কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে পুরো ঢাকায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের দফায়-দফায় সংঘর্ষ হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী, মিরপুর ১০, বাড্ডা এবং আইডিয়াল কলেজ, উত্তরা, মতিঝিলে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের দফায়-দফায় সংঘর্ষ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে পূর্বঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর রামপুরা পুলিশ বক্সে আগুন দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শনির আখড়া, কাজলা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলছে।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে শনির আখড়া এলাকার দিক থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তাদের আটকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়েন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষের কারণে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপরে অনেক যানবাহন আটকে আছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় মিরপুর-১০ গোলচত্বর। ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর ভর করে স্বাধীনতা বিরোধীদের নৈরাজ্য সৃষ্টির’ প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। এ সময় আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় যা পুরোপুরি পণ্ড হয়ে গেছে।
দুপুর সোয়া ১২টার পরে আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দিয়ে পুলিশকে মিরপুর থানার দিকে নিয়ে যায়। পরে আবার পুলিশ ধাওয়া দিয়ে আন্দোলনকারীদের মিরপুর-১০ নম্বরের দিকে নিয়ে আসে। এসময় পুলিশ বেশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। জবাবে আন্দোলনকারীদেরও ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়।
সংঘর্ষের ফলে বন্ধ রয়েছে ওই এলাকার আশপাশের সব দোকানপাট এবং গাড়ি চলাচল। অন্তত পাঁচটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
রাজধানীর আইডিয়াল কলেজের ফটকের সামনে আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। দুপুর ১২টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি রয়েছে। আনা হয়েছে সাঁজোয়া যান।
এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ৯টার দিকে শনিরআখড়া ও কাজলা এলাকায় পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালালে দুই পথচারী গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলছে। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ক্যাম্পাসের ভেতরেও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল সোয়া ১১টার দিক থেকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, কোটা সংস্কারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেশজুড়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে মেরুল বাড্ডা সড়কে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে সেখানে অতর্কিত পুলিশ হামলা চালায়। এতে অনেক শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জনের মতো আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, যাদেরকে ঢাকা মেডিকেলসহ অন্যান্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার, বনশ্রী ফরাজি হাসপাতালসহ স্থানীয় একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া রাজধানীর প্রগতি সরণির বসুন্ধরা গেটের সামনে থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
নর্থ সাউথসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন। ওই সড়কে সব যানবাহনের চলাচল বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে রাস্তায় অনেক যানবাহন আটকে আছে। আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন।
সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ কাকরাইলের আশপাশের এলাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা কাকরাইল মোড়ে সড়কে অবস্থান নেন। ফলে কাকরাইল-মালিবাগ বিজয়নগর পল্টন এলাকায় যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
সূত্র: বাংলাইনসাইডার