১০:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরুর চিকিৎসার কাজে কেনা গাড়ি ব্যবহার করেন কর্মকর্তারা

অসুস্থ গরু-ছাগলকে জরুরি চিকিৎসা দিতে গত বছরের শুরুর দিকে একসঙ্গে ৩৬০টি গাড়ি কেনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এতে ব্যয় হয় ১৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু অসুস্থ প্রাণীর চিকিৎসার জন্য গ্রামের পথে খুব একটা ছুটছে না গাড়ি। বরং কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কাজেই এসব গাড়ির ব্যবহার বেশি হচ্ছে।

গাড়ি নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ যাচ্ছেন মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে। কেউ বাসা–অফিস যাতায়াতে, কেউবা ঘুরতে গেলে এই গাড়ি ব্যবহার করছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রাণীর চিকিৎসার কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে কেনা গাড়ির অপব্যবহার ঠেকাতে জিপিএস ট্র্যাকার (গাড়ির অবস্থান শনাক্তের প্রযুক্তি) বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

ক্লিনিকগুলো (গাড়ি) নিয়ে দেশের খামারিদের পাশে দাঁড়ান। আর যেন কোনো গবাদিপশু–পাখি বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম

মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক বা এমভিসি (ভ্রাম্যমাণ প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিক) নামে পরিচিত এসব গাড়ি কেনা হয়েছে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়। প্রথম পর্যায়ে দেশের ৩৬০টি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গাড়ি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গাড়ি কিনতে গড়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫২ লাখ টাকা। গাড়ি কেনার এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা যাতে গাড়ি নিয়ে ঘুরে ঘুরে খামারিদের বাড়িতে বা খামারে গিয়ে অসুস্থ গরু-ছাগলকে চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন।

গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ৩৬০টি গাড়ি হস্তান্তর উপলক্ষে ঢাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, ‘ক্লিনিকগুলো (গাড়ি) নিয়ে দেশের খামারিদের পাশে দাঁড়ান। আর যেন কোনো গবাদিপশু–পাখি বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।’ গাড়ির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতেও সেদিন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন মন্ত্রী।

গাড়ির সঠিক ব্যবহার কতটা হচ্ছে, তা দেখতে গত ২০ জুলাই দুপুরে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক যান মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে। বেলা আড়াইটায় দপ্তরে ঢুকে জানা গেল, গাড়ি উপজেলায় নেই। উপস্থিত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম গাড়ি নিয়ে ঢাকায় গেছেন। এই তথ্য জানার পরই এই প্রতিবেদক তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রিং হলেও ফোন ধরেননি তিনি। পরে আরও দুবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা চলে। কিন্তু তিনি ফোন আর ধরেননি। পরে এই প্রতিবেদক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার গাড়িচালক ইকবাল হোসেনকে ফোন করেন। তিনি বলেন, ‘স্যারকে নিয়ে ঢাকায় এসেছি।’

টঙ্গিবাড়ী যাওয়ার আগে গত ২০ জুলাই সকালে প্রথমে এই প্রতিবেদক যান মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে জানা যায়, অসুস্থ গরু-ছাগলকে জরুরি চিকিৎসার জন্য দেওয়া গাড়িটি কার্যালয়ে নেই। অসুস্থ কোনো প্রাণীকে চিকিৎসা দিতেও কেউ গাড়ি নিয়ে কোথাও যাননি। পরে জানা যায়, গাড়ি আছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে একটি ব্যক্তিগত গ্যারেজে।

পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শবনম সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামের রাস্তা সরু থাকার কারণে চিকিৎসার কাজে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। নিরাপত্তার কারণে অফিসের ভেতরে গাড়ি রাখার অবস্থাও নেই। তাই মাসে দুই হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে গ্যারেজে রাখা হয়েছে।

বিষয়

গরুর চিকিৎসার কাজে কেনা গাড়ি ব্যবহার করেন কর্মকর্তারা

প্রকাশিত: ০২:৫১:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অসুস্থ গরু-ছাগলকে জরুরি চিকিৎসা দিতে গত বছরের শুরুর দিকে একসঙ্গে ৩৬০টি গাড়ি কেনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এতে ব্যয় হয় ১৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু অসুস্থ প্রাণীর চিকিৎসার জন্য গ্রামের পথে খুব একটা ছুটছে না গাড়ি। বরং কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কাজেই এসব গাড়ির ব্যবহার বেশি হচ্ছে।

গাড়ি নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ যাচ্ছেন মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে। কেউ বাসা–অফিস যাতায়াতে, কেউবা ঘুরতে গেলে এই গাড়ি ব্যবহার করছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রাণীর চিকিৎসার কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে কেনা গাড়ির অপব্যবহার ঠেকাতে জিপিএস ট্র্যাকার (গাড়ির অবস্থান শনাক্তের প্রযুক্তি) বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

ক্লিনিকগুলো (গাড়ি) নিয়ে দেশের খামারিদের পাশে দাঁড়ান। আর যেন কোনো গবাদিপশু–পাখি বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম

মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক বা এমভিসি (ভ্রাম্যমাণ প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিক) নামে পরিচিত এসব গাড়ি কেনা হয়েছে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়। প্রথম পর্যায়ে দেশের ৩৬০টি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গাড়ি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গাড়ি কিনতে গড়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫২ লাখ টাকা। গাড়ি কেনার এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা যাতে গাড়ি নিয়ে ঘুরে ঘুরে খামারিদের বাড়িতে বা খামারে গিয়ে অসুস্থ গরু-ছাগলকে চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন।

গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ৩৬০টি গাড়ি হস্তান্তর উপলক্ষে ঢাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, ‘ক্লিনিকগুলো (গাড়ি) নিয়ে দেশের খামারিদের পাশে দাঁড়ান। আর যেন কোনো গবাদিপশু–পাখি বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।’ গাড়ির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতেও সেদিন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন মন্ত্রী।

গাড়ির সঠিক ব্যবহার কতটা হচ্ছে, তা দেখতে গত ২০ জুলাই দুপুরে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক যান মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে। বেলা আড়াইটায় দপ্তরে ঢুকে জানা গেল, গাড়ি উপজেলায় নেই। উপস্থিত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম গাড়ি নিয়ে ঢাকায় গেছেন। এই তথ্য জানার পরই এই প্রতিবেদক তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রিং হলেও ফোন ধরেননি তিনি। পরে আরও দুবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা চলে। কিন্তু তিনি ফোন আর ধরেননি। পরে এই প্রতিবেদক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার গাড়িচালক ইকবাল হোসেনকে ফোন করেন। তিনি বলেন, ‘স্যারকে নিয়ে ঢাকায় এসেছি।’

টঙ্গিবাড়ী যাওয়ার আগে গত ২০ জুলাই সকালে প্রথমে এই প্রতিবেদক যান মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে জানা যায়, অসুস্থ গরু-ছাগলকে জরুরি চিকিৎসার জন্য দেওয়া গাড়িটি কার্যালয়ে নেই। অসুস্থ কোনো প্রাণীকে চিকিৎসা দিতেও কেউ গাড়ি নিয়ে কোথাও যাননি। পরে জানা যায়, গাড়ি আছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে একটি ব্যক্তিগত গ্যারেজে।

পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শবনম সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামের রাস্তা সরু থাকার কারণে চিকিৎসার কাজে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। নিরাপত্তার কারণে অফিসের ভেতরে গাড়ি রাখার অবস্থাও নেই। তাই মাসে দুই হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে গ্যারেজে রাখা হয়েছে।