উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে সিলেট। জেলার সব উপজেলাবাসী পানিবন্দী জীবনযাপন করছেন। পানিতে ডুবে ও বিদ্যুতস্পৃষ্টে ঘটছে নানা দুর্ঘটনাও। অনেকে হারাচ্ছেন প্রাণ। এর মধ্যে আছে শিশুও। বন্যায় পর্যুদস্ত হয়ে পড়া সিলেট ও মৌলভীবাজারে বুধবার ও বৃহস্পতিবার- এই দুই দিনের মধ্যে পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশুসহ সাতজনের প্রাণহানির খবর এসেছে। একত্রে এসব খবর নিম্নরূপ:
সদরে প্রাণ হারাল ১ শিশু, ১ কিশোর
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে মৌলভীবাজার সদরের চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের শ্যামেরকোনা গ্রামে পানিতে ডুবে প্রাণ হারায় ১ শিশু ও ১ কিশোর। তাদের দুজনের পরিচয়- উপজেলার পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামের পচন মিয়ার ছেলে ছাদি মিয়া (৮) ও একই গ্রামের জমির মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (১৭)।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কিশোরের প্রাণহানি
একই দিন সকাল নয়টার দিকে গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি বগাইয়া হাওড়ে গ্রামের ক্লাব ঘরের সামনে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনে জড়িয়ে জুয়েল মিয়া নামে এক কিশোরের প্রাণহানি হয়েছে।
জুয়েল মিয়ার (১৭) বাবা ওই গ্রামের বাসিন্দা মান্নান মিয়া। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত জুয়েল পেশায় একজন দর্জি বলে জানান
নৌকাডুবি: নিখোঁজ যুবকের মরদেহ উদ্ধার
বুধবার রাত ১২টার দিকে উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের কাপনা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। তার নাম মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন (২৬)। সাখাওয়াত ফতেহপুর গ্রামের বাসিন্দা।
ফতেহপুরের লংপুর সড়ক এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ নৌকাটি ডুবে যায়। অন্যরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও সাখাওয়াত নৌকাসহ স্রোতের তোড়ে তলিয়ে যান। প্রায় ৪ ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
লুকোচুরি খেলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশুর মৃত্যু
বুধবার সন্ধ্যার পর বিছনাকান্দির হাদারপার বাজার সংলগ্ন উপরগ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশুর মৃত্যু হয়। অন্য শিশুদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নাজমিন আক্তার (১০) নামে শিশুটির। তার বাবা বিছনাকান্দি ইউনিয়নের উপরঘাম গ্রামের আব্দুলাহ মিয়া।
পানির পাম্পে সুইচ দিতে গিয়ে নারীর মৃত্যু
বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ঝালোপাড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়। মিনতি রানী (৪০) ঝালোপাড়ার নৃসিংহ জিউর আখড়ার পার্শ্ববর্তী বাসার বাসিন্দা।
মন্দিরের পানির পাম্পে সুইচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মিনতি রানী গুরুতর আহত হলে দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাছ ধরতে গিয়ে পিকআপ চালকের মৃত্যু
বুধবার বিকেলে জকিগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে স্রোতে ভেসে যাওয়া এক পিকআপ চালকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ওই ব্যক্তির পরিচয়- আব্দুল হালিম (৫৫)। তার বাবা মুহিদপুর গ্রামের মৃত রনই মিয়া। এই ঘটনা বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর এলাকায় ঘটেছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, নগর ও জেলার মোট ১৩০টি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকার ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৮৪ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে ১ হাজার ৬০২টি গ্রাম। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ২০ হাজার ৭৮৬ জন মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য রান্না করা ও শুকনা খাবারসহ বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে।