ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরসে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২২ জনে দাঁড়িয়েছে। স্বঘোষিত ধর্ম প্রচারক ‘ভোলে বাবা’র ‘সৎসঙ্গ’-এ ওই ঘটনা ঘটে। স্বঘোষিত বাবাজির আসল নাম সুরজ পাল সিং।
একসময় পুলিশে কর্মরত এই ব্যক্তি সময়ের আগেই অবসর নিয়ে স্বঘোষিত গুরুতে পরিণত হন। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে তার ভক্ত আছে বলে পুলিশের সূত্র জানিয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের নাগরি গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্ম এই ব্য়ক্তির। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ইন্টেলিজেন্স বিভাগে হেড কনস্টেবল হিসেবে ১৮ বছর কাজ করেছেন তিনি। এরপর তিনি কাজ ছেড়ে দেন। ভক্তদের একথা একাধিকবার বলেছেন সুরজ পাল নিজেই।
তিনি জানিয়েছেন, কাজ করতে করতেই আধ্য়াত্মিক জীবনে ঢুকে পড়েন তিনি। এবং সে কারণেই পুলিশের চাকরি ছেড়ে দেন। বস্তুত, ভক্তদের তিনি বলেন, হরি অর্থাৎ, ঈশ্বরের সন্তান তিনি।
পুলিশের চাকরি ছাড়ার পর সুরজ নিজের নামও বদলে ফেলেন। নতুন নাম নারায়ণ সাকার হরি। এই নামেই এখন তিনি পরিচিত। ভক্তরা তাকে এই নামে অথবা ভোলে বাবা বলে সম্বোধন করেন।
ভারতে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার বাবাজির থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলাদা এই এই ব্য়ক্তি। অন্য়দের মতো তিনি গেরুয়া কাপড় পরেন না। সাদা স্য়ুট এবং টাই পরে ভক্তদের সামনে আসতে দেখা যায় তাকে। কখনো কখনো পরেন সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা। তার সঙ্গে থাকেন স্ত্রী প্রেমবতী।
ভক্তদের তিনি বলেন, সৎসঙ্গ সভায় যে ডোনেশন তাকে দেওয়া হয়, সে অর্থ তিনি নিজের কাজে ব্য়বহার করেন না। ভক্তদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। যদিও এই স্বঘোষিত বাবাজি বিরাট আশ্রম তৈরি করেছেন বলে ভক্তরাই জানিয়েছেন।
ভক্তদের অবশ্য বাবাজি বলেন, তিনি এখনো মাটির ঘরে থাকেন। পায়ে হেঁটে গোটা উত্তরপ্রদেশ ঘুরে প্রচার করেন তিনি।
গণমাধ্য়মের সামনে খুব বেশি আসতে দেখা যায় না এই বাবাজিকে। তবে ২০২২ সালে কোভিডের সময় বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন এই ব্য়ক্তি। উত্তরপ্রদেশের ফারুকাবাদে একটি সৎসঙ্গ সভা করতে চেয়েছিলেন তিনি। তখন কোভিডের ভরা সময়।
জেলা প্রশাসন অনুষ্ঠানের অনুমতি দিলেও ৫০ জনের বেশি ভক্ত সেখানে আসতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানে ৫০ হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। কেন সে সময় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্য়বস্থা নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্ন উঠছে।
হাথরাসের অনুষ্ঠানে যে এত মানুষ আসবেন, তা প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল কি না, সে প্রশ্নও উঠছে।
তার ভক্তরা জানিয়েছেন, এই স্বঘোষিত বাবাজি নিজের একটি নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি করেছিলেন, যার নাম দেওয়া হয়েছিল নারায়ণী সেনা। হাথরাসের ঘটনার পর ওই নারায়ণী সেনাকে সঙ্গে নিয়েই তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট