১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে বন্যা: বানের পানিই পানের পানি

সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার দুরে কচুয়ারপাড় গ্রাম। জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত এ গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা শুকনো মৌসুমেও খুব নাজুক থাকে। বর্ষা মৌসুমে সবার আগেই বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় গ্রামটি।

গত বৃহস্পতিবার গ্রামে গেলে দেখা গেছে, বন্যার পানিতে ডুবে আছে চারদিক। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ব্রীজ। যোগাযোগের একমাত্র ভরসা নৌকা। সেই ভরসার নৌকাও নেই সবার। তাই বেশিরভাগ সময়েই অন্যের নৌকার উপর ভরসা করতে হয় এই গ্রামের বাসিন্দাদের।  যার কারণে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন তারা। বিশেষ করে বানের পানিতেই রান্নাবান্না করছেন এমনকি পানের জন্যও ব্যবহার করছেন একই পানি। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গেছে কয়েকগুন এই গ্রামের বাসিন্দাদের। অভিযোগ রয়েছে, বন্যার পর থেকে সরকারি বেসরকারি কেউই তাদের খোঁজ নেননি। পাননি কোনো ত্রাণ সহায়তা ও জরুরি ওষুধপত্র।

সরেজমিন কচুয়ারপার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ বাড়ির চারপাশ পানিতে থই থই করছে। শিশু কিশোররা খেলছে এসব পানিতে। নৌকা যত সামনে যায় পানির গভীরতাও তত বেশি। এখনও বেশিরভাগ বাড়ির উঠানে বন্যার পানি রয়েছে। বন্যার পানি কমছেও খুবই ধীর গতিতে।  যত দূর যাওয়া হবে ততই মনে হবে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন এই গ্রামটি।

এই গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বশির মিয়া বলেন, বন্যার শুরু থেকেই মানবেতর জীবন পার করছেন গ্রামের বাসিন্দারা।  সড়ক থেকে দূরে হওয়ায় অনেকেই এই গ্রামে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আসতে পারেন না। গ্রামটি না চেনাও একটি কারণ। তাই নিজ দায়িত্ব নিয়ে পরিচিত অনেকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি গ্রামে যাতে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা যায়।

গ্রামের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেটে দুই দফা বন্যায় পুরো নিঃস্ব গ্রামের বাসিন্দারা।  আগের দফার বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আগেই আরেকদফা বন্যার ধাক্কায় পুরো গ্রাম প্লাবিত।  গ্রামের একমাত্র মসজিদও পুরো ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে পানি পানের সকল টিউবওয়েল। গ্রামে আশ্রয়কেন্দ্র ছোট হওয়ায় বানের পানি নিয়েই বাড়িতে বাস করছেন তারা।

বানের পানির দিকে আকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা বয়োজেষ্ঠ্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেন, প্রথম দফা বন্যায় বাড়িঘর তলিয়ে যায়। এরপর পানি পুরোপুরি শুকিয়ে আগেই ঈদের আগের দিন থেকে পানি বাড়তে থাকে। ঈদের দিন ভিটেটাও তলিয়ে যায়। ঘরের একটি কক্ষ কোনোমতে শুকনো ছিলো। সেই কক্ষেই স্ত্রী সন্তানদের আছি। খুব কষ্টে সময় পার করছি আমরা। বানের পানি পান করছি। এই পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।

একই গ্রামের উজ্বল আহমদ বলেন, বাড়িঘরের সঙ্গে তলিয়ে গেছে টিউবওয়েলটিও। যার কারণে বৃষ্টির পানিই ভরসা ছিল আমাদের। কিন্তু গতকাল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বাধ্য হয়ে বানের পানি পান করতে হচ্ছে।

সিলেটে বন্যা: বানের পানিই পানের পানি

প্রকাশিত: ১২:০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪

সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার দুরে কচুয়ারপাড় গ্রাম। জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত এ গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা শুকনো মৌসুমেও খুব নাজুক থাকে। বর্ষা মৌসুমে সবার আগেই বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় গ্রামটি।

গত বৃহস্পতিবার গ্রামে গেলে দেখা গেছে, বন্যার পানিতে ডুবে আছে চারদিক। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ব্রীজ। যোগাযোগের একমাত্র ভরসা নৌকা। সেই ভরসার নৌকাও নেই সবার। তাই বেশিরভাগ সময়েই অন্যের নৌকার উপর ভরসা করতে হয় এই গ্রামের বাসিন্দাদের।  যার কারণে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন তারা। বিশেষ করে বানের পানিতেই রান্নাবান্না করছেন এমনকি পানের জন্যও ব্যবহার করছেন একই পানি। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গেছে কয়েকগুন এই গ্রামের বাসিন্দাদের। অভিযোগ রয়েছে, বন্যার পর থেকে সরকারি বেসরকারি কেউই তাদের খোঁজ নেননি। পাননি কোনো ত্রাণ সহায়তা ও জরুরি ওষুধপত্র।

সরেজমিন কচুয়ারপার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ বাড়ির চারপাশ পানিতে থই থই করছে। শিশু কিশোররা খেলছে এসব পানিতে। নৌকা যত সামনে যায় পানির গভীরতাও তত বেশি। এখনও বেশিরভাগ বাড়ির উঠানে বন্যার পানি রয়েছে। বন্যার পানি কমছেও খুবই ধীর গতিতে।  যত দূর যাওয়া হবে ততই মনে হবে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন এই গ্রামটি।

এই গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বশির মিয়া বলেন, বন্যার শুরু থেকেই মানবেতর জীবন পার করছেন গ্রামের বাসিন্দারা।  সড়ক থেকে দূরে হওয়ায় অনেকেই এই গ্রামে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আসতে পারেন না। গ্রামটি না চেনাও একটি কারণ। তাই নিজ দায়িত্ব নিয়ে পরিচিত অনেকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি গ্রামে যাতে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা যায়।

গ্রামের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেটে দুই দফা বন্যায় পুরো নিঃস্ব গ্রামের বাসিন্দারা।  আগের দফার বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আগেই আরেকদফা বন্যার ধাক্কায় পুরো গ্রাম প্লাবিত।  গ্রামের একমাত্র মসজিদও পুরো ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে পানি পানের সকল টিউবওয়েল। গ্রামে আশ্রয়কেন্দ্র ছোট হওয়ায় বানের পানি নিয়েই বাড়িতে বাস করছেন তারা।

বানের পানির দিকে আকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা বয়োজেষ্ঠ্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেন, প্রথম দফা বন্যায় বাড়িঘর তলিয়ে যায়। এরপর পানি পুরোপুরি শুকিয়ে আগেই ঈদের আগের দিন থেকে পানি বাড়তে থাকে। ঈদের দিন ভিটেটাও তলিয়ে যায়। ঘরের একটি কক্ষ কোনোমতে শুকনো ছিলো। সেই কক্ষেই স্ত্রী সন্তানদের আছি। খুব কষ্টে সময় পার করছি আমরা। বানের পানি পান করছি। এই পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।

একই গ্রামের উজ্বল আহমদ বলেন, বাড়িঘরের সঙ্গে তলিয়ে গেছে টিউবওয়েলটিও। যার কারণে বৃষ্টির পানিই ভরসা ছিল আমাদের। কিন্তু গতকাল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বাধ্য হয়ে বানের পানি পান করতে হচ্ছে।