সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় জেলার সব কটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুরমা-কুশিয়ারা ও সারি-গোয়াইন নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত সোমবার থেকে সিলেটে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে গত ২৯ মে সিলেটে বন্যা হয়েছিল, সেটি ৮ জুনের পর অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়। এর রেশ না কাটতেই ফের বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বুধবার পর্যন্ত সিলেট মহানগরীর ২৩টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১২৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন বন্যা আক্রান্ত রয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে বন্যাক্রান্ত হয়েছেন ৫০ হাজার মানুষ। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৪৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে সিলেট মহানগরেও। এরই মধ্যে নগরের ২৩টি ওয়ার্ড তলিয়ে গেছে। আনুমানিক ১ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেনে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।
পাউবোর তথ্যমতে, বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত জেলার তিনিটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এক পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। আর কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০০ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০.২ সে.মি সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
আজ বুধবার সকালে নগরের বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপশহর, যতরপুর, তালতলা, জামতলা, ছড়ারপাড়, কামালগড়, মাছিমপুর, ঘাসিটুলা, তপোবন, শামীমাবাদ এলাকাসহ নিচু এলাকার অনেক বাসিন্দা ঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজন কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। অনেকে ঘরে কয়েক স্তরে ইট ফেলে সেখানে খাট তুলে কোনোরকমে আছে। অনেক বাসা, দোকানপাট পানিতে তলিয়ে আছে।
শাহজালাল উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমরপানি। জমে থাকা পানিতে ভাসছে বারোয়ারি ময়লা-আবর্জনা। এ পানি মাড়িয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা চলাচল করছে। রাস্তা ও নালা-নর্দমা একাকার হয়ে যাওয়ায় অনেক যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
তপোবন এলাকার বাসিন্দা শফি আহমদ বলেন, তার বাসায় এখনো পানি উঠেনি। তবে সড়কে হাঁটু সমান পানি। পানি মাড়িয়েই তাকে জরুরি প্রয়োজনে বের হতে হচ্ছে। তার মতো এই এলাকার অনেকের বাসার চুলা-নলকূপ ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
বন্যাদুর্গতরা জানান, অনেক বাসাবাড়ির চুলা পানির নিচে। ফলে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া পানিবন্দী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রসূতি ও নারীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন। এ ছাড়া বানের পানির সঙ্গে ভেসে আসছে ময়লা-আবর্জনা। এসব পানি থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, নগরের ২২টি ওয়ার্ডের অন্তত ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না করা ও শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১০০ মিলিমিটার। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এ ছাড়াও ভূমিধসের আশঙ্কার কথাও জানানো হয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতে বৃষ্টিপাত কমে এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।