০২:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের জালে ফিলিস্তিনের গোলবন্যা

ম্যাচের প্রথমার্ধের বেশিরভাগ সময় আশা দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এই অর্ধের শেষ সময়ে সব এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের। মিনিট কয়েকের ব্যবধানে একের পর এক গোল হজম করে বড় ব্যবধানে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে।

বৃহস্পতিবার রাতে কুয়েতের জাবের আল-আহমাদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ যে ম্যাচে এভাবে একের পর এক গোল হজম করবে, শুরুতে খেলা দেখে একটিবারের জন্যও বোঝা যায়নি। লাল-সবুজদের শুরুটা ছিল ইতিবাচক। যদিও শেষ হয়েছে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ৫-০ গোলে হার দিয়ে।

র‍্যাঙ্কিংয়ে ৮৬ ধাপ এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিনের বিপক্ষে একটা পয়েন্ট পেতে হলে অসাধারণ কিছু করে দেখাতে হতো বাংলাদেশের রক্ষণকে। মঞ্চ ছিল প্রস্তুত, শুরুতে সব ঠিকঠাকও ছিল। কিন্তু সব তালগোল পাকিয়ে গেল প্রথমার্ধের শেষ দিকে এসে। এলোমেলো রক্ষণের ভুলে দশ মিনিটের ঝড়ে উড়ে গেলেন জামালরা। ২০২৬ বিশ্বকাপ ও ২০২৭ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ফিলিস্তিনের কাছে ৫-০ গোলে হারল বাংলাদেশ। ষষ্ঠবারের দেখায় বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয় যুদ্ধ বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের।

বাংলাদেশকে উড়িয়ে বাছাইপর্বের ‘আই’ গ্রুপে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে উঠে এলো ফিলিস্তিন। তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট দলটির। সমান ম্যাচে ১ পয়েন্টে সবার নিচে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে ৯ পয়েন্টে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। ২ পয়েন্টে তিনে লেবানন।

ফিলিস্তিন আক্রমণ করে গেছে, সেই আক্রমণ ঠেকিয়ে পাল্টা আক্রমণেও উঠেছেন রাকিব হোসেন-ফয়সাল আহমেদ ফাহিমরা।

আক্রমণ ঠেকিয়ে ম্যাচের ৭ মিনিটে ডান প্রান্ত ধরে ফিলিস্তিনিদের বক্সে ঢুকে পড়েন রাকিব। কাটব্যাক করেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে। কিন্তু ফাহিম একটু বেশিই ছিলেন যার কারণে আর বলের নাগাল পাননি।

দুই মিনিট পর ফিলিস্তিনের প্রথম সুযোগ। ফ্রি-কিক থেকে রাইটব্যাক থেকে সেন্টারব্যাক বনে যাওয়া বিশ্বনাথ ঘোষ বল বিপদমুক্ত করতে না পারায় বক্সের মুখে বল পেয়ে যান ফিলিস্তিনের ওদেহ দাবাঘ। তবে তার ভলি লক্ষ্যে না থাকায় সে যাত্রায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ।

১৪ মিনিটে আরেকবার ফিলিস্তিনের রক্ষণকে পরীক্ষায় ফেলতে চাইলেন রাকিব। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে বক্সের ডান প্রান্ত ধরে শটও করলেন, তবে খুঁজে পেলেন না জাল।

পাল্টা আক্রমণে জবাব এলো ফিলিস্তিনের দিক থেকেও। ১৯ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বলে বাংলাদেশ গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে একা পেয়ে যান ইসলাম বাতরান। মিতুল এগিয়ে আসছেন দেখে তার মাথার ওপর দিয়ে চিপ করেন তিনি, কিন্তু এবারও শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় রক্ষা বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের সেরা সুযোগটা নষ্ট করেছেন সোহেল রানা। ২৭ মিনিটে ফাহিমের ক্রস ধরে ফিলিস্তিনের গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল পোস্টের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠান সোহেল। গোল পেলে খেলার চিত্রটা অন্যরকমও হতে পারত। তাই সুযোগ নষ্ট করে নিজের মাথাতেই হাত পড়েছে এই মিডফিল্ডারের।

ফিলিস্তিনও সুযোগ হারিয়েছে ৩২ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বলে মিতুল মারমাকে একা পেয়ে শট নেন ওদেহ দাবাঘ। জোরালো সেই শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে আবারও বাংলাদেশকে রক্ষা করেন মিতুল।

কিন্তু ৪৩ মিনিটে আর ফিলিস্তিনকে ঠেকাতে পারেননি মিতুল। প্রথম গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ। দায়টা অবশ্য রক্ষণের। মুসাব বাত্তাতের ক্রস ধরে দাবাঘের পা ছুঁয়ে বল পান মাহমুদ আবুওয়ার্দা। তার শট ফেরান মিতুল। ফিরতি বলে আলতো ছোঁয়ায় বল জালে জড়িয়ে দেন দাবাঘ।

গোল হজম করে এলোমেলো বাংলাদেশের রক্ষণ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে কর্নার থেকে গোল হজম করে বসল হাভিয়ের কাবরেরার দল। আবুওয়ার্দার নেওয়া কর্নার থেকে অরক্ষিত থাকা শিহাব কুম্বোর গোলে প্রথমার্ধেই দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে যায় ফিলিস্তিন।

প্রথমার্ধে যেখানে শেষ করেছিল ফিলিস্তিন, দ্বিতীয়ার্ধের শুরু সেখান থেকেই। অর্থাৎ, আবারও গোল হজম বাংলাদেশের। ৪৯ মিনিটে মুসাব বাত্তাতের ক্রস থেকে বল রিসিভ করলেন শিহাব কুম্বোর, শট নিয়ে বল জড়িয়ে দিলেন জালে। দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না বাংলাদেশের রক্ষণের।

তিন মিনিট বাদে চতুর্থ গোল হজম করল বাংলাদেশ। ৫২ মিনিটে বদলি ফরোয়ার্ড মাহমুদ ধাধার ক্রস থেকে আরাম আয়েস করেই বল আয়ত্ত্বে নেন ওদেহ দাবাঘ। নিলেন জোরালো এক শট। সেই শট ঠেকানোর সাধ্য ছিল না মিতুল মারমার।

দাবাঘ হ্যাট্রিক পূর্ণ করলেন ৭৭ মিনিটে গিয়ে। মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বল ধরে মিতুলকে একা পেয়ে শট নিলেন ফিলিস্তিনি ফরোয়ার্ড। এক ইসা ফয়সাল ছাড়া বাংলাদেশি ডিফেন্ডারদের আর কেউ ছিলেন না আশপাশে। মিতুল প্রথম দফায় শট ঠেকালেন, ফিরতি বলে আবারও শট নিলেন দাবাঘ। বল এবার মিতুলকে ফাঁকি দিয়ে পঞ্চমবারের মতো জালে। বড় হার নিয়ে দেশে ফিরে আরেকবার ফিলিস্তিনের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষা বাংলাদেশের। ফিরতি লেগে ২৬ মার্চ কিংস অ্যারেনায় আবারও মুখোমুখি হবে এ দুই দল।

বিষয়

বাংলাদেশের জালে ফিলিস্তিনের গোলবন্যা

প্রকাশিত: ০৩:০৮:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪

ম্যাচের প্রথমার্ধের বেশিরভাগ সময় আশা দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এই অর্ধের শেষ সময়ে সব এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের। মিনিট কয়েকের ব্যবধানে একের পর এক গোল হজম করে বড় ব্যবধানে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে।

বৃহস্পতিবার রাতে কুয়েতের জাবের আল-আহমাদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ যে ম্যাচে এভাবে একের পর এক গোল হজম করবে, শুরুতে খেলা দেখে একটিবারের জন্যও বোঝা যায়নি। লাল-সবুজদের শুরুটা ছিল ইতিবাচক। যদিও শেষ হয়েছে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ৫-০ গোলে হার দিয়ে।

র‍্যাঙ্কিংয়ে ৮৬ ধাপ এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিনের বিপক্ষে একটা পয়েন্ট পেতে হলে অসাধারণ কিছু করে দেখাতে হতো বাংলাদেশের রক্ষণকে। মঞ্চ ছিল প্রস্তুত, শুরুতে সব ঠিকঠাকও ছিল। কিন্তু সব তালগোল পাকিয়ে গেল প্রথমার্ধের শেষ দিকে এসে। এলোমেলো রক্ষণের ভুলে দশ মিনিটের ঝড়ে উড়ে গেলেন জামালরা। ২০২৬ বিশ্বকাপ ও ২০২৭ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ফিলিস্তিনের কাছে ৫-০ গোলে হারল বাংলাদেশ। ষষ্ঠবারের দেখায় বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয় যুদ্ধ বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের।

বাংলাদেশকে উড়িয়ে বাছাইপর্বের ‘আই’ গ্রুপে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে উঠে এলো ফিলিস্তিন। তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট দলটির। সমান ম্যাচে ১ পয়েন্টে সবার নিচে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে ৯ পয়েন্টে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। ২ পয়েন্টে তিনে লেবানন।

ফিলিস্তিন আক্রমণ করে গেছে, সেই আক্রমণ ঠেকিয়ে পাল্টা আক্রমণেও উঠেছেন রাকিব হোসেন-ফয়সাল আহমেদ ফাহিমরা।

আক্রমণ ঠেকিয়ে ম্যাচের ৭ মিনিটে ডান প্রান্ত ধরে ফিলিস্তিনিদের বক্সে ঢুকে পড়েন রাকিব। কাটব্যাক করেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে। কিন্তু ফাহিম একটু বেশিই ছিলেন যার কারণে আর বলের নাগাল পাননি।

দুই মিনিট পর ফিলিস্তিনের প্রথম সুযোগ। ফ্রি-কিক থেকে রাইটব্যাক থেকে সেন্টারব্যাক বনে যাওয়া বিশ্বনাথ ঘোষ বল বিপদমুক্ত করতে না পারায় বক্সের মুখে বল পেয়ে যান ফিলিস্তিনের ওদেহ দাবাঘ। তবে তার ভলি লক্ষ্যে না থাকায় সে যাত্রায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ।

১৪ মিনিটে আরেকবার ফিলিস্তিনের রক্ষণকে পরীক্ষায় ফেলতে চাইলেন রাকিব। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে বক্সের ডান প্রান্ত ধরে শটও করলেন, তবে খুঁজে পেলেন না জাল।

পাল্টা আক্রমণে জবাব এলো ফিলিস্তিনের দিক থেকেও। ১৯ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বলে বাংলাদেশ গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে একা পেয়ে যান ইসলাম বাতরান। মিতুল এগিয়ে আসছেন দেখে তার মাথার ওপর দিয়ে চিপ করেন তিনি, কিন্তু এবারও শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় রক্ষা বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের সেরা সুযোগটা নষ্ট করেছেন সোহেল রানা। ২৭ মিনিটে ফাহিমের ক্রস ধরে ফিলিস্তিনের গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল পোস্টের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠান সোহেল। গোল পেলে খেলার চিত্রটা অন্যরকমও হতে পারত। তাই সুযোগ নষ্ট করে নিজের মাথাতেই হাত পড়েছে এই মিডফিল্ডারের।

ফিলিস্তিনও সুযোগ হারিয়েছে ৩২ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বলে মিতুল মারমাকে একা পেয়ে শট নেন ওদেহ দাবাঘ। জোরালো সেই শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে আবারও বাংলাদেশকে রক্ষা করেন মিতুল।

কিন্তু ৪৩ মিনিটে আর ফিলিস্তিনকে ঠেকাতে পারেননি মিতুল। প্রথম গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ। দায়টা অবশ্য রক্ষণের। মুসাব বাত্তাতের ক্রস ধরে দাবাঘের পা ছুঁয়ে বল পান মাহমুদ আবুওয়ার্দা। তার শট ফেরান মিতুল। ফিরতি বলে আলতো ছোঁয়ায় বল জালে জড়িয়ে দেন দাবাঘ।

গোল হজম করে এলোমেলো বাংলাদেশের রক্ষণ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে কর্নার থেকে গোল হজম করে বসল হাভিয়ের কাবরেরার দল। আবুওয়ার্দার নেওয়া কর্নার থেকে অরক্ষিত থাকা শিহাব কুম্বোর গোলে প্রথমার্ধেই দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে যায় ফিলিস্তিন।

প্রথমার্ধে যেখানে শেষ করেছিল ফিলিস্তিন, দ্বিতীয়ার্ধের শুরু সেখান থেকেই। অর্থাৎ, আবারও গোল হজম বাংলাদেশের। ৪৯ মিনিটে মুসাব বাত্তাতের ক্রস থেকে বল রিসিভ করলেন শিহাব কুম্বোর, শট নিয়ে বল জড়িয়ে দিলেন জালে। দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না বাংলাদেশের রক্ষণের।

তিন মিনিট বাদে চতুর্থ গোল হজম করল বাংলাদেশ। ৫২ মিনিটে বদলি ফরোয়ার্ড মাহমুদ ধাধার ক্রস থেকে আরাম আয়েস করেই বল আয়ত্ত্বে নেন ওদেহ দাবাঘ। নিলেন জোরালো এক শট। সেই শট ঠেকানোর সাধ্য ছিল না মিতুল মারমার।

দাবাঘ হ্যাট্রিক পূর্ণ করলেন ৭৭ মিনিটে গিয়ে। মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বল ধরে মিতুলকে একা পেয়ে শট নিলেন ফিলিস্তিনি ফরোয়ার্ড। এক ইসা ফয়সাল ছাড়া বাংলাদেশি ডিফেন্ডারদের আর কেউ ছিলেন না আশপাশে। মিতুল প্রথম দফায় শট ঠেকালেন, ফিরতি বলে আবারও শট নিলেন দাবাঘ। বল এবার মিতুলকে ফাঁকি দিয়ে পঞ্চমবারের মতো জালে। বড় হার নিয়ে দেশে ফিরে আরেকবার ফিলিস্তিনের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষা বাংলাদেশের। ফিরতি লেগে ২৬ মার্চ কিংস অ্যারেনায় আবারও মুখোমুখি হবে এ দুই দল।