রাতে বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। অসুস্থ অবস্থায় ঘরে শুয়েছিলেন গৃহিণী দোলেনা বেগম। বাড়িতে কেউ ছিলেন না। স্বামী আবদুর রাজ্জাক ও ছেলে তানিম হোসেন বাজারে নিজেদের মুদিদোকানে ছিলেন। ঘর থেকে আঙিনায় কারও পায়ের শব্দ পান দোলেনা। পরনে কালো পোশাক ও মুখোশধারী চারজন দুর্বৃত্ত ঘরে ঢোকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দোলেনা বেগমের মুখ চেপে ধরে মুখে কাপড় গুঁজে দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর ঘরে থাকা ওড়না দিয়ে শক্ত করে তাঁর হাত-মুখ-পা বাঁধে। গলায় চাকু ধরে জানতে চায়, টাকা কোথায় রেখেছেন। এরপর ঘরের ওয়ার্ডরোবে থাকা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ঘটনাটি ঘটে গতকাল সোমবার রাত সোয়া আটটার দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লালমাটি শ্যামপুর মহল্লায়। বাড়ির মালিক আবদুর রাজ্জাক ঘোড়াঘাট পৌর শহরের ওসমানপুর বাজারের একজন মুদিদোকানি। তাঁর স্ত্রী দোলেনা বেগম গৃহিণী। তিনি বেশ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ। এর মধ্যেই ঘটে এ ডাকাতির ঘটনা।
আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকায় একটি জমি কেনার জন্য স্থানীয় তিনটি এনজিও থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। এ ছাড়া বাড়ির দুটি গরু বিক্রি, ব্যবসার নগদ টাকাসহ মোট ১৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করে রেখেছিলাম। বুধবার জমিটির বায়না দলিল হওয়ার কথা ছিল। সোমবার রাতে আমার এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আমি এখন এনজিওর ঋণগুলো কীভাবে শোধ করব?’
গৃহিণী দোলেনা বেগম বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে পেটের ব্যথায় আমি অসুস্থ। সোমবার রাতে ঘরে একা শুয়ে ছিলাম। আমার স্বামী ও ছেলে দোকানে কাজে গিয়েছিল। এশার আজানের সময় বাড়িতে কালো পোশাক পরা ও চোখমুখ কালো কাপড়ে ঢাকা চারজন আমার ঘরে ঢোকেন। চিৎকার দেব, এমন সময় একজন আমার মুখ চেপে ধরেন। আরেকজন মুখে কাপড় গুঁজে দেন। পরে আরেকজন ওড়না দিয়ে আমার হাত-মুখ ও পা বেঁধে ফেলেন। একজন পকেট থেকে একটি চাকু বের করে আমার গলায় ধরেন এবং বলেন, “বল টাকা কোথায় আছে, না বললে সব ভেঙে ফেলব।” গলা কেটে ফেলার ভয় দেখিয়ে ওয়ার্ডরোবের চাবি চান। জীবনের ভয়ে আমি চাবি দিয়ে দিই। তাঁরা ওয়ার্ডরোবের ড্রয়ার খুলে জমি কেনার জন্য রাখা ১৫ লাখ টাকা নিয়ে চলে যান। আধঘণ্টা পর আমার স্বামীর মুঠোফোন থেকে কল পেয়ে প্রতিবেশীরা আমাকে এসে উদ্ধার করেন।’
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে হাকিমপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলামসহ তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কিছু সন্দেহভাজন আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোরে বাড়ির মালিক আবদুর রাজ্জাক থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশের তদন্ত চলছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একটি দল কাজ করছে।