ভারত মহাসাগরে সোমালিয় জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর জিম্মি ২৩ বাংলাদেশিকে ফেরাতে মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টিকে কল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট (এমএইউ) সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় আগে অপহৃত দেশি জাহাজ ‘জাহান মনি’ ও মালয়েশিয়ার জাহাজ ‘আল-বেদো’তে কর্মরত বাংলাদেশি সব নাবিককে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের কথাও সংক্ষেপে জানান সচিব।
জিম্মি বাংলাদেশিদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ বাংলাদেশি নাবিক সুস্থ আছেন। তাদেরকেসহ জাহাজটি ফেরত আনাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্যে আমরা অবিচল।
জলদস্যুরা মুক্তিপণ চেয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে খুরশেদ আলম বলেন, গণমাধ্যমে মুক্তিপণ চাওয়ার খবর প্রকাশ হয়ে থাকলে তা কল্পিত। জলদস্যুরা আমাদের কাছে এখনও কোনো মুক্তিপণ চায়নি। মুক্তিপণের ব্যাপারে তারা কোনো যোগাযোগও করেনি।
এমএইউ সচিব জানান, জাহাজ চলাচলে নানা ঝুঁকির রুট থাকে। আমাদের এই জাহাজটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রুট দিয়ে যায়নি। তারপরও জলদস্যুরা অপেক্ষায় ছিল বা এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। জলদস্যুরা জাহাজটির দখল নিয়ে সোমালিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) ভোর নাগাদ সোমালিয়ার কাছাকাছি নোঙর করেছে। দস্যুরা আমাদের সঙ্গে এখনও কোনো যোগাযোগ করেনি। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা খবর রাখছি। জলদস্যুদের প্রায় ৬০ জন জাহাজে অবস্থান নিয়েছে এবং বাংলাদেশি ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন।
সচিব বলেন, এ বিষয়ে আমাদের আগের অভিজ্ঞতা আছে। ‘জাহান মনি’ নামের একটি জাহাজ ২০১০ সালে এমন ঘটনার মুখে পড়েছিল। ১০০ দিনের মাথায় সব নাবিকসহ জাহাজটি আমরা ফেরত আনতে পেরেছিলাম।
“এছাড়া মালয়েশিয়ান জাহাজ ‘আল-বেদো’ যখন জলদস্যুর কবলে পড়ে তখন তাতে সাতজন বাংলাদেশি, দুজন ইরানি, তিনজন ভারতীয়, দুজন পাকিস্তানি ও পাঁচজন শ্রীলঙ্কান নাবিক ছিল। কিন্তু মালয়েশিয়ার মালিক পক্ষ কোনো দায়িত্ব না নেওয়ায় জাহাজটি আটকে থাকে। আড়াই বছর পর সেটি ডুবে যায়, কিছু প্রাণহানিও ঘটে।”
তিনি বলেন, আমরা পুরো সময় জুড়েই কাজ করেছি এবং প্রায় তিন বছর চার মাস পর আমরা নেগোসিয়েশন করে কেনিয়ার সেনাবাহিনী দিয়ে বাংলাদেশি নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে আনি।
জিম্মি নাবিক ও জাহাজটি উদ্ধারে সরকারের তৎপরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টায় আছি। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাহাজের মালিকসহ সব পক্ষের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে।
সামুদ্রিক বিষয়ক ইউনিট সচিব বলেন, জলদস্যুদের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে আমরা এখনও কিছু জানি না। আমরা যদি জানতে পারি, তখন হয়তো কৌশলগতভাবেই গণমাধ্যমকে পুরোপুরি জানাতে পারব না। তবে যেভাবে ‘জাহান মনি’কে ফেরত আনা হয়েছে, যেভাবে ‘আল-বেদো’ থেকে নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফেরত আনা হয়েছে সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
“জাহান মনি জাহাজটি আনতে একশ’ দিন লেগেছে। আর মালয়েশিয়ান জাহাজ থেকে সাতজন ক্রু ফেরত আনতে লেগেছে তিন বছর চার মাস। কাজেই এক্ষেত্রে সময় একটা ব্যাপার।”