০৪:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যুক্তরাজ্যে নির্বাচন

অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশি প্রশ্নে যা বলছে লেবার পার্টি

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার অবৈধ অভিবাসী প্রসঙ্গে বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদাহরণ দিয়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে গত সোমবার ডেইলি সান আয়োজিত বিতর্ক অনুষ্ঠানে ওই উদাহরণ দেন তিনি। এতে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ক্ষোভের মুখে লেবার পার্টি ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছে।

অবৈধ অভিবাসী বিষয়ে বর্তমান সরকারের নীতি ‘রুয়ান্ডা পলিসিকে’ ব্যয়বহুল উল্লেখ করে ক্ষমতায় গেলে এই নীতি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন স্টারমার। বিতর্ক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডা না পাঠিয়ে তাঁদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেবে লেবার পার্টি। এ ক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, যেমন অবৈধ বাংলাদেশিদের তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

স্টারমারের এমন বক্তব্যে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসনের লেবার পার্টি মনোনীত প্রার্থী রুশনারা আলীর প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা স্টারমারের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি প্রচার করছেন। লেবার পার্টি বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে, তাই লেবার পার্টিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী রুশনারা আলী বলেছেন, ‘লেবার পার্টির নেতার একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশের পর আমি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। আমি আমাদের কমিউনিটির এই উদ্বেগেরে বিষয়ে দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করছি।’

এদিকে স্টারমারের এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে লেবার পার্টির টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার ডেপুটি লিডার ও কাউন্সিলর সাবিনা ইয়াসমিন লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন।

সাবেক এমপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা জর্জ গ্যালওয়ে লেবার পার্টির নেতা স্টারমারের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্টারমার বাংলাদেশিদের সম্পর্কে মন্তব্য করে নিজেই রাজনৈতিকভাবে আত্মহত্যা করেছেন। বাংলাদেশিদের সঙ্গে যা করা হয়েছে, তারপর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তি স্টারমারের দলকে ভোট দিতে পারে না।

লেবার পার্টির ব্যাখ্যা
বাংলাদেশি কমিউনিটির ক্ষোভের মুখে স্টারমারের মন্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছে লেবার পার্টি। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের বিশাল অবদানের জন্য স্টারমার গর্বিত এবং তিনি যুক্তরাজ্যজুড়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপটি এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে, যেন স্টারমার ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনের কথা বলছেন।

লেবার পার্টির ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, স্টারমার লেবার পার্টির দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত নীতির কথা উল্লেখ করছেন। সেটি হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে যাঁদের থাকার আইনগত অধিকার নেই, তাঁদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশকে শুধু উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এ–সংক্রান্ত একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত যে বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হয়েছে, যাঁরা অপরাধী ও যাঁদের ভিসার বৈধ মেয়াদ অতিবাহিত হয়েছে, তাঁদের ‘ফাস্ট- ট্র্যাক’ (দ্রুত) পদ্ধতিতে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে যুক্তরাজ্য। অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাজ্য থেকে বের করে দেওয়ার জন্য শক্ত প্রমাণ রয়েছে—এমন ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সাক্ষাৎকার ছাড়াই তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করবে চুক্তিটি।

সূত্র: প্রথম আলো

যুক্তরাজ্যে নির্বাচন

অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশি প্রশ্নে যা বলছে লেবার পার্টি

প্রকাশিত: ০৫:৪১:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার অবৈধ অভিবাসী প্রসঙ্গে বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদাহরণ দিয়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে গত সোমবার ডেইলি সান আয়োজিত বিতর্ক অনুষ্ঠানে ওই উদাহরণ দেন তিনি। এতে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ক্ষোভের মুখে লেবার পার্টি ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছে।

অবৈধ অভিবাসী বিষয়ে বর্তমান সরকারের নীতি ‘রুয়ান্ডা পলিসিকে’ ব্যয়বহুল উল্লেখ করে ক্ষমতায় গেলে এই নীতি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন স্টারমার। বিতর্ক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডা না পাঠিয়ে তাঁদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেবে লেবার পার্টি। এ ক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, যেমন অবৈধ বাংলাদেশিদের তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

স্টারমারের এমন বক্তব্যে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসনের লেবার পার্টি মনোনীত প্রার্থী রুশনারা আলীর প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা স্টারমারের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি প্রচার করছেন। লেবার পার্টি বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে, তাই লেবার পার্টিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী রুশনারা আলী বলেছেন, ‘লেবার পার্টির নেতার একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশের পর আমি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। আমি আমাদের কমিউনিটির এই উদ্বেগেরে বিষয়ে দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করছি।’

এদিকে স্টারমারের এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে লেবার পার্টির টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার ডেপুটি লিডার ও কাউন্সিলর সাবিনা ইয়াসমিন লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন।

সাবেক এমপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা জর্জ গ্যালওয়ে লেবার পার্টির নেতা স্টারমারের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্টারমার বাংলাদেশিদের সম্পর্কে মন্তব্য করে নিজেই রাজনৈতিকভাবে আত্মহত্যা করেছেন। বাংলাদেশিদের সঙ্গে যা করা হয়েছে, তারপর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তি স্টারমারের দলকে ভোট দিতে পারে না।

লেবার পার্টির ব্যাখ্যা
বাংলাদেশি কমিউনিটির ক্ষোভের মুখে স্টারমারের মন্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছে লেবার পার্টি। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের বিশাল অবদানের জন্য স্টারমার গর্বিত এবং তিনি যুক্তরাজ্যজুড়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপটি এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে, যেন স্টারমার ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনের কথা বলছেন।

লেবার পার্টির ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, স্টারমার লেবার পার্টির দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত নীতির কথা উল্লেখ করছেন। সেটি হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে যাঁদের থাকার আইনগত অধিকার নেই, তাঁদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশকে শুধু উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এ–সংক্রান্ত একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত যে বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হয়েছে, যাঁরা অপরাধী ও যাঁদের ভিসার বৈধ মেয়াদ অতিবাহিত হয়েছে, তাঁদের ‘ফাস্ট- ট্র্যাক’ (দ্রুত) পদ্ধতিতে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে যুক্তরাজ্য। অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাজ্য থেকে বের করে দেওয়ার জন্য শক্ত প্রমাণ রয়েছে—এমন ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সাক্ষাৎকার ছাড়াই তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করবে চুক্তিটি।

সূত্র: প্রথম আলো