দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি। মূলত নদী ও হাওরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামছে ধীরে। এছাড়া প্রতিদিনই সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও কমে আসবে। জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য বলছে জেলার ১৩টি উপজেলার ১ হাজার ১৬০ গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। জেলায় পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা ৬ লাখ ১৭ হাজার ৭৯৩ জন।
এদিকে জেলার সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর সব কটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক। জকিগঞ্জের ইউএনও আফসানা তাসলিম জানিয়েছেন, উপজেলার ৩/৪টি ডাইকের ওপর দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। ফলে নতুন করে বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
তিনি জানান, তাঁর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৮৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে লাখের ওপর মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমার একাংশ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্যা বিস্তৃত হয়েছে। বাড়ছে বানবাসী মানুষের সংখ্যা। এতে পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
সর্বশেষ খবর বাঙালনিউজ এর গুগল নিউজ চ্যানেল
অপরদিকে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা আজ সকাল পর্যন্ত জলমগ্ন অবস্থায় ছিল। বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেক বাসিন্দা আশ্রয়কেন্দ্র অবস্থান করছেন। এদিকে বন্যার পানিতে প্লাবিত এলাকা পরিবর্তিত হলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। বরং মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি আরো বেড়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জে বন্যার পানি নামছে। ওসমানী নগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। গত বুধবার রাত পর্যন্ত ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৮ হাজার ৯৫১ জন মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং শেরপুর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারি পরিচালক শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ১৮.৪ মিলিমিটার। তবে আগামীকাল থেকে বৃষ্টিপাত কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, জেলার বড় দুই নদীর (সুরমা-কুশিয়ারা) পানি ৬টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের উপজেলাগুলো থেকে ঢলের পানি নামতে থাকায় ভাটির উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি আবার কোথাও অবনতি হচ্ছে। তবে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।