১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাসগড়া জয়

সিলেট টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানের বিরাট ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশ। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতে যেতে পারত গতকালই। বিশেষ করে ৩৩২ রানের লক্ষে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে ৬০ রানে নিউজিল্যান্ডের পঞ্চম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল এই টেস্ট হয়তো পঞ্চম দিনের সূর্য দেখবে না। কিউই ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে মুহুর্মুহু আবেদন তুলছিলেন বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডাররা। কোনোটাতে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাচ্ছেন, কোনোটা ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে ব্যাটসম্যানের মনে।

ব্যতিক্রম ছিল কিছুটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে মিচেলের প্রতিরোধের চেষ্টা। টম ব্লান্ডেল, গ্লেন ফিলিপস, কাইল জেমিসনরা ছোট ছোট সঙ্গত দিয়ে গেছেন তাঁকে। এই করে করেই এক শ পার, শেষে এসে ইশ সোধিকে নিয়ে তো মিচেল পার করে দিলেন দিনটাই। শেষ এক ঘণ্টায় লড়াইটা হয়ে উঠেছিল এমন—বাংলাদেশ চায় নিউজিল্যান্ডকে অলআউট করে চতুর্থ দিনে ম্যাচ শেষ করতে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের পণ, ম্যাচ যে করেই হোক পঞ্চম দিনে নিতে হবে। এই নিয়ে কী হয় কী হয় একটা অবস্থায় পার হয়েছে শেষ বেলা। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ দিন শেষে মিচেলের ৮৬ বলে অপরাজিত ৪৪ রানের সুবাদে কাল ‘জয়’টা হয়েছে নিউজিল্যান্ডেরই। বাংলাদেশ তো অন্তত চার দিনে টেস্ট জিততে পারল না।

সেই উৎসবের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ১ ঘণ্টা ২৬ মিনিট। প্রথম সাফল্যটা আসতে আসতেই ১০ম ওভার। ধৈর্যের পরীক্ষায় হার মেনে নাঈম হাসানকে সুইপ করেছিলেন ততক্ষণে অর্ধশত (৫৮) করে ফেলা মিচেল। ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে সেটাই দারুণ এক ক্যাচ হয়ে গেলে তাইজুল ইসলামের হাতে। ম্যাচটাকে পঞ্চম দিনে নিয়ে আসায় মিচেলের ১২০ বলে খেলা ৫৮ রানের ইনিংস এবং ইস শোধির সঙ্গে তাঁর ৩০ রানের রাত পার করা জুটিটাকে বিশেষভাবে মনে রাখবে নিউজিল্যান্ড। অবশ্য যদি তারা এই টেস্টটাকেই মনে রাখতে চায় আর কি!

এর ৮ ওভার পর দ্বিতীয় সাফল্যটা আসে সেই তাইজুলের হাত ধরেই, সাউদিকে শর্ট মিড উইকেটে জাকির হাসানের ক্যাচ বানিয়ে। টেস্টে ১২তম পঞ্চম উইকেট পাওয়ার আনন্দে মাতা তাইজুল মাঠেই অভিনন্দন পেয়েছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান ইশ সোধিরও। এর পর তাইজুলের আরেকটি উইকেটে ৭২তম ওভারের ১ম বলেই হয়ে যায় জয়ের আনুষ্ঠানিকতা। ইশ সোধির এই ক্যাচটাও নিয়েছেন জাকির। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রানে ৬ উইকেট সহ টেস্টে তাইজুলের উইকেট হলো ১০টি। এক টেস্টে ১০ উইকেট তিনি নিলেন এ নিয়ে দ্বিতীয়বার।

নিউজিল্যান্ড এই টেস্টের স্মৃতি ভুলে যেতে চাইলেও বাংলাদেশের কাছে ঘরের মাঠে কিউইদের প্রথম হারানো টেস্টটা চিরস্মরণীয় হয়েই থাকবে। টেস্টে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়গুলোরই একটি হয়ে গেছে এটি। বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত জেতা ১৮টি টেস্টের মধ্যে দেশের বাইরের ৬টিতে জিম্বাবুয়ে ছাড়াও জয় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তার মধ্যে সেরা গত বছর জেতা মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট। ঘরের মাঠে যদিও বাংলাদেশ হারিয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে; তবু সব মিলিয়ে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ৮ উইকেটে পাওয়া জয়টাই সবচেয়ে এগিয়ে।

সিলেটের চা বাগানে ঘেরা মাঠের বিশাল জয়টা মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের পরই আসতে পারে কারণ, ঘরের মাঠে খেলা হলেও উইকেট থেকে এই টেস্টে অন্তত বাংলাদেশ বাড়তি কোনো সুবিধা পায়নি। চতুর্থ দিনের উইকেটেও ব্যাটিংটা প্রথাগতভাবে কঠিন মনে হয়নি। দুই ইনিংসে তাইজুলের ৮ উইকেট দেখে কারও মনে হতেই পারে বাংলাদেশের স্পিনাররা ভালো সহায়তা পেয়েছেন উইকেট থেকে। সেই সহায়তা আসলে তারা আদায় করেই নিয়েছেন। নইলে নিউজিল্যান্ড দলেও তো স্পিনারের অভাব ছিল না।

প্রথম ইনিংসের মতো কাল দ্বিতীয় ইনিংসেও ৪ উইকেট নিয়ে কিউই ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে শেকল পরিয়ে রেখেছিলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। দুই অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসানও বেশি রান নিতে না দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছিলেন। তাইজুলের উইকেটগুলো হতে পারে সেটারই সুফল। আজ তো আরও ২ উইকেট নিয়ে টেস্টটাকেই নিজের করে নিলেন তিনি।

মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টটা যেরকম ছিল পেসার ইবাদত হোসেনের। ইবাদতের দুর্ভাগ্য, চোটের কারণে তিনি এখন দলে নেই। তাঁর শহরেই বাংলাদেশ আরও একবার নিউজিল্যান্ডকে হারালেও তিনি সেই সুখবরটা পেলেন লন্ডনে বসে। চিকিৎসার জন্য আপাতত সেখানেই আছেন বাংলাদেশের মাউন্ট মঙ্গানুই জয়ের নায়ক।

বিষয়

কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাসগড়া জয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৩:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৩

সিলেট টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানের বিরাট ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশ। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতে যেতে পারত গতকালই। বিশেষ করে ৩৩২ রানের লক্ষে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে ৬০ রানে নিউজিল্যান্ডের পঞ্চম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল এই টেস্ট হয়তো পঞ্চম দিনের সূর্য দেখবে না। কিউই ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে মুহুর্মুহু আবেদন তুলছিলেন বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডাররা। কোনোটাতে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাচ্ছেন, কোনোটা ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে ব্যাটসম্যানের মনে।

ব্যতিক্রম ছিল কিছুটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে মিচেলের প্রতিরোধের চেষ্টা। টম ব্লান্ডেল, গ্লেন ফিলিপস, কাইল জেমিসনরা ছোট ছোট সঙ্গত দিয়ে গেছেন তাঁকে। এই করে করেই এক শ পার, শেষে এসে ইশ সোধিকে নিয়ে তো মিচেল পার করে দিলেন দিনটাই। শেষ এক ঘণ্টায় লড়াইটা হয়ে উঠেছিল এমন—বাংলাদেশ চায় নিউজিল্যান্ডকে অলআউট করে চতুর্থ দিনে ম্যাচ শেষ করতে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের পণ, ম্যাচ যে করেই হোক পঞ্চম দিনে নিতে হবে। এই নিয়ে কী হয় কী হয় একটা অবস্থায় পার হয়েছে শেষ বেলা। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ দিন শেষে মিচেলের ৮৬ বলে অপরাজিত ৪৪ রানের সুবাদে কাল ‘জয়’টা হয়েছে নিউজিল্যান্ডেরই। বাংলাদেশ তো অন্তত চার দিনে টেস্ট জিততে পারল না।

সেই উৎসবের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ১ ঘণ্টা ২৬ মিনিট। প্রথম সাফল্যটা আসতে আসতেই ১০ম ওভার। ধৈর্যের পরীক্ষায় হার মেনে নাঈম হাসানকে সুইপ করেছিলেন ততক্ষণে অর্ধশত (৫৮) করে ফেলা মিচেল। ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে সেটাই দারুণ এক ক্যাচ হয়ে গেলে তাইজুল ইসলামের হাতে। ম্যাচটাকে পঞ্চম দিনে নিয়ে আসায় মিচেলের ১২০ বলে খেলা ৫৮ রানের ইনিংস এবং ইস শোধির সঙ্গে তাঁর ৩০ রানের রাত পার করা জুটিটাকে বিশেষভাবে মনে রাখবে নিউজিল্যান্ড। অবশ্য যদি তারা এই টেস্টটাকেই মনে রাখতে চায় আর কি!

এর ৮ ওভার পর দ্বিতীয় সাফল্যটা আসে সেই তাইজুলের হাত ধরেই, সাউদিকে শর্ট মিড উইকেটে জাকির হাসানের ক্যাচ বানিয়ে। টেস্টে ১২তম পঞ্চম উইকেট পাওয়ার আনন্দে মাতা তাইজুল মাঠেই অভিনন্দন পেয়েছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান ইশ সোধিরও। এর পর তাইজুলের আরেকটি উইকেটে ৭২তম ওভারের ১ম বলেই হয়ে যায় জয়ের আনুষ্ঠানিকতা। ইশ সোধির এই ক্যাচটাও নিয়েছেন জাকির। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রানে ৬ উইকেট সহ টেস্টে তাইজুলের উইকেট হলো ১০টি। এক টেস্টে ১০ উইকেট তিনি নিলেন এ নিয়ে দ্বিতীয়বার।

নিউজিল্যান্ড এই টেস্টের স্মৃতি ভুলে যেতে চাইলেও বাংলাদেশের কাছে ঘরের মাঠে কিউইদের প্রথম হারানো টেস্টটা চিরস্মরণীয় হয়েই থাকবে। টেস্টে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়গুলোরই একটি হয়ে গেছে এটি। বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত জেতা ১৮টি টেস্টের মধ্যে দেশের বাইরের ৬টিতে জিম্বাবুয়ে ছাড়াও জয় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তার মধ্যে সেরা গত বছর জেতা মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট। ঘরের মাঠে যদিও বাংলাদেশ হারিয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে; তবু সব মিলিয়ে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ৮ উইকেটে পাওয়া জয়টাই সবচেয়ে এগিয়ে।

সিলেটের চা বাগানে ঘেরা মাঠের বিশাল জয়টা মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের পরই আসতে পারে কারণ, ঘরের মাঠে খেলা হলেও উইকেট থেকে এই টেস্টে অন্তত বাংলাদেশ বাড়তি কোনো সুবিধা পায়নি। চতুর্থ দিনের উইকেটেও ব্যাটিংটা প্রথাগতভাবে কঠিন মনে হয়নি। দুই ইনিংসে তাইজুলের ৮ উইকেট দেখে কারও মনে হতেই পারে বাংলাদেশের স্পিনাররা ভালো সহায়তা পেয়েছেন উইকেট থেকে। সেই সহায়তা আসলে তারা আদায় করেই নিয়েছেন। নইলে নিউজিল্যান্ড দলেও তো স্পিনারের অভাব ছিল না।

প্রথম ইনিংসের মতো কাল দ্বিতীয় ইনিংসেও ৪ উইকেট নিয়ে কিউই ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে শেকল পরিয়ে রেখেছিলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। দুই অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসানও বেশি রান নিতে না দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছিলেন। তাইজুলের উইকেটগুলো হতে পারে সেটারই সুফল। আজ তো আরও ২ উইকেট নিয়ে টেস্টটাকেই নিজের করে নিলেন তিনি।

মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টটা যেরকম ছিল পেসার ইবাদত হোসেনের। ইবাদতের দুর্ভাগ্য, চোটের কারণে তিনি এখন দলে নেই। তাঁর শহরেই বাংলাদেশ আরও একবার নিউজিল্যান্ডকে হারালেও তিনি সেই সুখবরটা পেলেন লন্ডনে বসে। চিকিৎসার জন্য আপাতত সেখানেই আছেন বাংলাদেশের মাউন্ট মঙ্গানুই জয়ের নায়ক।