০৩:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যায় সিলেটে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ৭০০ কোটি টাকা

ছবি: শরীফ আহমদ

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরেছে অনেক পরিবার। তবে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামছে ধীরে। আজ শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় সব কটি পয়েন্টে পানির উচ্চতা কমেছে।

এদিকে, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে তিন দফায় আঘাত হানে বন্যা। এতে মৎস্য, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, তিন দফার বন্যায় সিলেট বিভাগের কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি খাতে প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৬০৫ কোটি টাকার বেশি। আর মৎস্য খাতে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জলাশয় ভেসে গেছে। এ খাতে ১০৭ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তথ্য আরও বলছে, সিলেট বিভাগে কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সিলেট জেলা, ক্ষতির পরিমাণ ৪২২ কোটি টাকা। অন্যদিকে মৎস্য খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জে, ৭২ কোটি টাকার বেশি।

কৃষি খাতের ক্ষতি

তিন দফার বন্যায় সিলেট বিভাগে ৩০ হাজার ৭৭২ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই লাখ দুই হাজার ১১৯ জন কৃষক। এর মধ্যে শুধুমাত্র সিলেট জেলার ২২ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ মে থেকে ৮ জুন পর্যন্ত প্রথম ধাপের বন্যায় সাত হাজার ৪৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়, ক্ষতি হয়েছে ১৪২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার। ১৪ জুন থেকে ২৪ জুন দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়, এতে ক্ষতি হয় ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকার।

সর্বশেষ ৩০ জুন থেকে তৃতীয় দফা বন্যায় ৪১২ হেক্টর ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে চার কোটি ২৪ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সিলেট জেলায় তিন দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এক লাখ ৭০ হাজার ২৭২ জন কৃষক।

মৌলভীবাজারে ৫ হাজার ৭৫৪.৩৫ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ১১৭ কোটি ২৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকার। সুনামগঞ্জে এক হাজার ৪৪১.২ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ৪৪ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকার। জেলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন আট হাজার ৩৫১ জন কৃষক। হবিগঞ্জে ৬১৬.৭ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ২১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকার। এ জেলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন সাত হাজার ২৫১ জন কৃষক।

মৎস্য খাতের ক্ষতি

তিন দফার বন্যায় মৎস্য খাতে বিভাগে পাঁচ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন মাছের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৮৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার। অন্যদিকে ৪৫৫ মেট্রিক টন মাছের পোনার ক্ষতি হয়, টাকার পরিমাণ ৯ কোটি ৫২ লাখ। এ ছাড়া মাছের জাল ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ১০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

মৎস্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের তথ্য বলছে, এ খাতে শুধু সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলাতেই ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদরে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ৭৯৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুরো জেলায় আট হাজার ২১টি পুকুর, দিঘি ও খামারের চার হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন মাছ ও ১৮৫ মেট্রিক টন পোনা ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৭২ কোটি ১২ লাখ ৬ হাজার টাকা।

এরপর সিলেট জেলার ৭৪টি পুকুর, দিঘি ও খামারের এক হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন মাছ ও ১৮১ মেট্রিক টন মাছের পোনা ভেসে গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৯ কোটি ২৯ লাখ টাকার। এছাড়াও জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৮ কোটি টাকার, জকিগঞ্জে ছয় কোটি ২০ লাখ টাকার এবং কোম্পানীগঞ্জে তিন কোটি ৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মৌলভীবাজারে ৭১৮টি পুকুর, দিঘি ও খামারের ২২৫ মেট্রিক টন মাছ ও ৮৯ মেট্রি টন মাছের পোনা বন্যায় ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার। জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলা শ্রীমঙ্গলে ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বড়লেখা উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকার।

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রথম দফার বন্যাতেই মৎস্য খাতে বড় ধাক্কা লেগেছে। মাছ, পোনা, অবকাঠামো সব ক্ষেত্রেই বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। পরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে।’


সর্বশেষ খবর বাঙালনিউজ এর গুগল নিউজ চ্যানেলে


 

বিষয়

বন্যায় সিলেটে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ৭০০ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৭:০১:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরেছে অনেক পরিবার। তবে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামছে ধীরে। আজ শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় সব কটি পয়েন্টে পানির উচ্চতা কমেছে।

এদিকে, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে তিন দফায় আঘাত হানে বন্যা। এতে মৎস্য, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, তিন দফার বন্যায় সিলেট বিভাগের কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি খাতে প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৬০৫ কোটি টাকার বেশি। আর মৎস্য খাতে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জলাশয় ভেসে গেছে। এ খাতে ১০৭ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তথ্য আরও বলছে, সিলেট বিভাগে কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সিলেট জেলা, ক্ষতির পরিমাণ ৪২২ কোটি টাকা। অন্যদিকে মৎস্য খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জে, ৭২ কোটি টাকার বেশি।

কৃষি খাতের ক্ষতি

তিন দফার বন্যায় সিলেট বিভাগে ৩০ হাজার ৭৭২ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই লাখ দুই হাজার ১১৯ জন কৃষক। এর মধ্যে শুধুমাত্র সিলেট জেলার ২২ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ মে থেকে ৮ জুন পর্যন্ত প্রথম ধাপের বন্যায় সাত হাজার ৪৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়, ক্ষতি হয়েছে ১৪২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার। ১৪ জুন থেকে ২৪ জুন দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়, এতে ক্ষতি হয় ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকার।

সর্বশেষ ৩০ জুন থেকে তৃতীয় দফা বন্যায় ৪১২ হেক্টর ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে চার কোটি ২৪ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সিলেট জেলায় তিন দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এক লাখ ৭০ হাজার ২৭২ জন কৃষক।

মৌলভীবাজারে ৫ হাজার ৭৫৪.৩৫ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ১১৭ কোটি ২৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকার। সুনামগঞ্জে এক হাজার ৪৪১.২ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ৪৪ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকার। জেলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন আট হাজার ৩৫১ জন কৃষক। হবিগঞ্জে ৬১৬.৭ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ২১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকার। এ জেলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন সাত হাজার ২৫১ জন কৃষক।

মৎস্য খাতের ক্ষতি

তিন দফার বন্যায় মৎস্য খাতে বিভাগে পাঁচ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন মাছের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৮৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার। অন্যদিকে ৪৫৫ মেট্রিক টন মাছের পোনার ক্ষতি হয়, টাকার পরিমাণ ৯ কোটি ৫২ লাখ। এ ছাড়া মাছের জাল ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ১০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

মৎস্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের তথ্য বলছে, এ খাতে শুধু সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলাতেই ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদরে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ৭৯৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুরো জেলায় আট হাজার ২১টি পুকুর, দিঘি ও খামারের চার হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন মাছ ও ১৮৫ মেট্রিক টন পোনা ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৭২ কোটি ১২ লাখ ৬ হাজার টাকা।

এরপর সিলেট জেলার ৭৪টি পুকুর, দিঘি ও খামারের এক হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন মাছ ও ১৮১ মেট্রিক টন মাছের পোনা ভেসে গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৯ কোটি ২৯ লাখ টাকার। এছাড়াও জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৮ কোটি টাকার, জকিগঞ্জে ছয় কোটি ২০ লাখ টাকার এবং কোম্পানীগঞ্জে তিন কোটি ৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মৌলভীবাজারে ৭১৮টি পুকুর, দিঘি ও খামারের ২২৫ মেট্রিক টন মাছ ও ৮৯ মেট্রি টন মাছের পোনা বন্যায় ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার। জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলা শ্রীমঙ্গলে ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বড়লেখা উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকার।

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রথম দফার বন্যাতেই মৎস্য খাতে বড় ধাক্কা লেগেছে। মাছ, পোনা, অবকাঠামো সব ক্ষেত্রেই বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। পরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে।’


সর্বশেষ খবর বাঙালনিউজ এর গুগল নিউজ চ্যানেলে