০১:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে ‘সাংবাদিকদের চোখে জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক আলোচনা

দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সিলেটের সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে রবিবার (১৭ নভেম্বর) সকালে সিলেটের একটি হোটেলে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিকদের চোখে জুলাই গণঅভ্যুত্থান শিরোনামে এই আয়োজন করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘দৃক’।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ আমলে বিগত প্রায় ১৬ বছর সাংবাদিকতায় বিরাজমান সংকট নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। জনস্বার্থে দেশের সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। এমন বাস্তবতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও জনতার শহীদের কাতারে শামিল হয়েছেন সাংবাদিকরাও। আহত হয়েছেন অনেক সাংবাদিক।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে এই সংলাপে নয়াদিগন্ত পত্রিকার সিলেট প্রতিনিধি শহীদ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন সিলেটের সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের আলোচনায় বারবার উঠে এসেছে এই শহীদ সাংবাদিকের নাম। সিলেটের সাংবাদিকরা তাদের বক্তব্যে শহীদ সাংবাদিক তুরাবের গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় থেকে শুরু করে হাসপাতালে তার জীবনের শেষ মুহুর্তের ঘটনাবলী বর্ণনা করেছেন।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল না, সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছেন। তবে ৫ আগস্টের পর এখনও সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতা ফিরে আসেনি বলেও জানান তিনি। এ পর্যন্ত সিলেটে প্রায় ২০জন সাংবাদিকদের বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলার শিকার বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

অন্যদিকে বণিক বার্তার সিলেট জেলা সাংবাদিক নূর আহমদ প্রশ্ন রেখে বলেন, যেসকল সাংবাদিক সাংবাদিকতা না করে আন্দোলনকারীদের পুলিশ ও আওয়ামী লীগের খুনি ও সন্ত্রাসীদের কাছে চিনিয়ে দিয়েছেন তাদের বিচার কীভাবে হবে? তিনি আরও বলেন, “বিগত সময়ে সাংবাদিকরা প্রকৃত অর্থেই সাংবাদিকতা করেছেন কি না এই প্রশ্ন সাংবাদিকদের নিজেকেই করতে হবে, আত্মসমালোচনা করতে হবে। আমরা আমাদের বিবেকের কাছে কী জবাব দেই? আমরা যেন চোখ বুঝে একবার নিজেদেরকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করাই।”

উত্তরপূর্ব-এর সাংবাদিক মনিকা ইসলাম বলেন, “সাংবাদিকরা একে অন্যকে দোষারোপ করলে কোনো ফায়দা আসবে না। সাংবাদিকদের বলা হচ্ছে ফ্যাসিস্টের দোসর, দালাল। আমরা কেউ ইচ্ছাকৃত দালাল হইনি। সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছিলো। সাংবাদিকতার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদেরকে শক্তি যোগাতে হবে, দোষারোপ নয়।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত অনলাইন সংবাদমাধ্যম বার্তা২৪ এর সাংবাদিক মসাহিদ আলী আহত অবস্থায় তার কঠিন সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন। মাথার পেছন থেকে বুলেট বের করতে চিকিৎসকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন এই নবীন সাংবাদিক। এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন আঞ্চলিক পত্রিকা শ্যামলসিলেট এর আহত সাংবাদিক আজমল আলী। সাংবাদিক আজমল তার বক্তব্যে শহীদ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের শেষ সময়টা বর্ণনা করে বলেন, “শহীদ সাংবাদিক তুরাব টার্গেট কিলিং এর শিকার। তার বুকটা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলো। তুরাব ভেবেছিলো তিনি বাঁচবেন। কিন্তু বাঁচতে পারেননি।”

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সিলেট ব্যুরো চিফ দেবাশীষ দেবু বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর একের পর এক সাংবাদিক মামলার শিকার হয়েছেন, অনেক মিডিয়া হাউসের মালিক আত্মগোপনে আছেন বা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তাই সংবাদমাধ্যমগুলোতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই সাময়িক সংকট কাটিয়ে সাংবাদিকদের মূলত মানুষের কাছে আস্থার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের আগেও সংবাদ প্রকাশে নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তা ছিলো। এখনও সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটেনি।

সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকতায় অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। যেমন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন এজেন্সিকে জবাবদিহি করতে হয়েছে। এমন সাংবাদিকতা আমরা চাই না। মুক্ত সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

ঢাকার বাইরে সারাদেশের মাঠের সাংবাদিকদের মূল্যায়নের ওপর জোর দিয়েছেন দৈনিক খবরের কাগজের সাংবাদিক শাকিলা ববি।

একইসাথে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের দায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যেন বিগত সময়ের মতো আর কোনো ফ্যাসিস্টের পক্ষ না নেই। যদি সাংবাদিকরা সত্যিকার অর্থেই সাংবাদিকতা করতেন তাহলে এতো মানুষকে জীবন দিয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে হতো না।”

উপস্থিত সকল সাংবাদিদের বক্তব্যে সাংবাদিকতার প্রতি গণমানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা, সাংবাদিকতায় বাধা দূর করা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি উঠে এসেছে। পরিশেষে সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির। সাংবাদিকদের প্রতি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এবং প্রকৃত অর্থে সাংবাদিকতার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। দৃকের পক্ষ থেকে এই আয়োজন সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক সামিয়া রহমান প্রিমা।

বিষয়

সিলেটে ‘সাংবাদিকদের চোখে জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক আলোচনা

প্রকাশিত: ০৮:৪৬:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সিলেটের সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে রবিবার (১৭ নভেম্বর) সকালে সিলেটের একটি হোটেলে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিকদের চোখে জুলাই গণঅভ্যুত্থান শিরোনামে এই আয়োজন করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘দৃক’।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ আমলে বিগত প্রায় ১৬ বছর সাংবাদিকতায় বিরাজমান সংকট নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। জনস্বার্থে দেশের সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। এমন বাস্তবতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও জনতার শহীদের কাতারে শামিল হয়েছেন সাংবাদিকরাও। আহত হয়েছেন অনেক সাংবাদিক।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে এই সংলাপে নয়াদিগন্ত পত্রিকার সিলেট প্রতিনিধি শহীদ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন সিলেটের সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের আলোচনায় বারবার উঠে এসেছে এই শহীদ সাংবাদিকের নাম। সিলেটের সাংবাদিকরা তাদের বক্তব্যে শহীদ সাংবাদিক তুরাবের গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় থেকে শুরু করে হাসপাতালে তার জীবনের শেষ মুহুর্তের ঘটনাবলী বর্ণনা করেছেন।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল না, সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছেন। তবে ৫ আগস্টের পর এখনও সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতা ফিরে আসেনি বলেও জানান তিনি। এ পর্যন্ত সিলেটে প্রায় ২০জন সাংবাদিকদের বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলার শিকার বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

অন্যদিকে বণিক বার্তার সিলেট জেলা সাংবাদিক নূর আহমদ প্রশ্ন রেখে বলেন, যেসকল সাংবাদিক সাংবাদিকতা না করে আন্দোলনকারীদের পুলিশ ও আওয়ামী লীগের খুনি ও সন্ত্রাসীদের কাছে চিনিয়ে দিয়েছেন তাদের বিচার কীভাবে হবে? তিনি আরও বলেন, “বিগত সময়ে সাংবাদিকরা প্রকৃত অর্থেই সাংবাদিকতা করেছেন কি না এই প্রশ্ন সাংবাদিকদের নিজেকেই করতে হবে, আত্মসমালোচনা করতে হবে। আমরা আমাদের বিবেকের কাছে কী জবাব দেই? আমরা যেন চোখ বুঝে একবার নিজেদেরকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করাই।”

উত্তরপূর্ব-এর সাংবাদিক মনিকা ইসলাম বলেন, “সাংবাদিকরা একে অন্যকে দোষারোপ করলে কোনো ফায়দা আসবে না। সাংবাদিকদের বলা হচ্ছে ফ্যাসিস্টের দোসর, দালাল। আমরা কেউ ইচ্ছাকৃত দালাল হইনি। সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছিলো। সাংবাদিকতার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদেরকে শক্তি যোগাতে হবে, দোষারোপ নয়।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত অনলাইন সংবাদমাধ্যম বার্তা২৪ এর সাংবাদিক মসাহিদ আলী আহত অবস্থায় তার কঠিন সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন। মাথার পেছন থেকে বুলেট বের করতে চিকিৎসকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন এই নবীন সাংবাদিক। এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন আঞ্চলিক পত্রিকা শ্যামলসিলেট এর আহত সাংবাদিক আজমল আলী। সাংবাদিক আজমল তার বক্তব্যে শহীদ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের শেষ সময়টা বর্ণনা করে বলেন, “শহীদ সাংবাদিক তুরাব টার্গেট কিলিং এর শিকার। তার বুকটা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলো। তুরাব ভেবেছিলো তিনি বাঁচবেন। কিন্তু বাঁচতে পারেননি।”

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সিলেট ব্যুরো চিফ দেবাশীষ দেবু বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর একের পর এক সাংবাদিক মামলার শিকার হয়েছেন, অনেক মিডিয়া হাউসের মালিক আত্মগোপনে আছেন বা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তাই সংবাদমাধ্যমগুলোতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই সাময়িক সংকট কাটিয়ে সাংবাদিকদের মূলত মানুষের কাছে আস্থার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের আগেও সংবাদ প্রকাশে নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তা ছিলো। এখনও সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটেনি।

সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকতায় অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। যেমন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন এজেন্সিকে জবাবদিহি করতে হয়েছে। এমন সাংবাদিকতা আমরা চাই না। মুক্ত সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

ঢাকার বাইরে সারাদেশের মাঠের সাংবাদিকদের মূল্যায়নের ওপর জোর দিয়েছেন দৈনিক খবরের কাগজের সাংবাদিক শাকিলা ববি।

একইসাথে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের দায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যেন বিগত সময়ের মতো আর কোনো ফ্যাসিস্টের পক্ষ না নেই। যদি সাংবাদিকরা সত্যিকার অর্থেই সাংবাদিকতা করতেন তাহলে এতো মানুষকে জীবন দিয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে হতো না।”

উপস্থিত সকল সাংবাদিদের বক্তব্যে সাংবাদিকতার প্রতি গণমানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা, সাংবাদিকতায় বাধা দূর করা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি উঠে এসেছে। পরিশেষে সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির। সাংবাদিকদের প্রতি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এবং প্রকৃত অর্থে সাংবাদিকতার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। দৃকের পক্ষ থেকে এই আয়োজন সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক সামিয়া রহমান প্রিমা।