আওয়ামী রাজনীতি এমন একটি ব্যবসা যেখানে কোনো ঝুঁকি নেইএবং লোকসান হওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই বলে মন্তব্য করেছেনবিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় থাকে দেশকে লুটপাট করে তলাবিহীনঝুড়িতে পরিণত করে। গত দেড় দশকে শেখ হাসিনার বিনা ভোটেররাজত্বে তার মন্ত্রী-এমপি-বড় নেতা, ছোট নেতা, পাতি নেতা, খুঁদেনেতা সবাই লুটপাটের প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়েছেন। দূর্নীতি, লুটপাট, নৈরাজ্যের স্বর্গ গড়েছেন তারা। তারা জনগণের ঘাড়ে জগদ্দলপাথরের মতো বসে ক্ষমতাকে ‘মধুর, তোমার শেষ যে না পাই, প্রহরহলো শেষ’-এর পরমানন্দের অনুভূতি নিয়ে উপভোগ করছেন।
বুধবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথাবলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে চোরের ফ্যাক্টরি।তাদের নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘সবাই পায়সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। আমার ডানে চোর, বাঁয়ে চোর, সামনে চোর, পিছনে চোর, চোর আর চোর। আমি বিদেশথেকে যা কিছু আনি এই চোর চাটার দল সব খাইয়া ফেলায়।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, শেখহাসিনা বলছেন, বিএনপি নাকি আগামী মার্চ মাসে দেশে দুর্ভিক্ষঘটাবে। কী হাস্যকর রঙ্গ-ব্যঙ্গ! আসন্ন একদলীয় পাতানো নির্বাচনউপলক্ষে তাদের মন্ত্রী-এমপি-ডামী-উচ্ছিষ্টভাগী স্বতন্ত্রদের হলফনামাপড়লে মনে হয় যেন রূপকথার আলাদিনের চেরাগের কাহিনী পড়ছি।কারো কারোটা দেখলে মনে হয় শাদ্দাদের বেহেস্তে তারা বসবাসকরছে।
বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষনেতা বলেন, নিশিরাতের ভোট ডাকাতসরকারের পাঁচ বছর থেকে ১৫ বছরের মধ্যে মন্ত্রী-এমপি এবং তাদেরনেতারা অর্থসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। অনেকে প্রায় কপর্দকহীনথেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ নয়, বটগাছ হয়েছেন। তাদের স্ত্রী-সন্তান-শাশুড়িরাও টাকার কুমিরে পরিণত হয়েছে।
সাধারণব্যবসায়ীদের লোকসান হলেও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকদেরকোনো লোকসান নেই। যে ব্যবসাই করছেন তাতেই লাভ আর লাভ।শেয়ার ব্যবসায় তারা কেউ ক্ষতির মুখোমুখি হননি। কৃষিখামার এবংমাছের ব্যবসাতেও বহু গুণ লাভ করেছেন। স্বামীদের ব্যবসাদেখাশোনা করতে গিয়ে স্ত্রীরাও কোটি কোটি টাকা, অর্থসম্পদেরমালিক হয়েছেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, হলফনামা ধরে প্রতিদিন প্রাত্যহিকসংবাদপত্রে নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পদের যে বিবরণ প্রকাশিত হচ্ছেতা দেখে জনগণের চক্ষু চড়কগাছের অবস্থা। তারা ভাবতে থাকে, আমরা কী একটা বাস্তব জগতে বাস করছি? নাকি কল্পনার স্বর্গরাজ্যেবাস করছি! এটাও সম্ভব! একেকজন মানুষের সম্পদ ২০০ গুণ, ৩০০গুণ, ৪০০ গুণ ৫০০ গুণ, কেউ আবার পাঁচ বছরে ৭০০ গুণসম্পদেরও মালিক হয়েছেন। অবস্থা এমন হয়েছে যে, টাকার পাহাড়েঘুমান মন্ত্রী এমপি-নেতারা।
রিজভী বলেন, যে মন্ত্রী- এমপি নিজেকে কৃচ্ছতা সাধনের বরপুত্র বলেজাহির করতেন কিংবা যিনি জনসম্মুখে সততার পরাকাষ্ঠ প্রদর্শনেরনাটক করতেন তাদের শঠতার বিভৎস বিগ্রহ জনগনের সামনেউন্মোচিত হয়েছে। যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের প্রায় সকলেরইনগদ অর্থকড়ি- বিত্ত সম্পদ দ্বিগুণ থেকে প্রায় হাজার গুন স্ফীতহয়েছে। আওয়ামী জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় কারো হয়েছে সম্পদের পাহাড়কারো গাড়ির বহর। দশ বছর আগে যে মন্ত্রীর হলফনামায় হাজারেরঘরে ছিল বার্ষিক আয় তিনিও এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।সবাই জানি-তাদের হলফনামায় সম্পদের সামান্যই প্রকাশ পেয়েছে।অবৈধ অর্থ, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ, সেকেন্ড হোম, বিদেশী গচ্ছিতবেশুমার সম্পদের হিসাব নেই।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, যারা আওয়ামী লীগ করেনতাদের ব্রতই যেন লুটপাট করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়া। লুটেরারাজ্যে আওয়ামী লুটেরাদের কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না। ফলেমোট সম্পদের ছিটেফোটা মাত্র এই হলফনামায় উঠে এসেছে। এমপি-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থীরাও অনেক তথ্য গোপন করছেন।
রিজভী বলেন, দুদককে দলকানা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়েছে।যাঁদের কাজ হলো খুঁজে খুঁজে বিএনপি এবং ভিন্নমতের সম্মানিতলোকদের ঘায়েল করা। রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ারে পরিণতকরা হয়েছে এই তথাকথিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে।
সূত্র : ঢাকাটাইমস