনই সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার পরিবর্তন করছে না বলে জানা যায়।
ব্যাংকের সুদহার নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, সুদের হারে পরিবর্তন করা হলে ঋণের কিস্তিতেও কিছুটা পরিবর্তন হবে, যাকে হয়তো ভালোভাবে নেবেন না গ্রাহকেরা।
ব্যাংকগুলো আমানত ও ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয় সম্পদ-দায় ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে। কত সুদে আমানত সংগ্রহ করা হচ্ছে, এর ওপর নির্ভর করে ঋণের সুদহার। জুলাইয়ে স্মার্ট সুদহার চালু হওয়ার পর অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ ও আমানতে সুদের হার বেড়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তারল্যসংকট রয়েছে এবং এ কারণে ব্যাংকগুলো এখন ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদে ৬ মাস থেকে ১ বছর মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করছে। তবে সব আমানতে এই হারে সুদ দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। ফলে আমানত ও ঋণের গড় সুদহারের ব্যবধান এখনো ৩ শতাংশের বেশি।
দুটি ব্যাংকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বেশির ভাগ ব্যাংক ছোট ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হারে প্রতি মাসে পরিবর্তন আনছে না। কারণ, তাদের মতে, এতে ব্যাংক সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। আবার তারল্যসংকটের কারণে সামনে সুদহার আরও বাড়তে পারে। তবে বড় ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার পরিবর্তন হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর সুদ আয় বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। অন্যদিকে ৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ করতে পারে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে সেপ্টেম্বরে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।
এখন ব্যাংকগুলো থেকে চলতি সেপ্টেম্বরে যাঁরা ঋণ নেবেন, তাঁদের কাছ থেকে ব্যাংক সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ সুদ নিতে পারবে।