০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘শ্রম ইস্যুতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র’

সম্প্রতি আকস্মিকভাবেই ‘শ্রম অধিকার লঙ্ঘনকারীদের’ বিরুদ্ধে ট্রেড প্যানাল্টি বা বাণিজ্যে জরিমানা, ভিসা বিধিনিষেধসহ শাস্তিমূলক পদক্ষেপের নির্দেশনা জারি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র-এমনটিই বলেছেন পোশাক শিল্প উদ্যোক্তা ও বিকেএমইএর কার্যকরি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা যদি আসেও তা রাজনৈতিক কারণে হতে পারে। সেটা কূটনৈতিকভাবেই সমাধনের উদ্যোগ নিতে হবে।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইকোনোমিকস রিপোর্টার্স ফোরাম বা ইআরএফ আয়োজিত পোশাক খাতের শ্রম ইস্যু নিয়ে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। বক্তব্য দেন শ্রম বাণিজ্য বিশ্লেষক মোস্তফা আবিদ খান, বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, বিজিএমইএর পরিচালক এ এন সাইফুদ্দিন, শ্রমিক নেতা আমিরুল ইসলাম আমিন, শ্রমিক নেতা তৌহিদুর রহমান প্রমুখ।

এসময় বিকেএমইএর কার্যকরি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা কোনো নিষেধাজ্ঞায় ভিতু নই। কারণ আমরা এমন কিছুই করিনি যেসব কারণে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। আইএলও কনভেনশনের ১০টির মধ্যে ৮টি পূরণ করেছি। বাংলাদেশ এমন অবস্থা নেই যেখানেই যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে। শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে। এরপরও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিলে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। রাজনৈতিক কারণে হলে তা অবশ্যই কূটনৈতিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ববান শ্রমিক সংগঠন বা নেতা হলে তিনি কারখানার ক্ষতি করতে পারেন না। অনেক পক্ষ আছে যারা দেশের বিরুদ্ধে কথা বলে। ট্রেড ইউনিয়ন নিয়েও ভয় কাজ করে মালিকপক্ষের মধ্যে। ট্রেড ইউনিয়ন মানেই যখন তখন কাজ বন্ধ করে দেবে সে ধরনের ইউনিয়ন নিয়ে আমরা ভীত।

তিনি বলেন, এবারের আন্দোলন শ্রমিকদের আন্দোলন ছিল না। তাহলে কারা ভাঙচুর করলো সেটা দেখতে হবে। তাদের যারা উৎসাহিত করলো তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। ফুটেজ ছাড়া যাদের নামে মামলা হয়েছে আমরা তাদের মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছি।

শ্রম-বাণিজ্য বিশ্লেষক মোস্তফা আবিদ খান বলেন, শ্রম ইস্যু নিয়ে কারখানায় ভয় আছে। শ্রমিক নেতাকে অবশ্যই শ্রমিক হতে হবে, কিন্তু তা অনেক সময় কি দেখি। ছাত্র নেতা যদি হয় দুই ছেলের বাবা, তাহলে তিনি কি করে ছাত্রের সমাধানে কাজ করবে। শ্রমিক নেতাকে অবশ্যই শ্রমিক হতে হবে, তাহলেই তিনি শ্রমিকের সমস্যা বুঝবেন।

ফজলে শামিম এহসান বলেন, শ্রম বিষয়ে বর্তমানে আমরা অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থানে আছি। আন্তর্জাতিক মানের দিক থেকেও ভালো আছি। ক্ষতিপূরণের দিক থেকে আমরা উন্নত দেশের মতো অবস্থায় আছি। ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে মনে ভয় থাকে। ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে সেভাবে নার্সিং করা হয়নি।

তিনি বলেন, আমাদের ২৫০০ কারখানার মধ্যে ১৩০০ বেশি কারখানায় ইউনিয়ন হয়েছে। আমাদের সেক্টরে শ্রমিক নেতা দুই ধরনের হয়ে থাকে। তাদের একটা সেক্টর বাঁচাতে কাজ করে, আর একটা আছে বাইরে থেকে ডলার এনে নিজের স্বার্থ দেখে। শ্রমিক নেতা মানে দাবি-দাওয়া না, কারখানাকেও এগিয়ে নিতে হবে। যুক্তরাষ্টের যে আইনটার কারণে আমাদের ভয় সেখানে দুইটা দিক আছে। একটা পর্দার সামনে অন্যটি পর্দার বাইরের দিক। যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে এখন যে পরিস্থিতি আছে সেটা রাজনৈতিক। এখানে কূটনীতিকভাবে এগিয়ে নিতে হবে। সরকারকে এখানে উদ্যোগ নিতে হবে।

তৌহিদুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম নীতিকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। ব্যবসা ধরে রাখতে হলে তাদের ম্যামোরেন্ডাম বিবেচনায় নিতে হবে। আমার কাছে মনে হয় পশ্চিম আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। সাম্প্রতিক আন্দোলনে চারজন শ্রমিকের মৃত্যু হলো। এ হত্যাকাণ্ডের কেনো তদন্ত হলো না, কেনো বিচার হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো মজুরি বাস্তবায়ন। বিকেএমইএ-বিজেএমই কঠোর মনিটরিং না করলে এ বেতন পাবে না। আগামীর পথচলা সুন্দর করতে হলে অবশ্যই আমাদের আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। মন্ত্রণালয়ে অনিয়মের কারণে ট্রেড ইউনিয়ন ভালো অবস্থানে নেই। শ্রমিকের মৃত্যতে শোক জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সেটাও ভাববার বিষয়। মালিক পক্ষ বলছে শ্রমিক আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাহলে আমার ৭ জন আঞ্চলিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে কেনো। তারাতো আন্দোলনে ছিলেন না।

সূত্র : জাগোনিউজ

বিষয়

‘শ্রম ইস্যুতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র’

প্রকাশিত: ১২:৫৮:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

সম্প্রতি আকস্মিকভাবেই ‘শ্রম অধিকার লঙ্ঘনকারীদের’ বিরুদ্ধে ট্রেড প্যানাল্টি বা বাণিজ্যে জরিমানা, ভিসা বিধিনিষেধসহ শাস্তিমূলক পদক্ষেপের নির্দেশনা জারি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র-এমনটিই বলেছেন পোশাক শিল্প উদ্যোক্তা ও বিকেএমইএর কার্যকরি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা যদি আসেও তা রাজনৈতিক কারণে হতে পারে। সেটা কূটনৈতিকভাবেই সমাধনের উদ্যোগ নিতে হবে।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইকোনোমিকস রিপোর্টার্স ফোরাম বা ইআরএফ আয়োজিত পোশাক খাতের শ্রম ইস্যু নিয়ে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। বক্তব্য দেন শ্রম বাণিজ্য বিশ্লেষক মোস্তফা আবিদ খান, বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, বিজিএমইএর পরিচালক এ এন সাইফুদ্দিন, শ্রমিক নেতা আমিরুল ইসলাম আমিন, শ্রমিক নেতা তৌহিদুর রহমান প্রমুখ।

এসময় বিকেএমইএর কার্যকরি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা কোনো নিষেধাজ্ঞায় ভিতু নই। কারণ আমরা এমন কিছুই করিনি যেসব কারণে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। আইএলও কনভেনশনের ১০টির মধ্যে ৮টি পূরণ করেছি। বাংলাদেশ এমন অবস্থা নেই যেখানেই যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে। শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে। এরপরও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিলে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। রাজনৈতিক কারণে হলে তা অবশ্যই কূটনৈতিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ববান শ্রমিক সংগঠন বা নেতা হলে তিনি কারখানার ক্ষতি করতে পারেন না। অনেক পক্ষ আছে যারা দেশের বিরুদ্ধে কথা বলে। ট্রেড ইউনিয়ন নিয়েও ভয় কাজ করে মালিকপক্ষের মধ্যে। ট্রেড ইউনিয়ন মানেই যখন তখন কাজ বন্ধ করে দেবে সে ধরনের ইউনিয়ন নিয়ে আমরা ভীত।

তিনি বলেন, এবারের আন্দোলন শ্রমিকদের আন্দোলন ছিল না। তাহলে কারা ভাঙচুর করলো সেটা দেখতে হবে। তাদের যারা উৎসাহিত করলো তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। ফুটেজ ছাড়া যাদের নামে মামলা হয়েছে আমরা তাদের মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছি।

শ্রম-বাণিজ্য বিশ্লেষক মোস্তফা আবিদ খান বলেন, শ্রম ইস্যু নিয়ে কারখানায় ভয় আছে। শ্রমিক নেতাকে অবশ্যই শ্রমিক হতে হবে, কিন্তু তা অনেক সময় কি দেখি। ছাত্র নেতা যদি হয় দুই ছেলের বাবা, তাহলে তিনি কি করে ছাত্রের সমাধানে কাজ করবে। শ্রমিক নেতাকে অবশ্যই শ্রমিক হতে হবে, তাহলেই তিনি শ্রমিকের সমস্যা বুঝবেন।

ফজলে শামিম এহসান বলেন, শ্রম বিষয়ে বর্তমানে আমরা অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থানে আছি। আন্তর্জাতিক মানের দিক থেকেও ভালো আছি। ক্ষতিপূরণের দিক থেকে আমরা উন্নত দেশের মতো অবস্থায় আছি। ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে মনে ভয় থাকে। ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে সেভাবে নার্সিং করা হয়নি।

তিনি বলেন, আমাদের ২৫০০ কারখানার মধ্যে ১৩০০ বেশি কারখানায় ইউনিয়ন হয়েছে। আমাদের সেক্টরে শ্রমিক নেতা দুই ধরনের হয়ে থাকে। তাদের একটা সেক্টর বাঁচাতে কাজ করে, আর একটা আছে বাইরে থেকে ডলার এনে নিজের স্বার্থ দেখে। শ্রমিক নেতা মানে দাবি-দাওয়া না, কারখানাকেও এগিয়ে নিতে হবে। যুক্তরাষ্টের যে আইনটার কারণে আমাদের ভয় সেখানে দুইটা দিক আছে। একটা পর্দার সামনে অন্যটি পর্দার বাইরের দিক। যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে এখন যে পরিস্থিতি আছে সেটা রাজনৈতিক। এখানে কূটনীতিকভাবে এগিয়ে নিতে হবে। সরকারকে এখানে উদ্যোগ নিতে হবে।

তৌহিদুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম নীতিকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। ব্যবসা ধরে রাখতে হলে তাদের ম্যামোরেন্ডাম বিবেচনায় নিতে হবে। আমার কাছে মনে হয় পশ্চিম আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। সাম্প্রতিক আন্দোলনে চারজন শ্রমিকের মৃত্যু হলো। এ হত্যাকাণ্ডের কেনো তদন্ত হলো না, কেনো বিচার হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো মজুরি বাস্তবায়ন। বিকেএমইএ-বিজেএমই কঠোর মনিটরিং না করলে এ বেতন পাবে না। আগামীর পথচলা সুন্দর করতে হলে অবশ্যই আমাদের আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। মন্ত্রণালয়ে অনিয়মের কারণে ট্রেড ইউনিয়ন ভালো অবস্থানে নেই। শ্রমিকের মৃত্যতে শোক জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সেটাও ভাববার বিষয়। মালিক পক্ষ বলছে শ্রমিক আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাহলে আমার ৭ জন আঞ্চলিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে কেনো। তারাতো আন্দোলনে ছিলেন না।

সূত্র : জাগোনিউজ