বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো দীর্ঘ সময় ধরে মার্কিন ডলার কেনা ও বেচার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দাম নির্ধারণ করে আসছিল। তবে সেই পদ্ধতি থেকে শেষ পর্যন্ত সরে এসে ডলার কেনাবেচার ক্ষেত্রে এক দরব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। ডলারের এই এক দামপদ্ধতি অবশ্য চালু করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে।
এখন থেকে প্রবাসী আয়ের ডলার ও রপ্তানি আয়ের ডলার কেনায় একটিই দাম হবে। অন্যদিকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে দাম হবে আরেকটি। তবে সবাই এক দামেই ডলার বিক্রি করবে। এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছে যে দামে ডলার বিক্রি করবে, বাংলাদেশ ব্যাংকও সেই দামে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করবে।
গতকাল রোববার থেকে এই ব্যবস্থ চালু হয়েছে। তবে রোববার আন্তর্জাতিক বাজার বন্ধ থাকায় সেদিন সাধারণত বিদেশি মুদ্রার লেনদেন খুব কম হয়। এ জন্য আজ সোমবার থেকে পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে ডলারের এক দর।
ডলার–সংকটের সময় প্রবাসী আয়ে বড় ধাক্কা
ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম গতকাল থেকে বেড়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পণ্য বা সেবার রপ্তানি আয়ের ডলার ও প্রবাসী আয়ের ডলার কেনায় দাম হয়েছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আগে ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি ডলারের জন্য প্রবাসীদের ১০৯ টাকা এবং রপ্তানিকারকদের ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দিত।
অন্যদিকে ব্যাংকগুলো এখন আমদানিকারকদের কাছে ১১০ টাকায় ডলার বিক্রি করবে। আগে আমদানি দায় মেটাতে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছে প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করত।
দায়িত্ব কার
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের জোগান ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে সময়ে সময়ে এই মুদ্রার দাম নির্ধারণ করে আসছিল। এই দুটি সমিতি মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সংগঠন। কিন্তু এখন যেহেতু ডলার বেচাকেনার ক্ষেত্রে এক দর থাকবে, তাই প্রশ্ন হলো এই দাম নির্ধারিত হবে কীভাবে, আর তদারকই–বা করবে কে।
বেশ অনেক দিন ধরেই বাফেদা ও এবিবি ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে এবং তারাই এ কাজ আগামীতে করবে। তবে ব্যাংকগুলো প্রতিদিন কী দামে ডলার কেনাবেচা করছে, তাদেরকে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হয়। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মাঠপর্যায় থেকেও ডলারের দামের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। এর ফলে ডলারের দামের তদারকি করার একটি ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে ডলারের দামের তদারকি নিয়মিত করা হয়। তবে তদারকির পরিপ্রেক্ষিতে সব সময় ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। গভর্নর অনুমোদন দিলেই কেবল ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ব্যাংকগুলোকে বুঝিয়ে নিয়মের মধ্যে লেনদেন করার জন্য নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। এর ফলে এক দাম কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের প্রাপ্যতা সাপেক্ষে দাম নির্ধারণ করা হয়। অনেক সময় নথিপত্রে আনুষ্ঠানিক একটি দাম লেখা হয়, কিন্তু বাস্তবে নিতে হয় আরও বেশি।
‘কঠোর ব্যবস্থার’ ভয়ে প্রায় বন্ধ মানি চেঞ্জারে ডলার কেনাবেচা
কারণ, ডলার কেনায় খরচ বেশি পড়ে যায়। তাঁর মতে, বিদেশি মুদ্রার সংকট পুরোপুরি কাটাতে হলে ডলারের দাম নির্ধারণের এই ব্যবস্থা তুলে দিতে হবে। না হলে কিছুদিন পরপর দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং এটা কখনো বন্ধ করা যাবে না।
গত জানুয়ারি মাসের শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ মঞ্জুর করে। ওই ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল ডলারের এক দর কার্যকর করতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংক একটি দামেই ডলার কিনবে, আর যে উদ্দেশ্যেই বিক্রি করা হোক না কেন, এ ক্ষেত্রে একটিই দাম রাখা হবে। আগে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি থেকে পাওয়া ডলার কেনার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দাম ছিল।