০৩:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অতিথি পাখিতে মুখরিত লাল শাপলার বিল

পানির ওপরে ফুটে আছে হাজারো লাল শাপলা ফুল। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। সৌন্দর্যে অভিভূত হয় মন। এ যেন মাটির পৃথিবীতে এক খণ্ড স্বর্গ। সপ্তাহের সাত দিনেই পাখিডাকা ভোর থেকে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ লাল শাপলার বিল এলাকা। পাশের সড়কে দাঁড়িয়েও যতদূর চোখ যাবে, সবুজের মাঝে রক্তিম আভা হাতছানি দিচ্ছে। বিলের কালচে পানিতে সবুজ পাতার ওপর মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে লাল শাপলা। আর সেই ফুলের কলিতে ঠোকর দিয়ে, পানিতে মাছ ধরে আর স্নান করে সময় কাটাচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি। এমন মনোরম আর চোখ ধাঁধানো দৃশ্য দেখা মেলে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবির হাওরের লাল শাপলার বিলে। লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য্য আর পাখির কিচিরমিচির শব্দ মন কাড়ে পর্যটকদের। প্রতিদিন এমন সৌন্দর্য দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন হাজারো পর্যটক। নৌকা নিয়ে ডিবির হাওর ঘুরে লাল শাপলা ও অতিথি পাখি দেখছেন ভ্রমনপিপাসুরা। 
সম্প্রতি ডিবির হাওর ঘুরে দেখা গেছে, লাল শাপলার বিলটিতে অসংখ্য অতিথি পাখি। পাখিগুলোর মধ্যে আছে বালি হাঁস, শামুকখোল, মেটে মাথাটিটি, সাদা বক, কানি বক, মাছ রাঙ্গা, নীলকণ্ঠী, জল ময়ূর, সরালি হাঁসসহ অসংখ্য প্রজাতির পাখি। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন এ বছর তুলনামূলকভাবে জৈন্তাপুরের লাল শাপলা বিলে বেশি অতিথি পাখির দেখা মিলেছে। বিগত বছরগুলোতে কম পাখি দেখা গেলেও বর্তমানে বিলের পশ্চিম পাশের বাঁধ নির্মাণের কারণে পানি আটকে রাখায় অতিথি পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
লাল-সবুজে বির্স্তীর্ণ এ শাপলা বিলটি দূর থেকেই চোখ পড়ে পর্যটকদের। কাছে গেলে ধীরে ধীরে সবুজের পটভূমিতে লালের অস্তিত্ব আরো গাঢ় হয়ে খো দেয় বাহারি সৌন্দর্য। সূর্যের আভাকেও যেন হার মানিয়েছে। সাতলা বিলের পানিতে লতা পাতা গুল্ম ভরা শত সহস্র লাল ও সাদা শাপলা। এ যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশিকাঁথা। লাল শাপলা বিলে দেখা মিলেছে বালিহাঁস, শামুকখোল, মেটে মাথাটিটির ঝাঁকসহ অসংখ্য অতিথি পাখির। তারা পানিভর্তি বিলে ডুব দিচ্ছে, সাঁতার কাটছে এবং বিলজুড়ে নিরাপদে নড়াচড়া করছে। খানিক পর বিশ্রাম নিচ্ছে দল বেঁধে। পর্যটকেরাও এমন দৃশ্য উপভোগ করছেন নৌকায় চড়ে। যেন লাল শাপলার বিলগুলোতে পর্যটকদের স্বাগত জানাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিগুলো। সারাদিন দেখা মেলে অতিথি পাখির। বেশি চোখে পড়ে বালিহাঁস।
প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে এ বিলের নৌকার মাঝি হারুন মিয়া জানান, জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর লাল শাপলা বিল নাম পরিচিতি পাওয়ার আগে এবং পরে কিছু লোক পাখি শিকার করতেন। স্থানীয় সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মীদের তৎপরতায় বিলে প্রাণীর প্রতি দরদ বেড়েছে সবার। এখন আর পাখি শিকার হচ্ছে না। পাখিরা বিলে খাবার খেয়ে এখন নিরাপদেই থাকতে পারে। লাল শাপলার রাজ্যে যেন পাখির রাজ্যে রূপান্তর হচ্ছে।
এলাকার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, বিলটির পশ্চিম বাঁধটি আরো প্রশস্ত ও উঁচু করা প্রয়োজন। এছাড়া পাশের অবশিষ্ট ভূমি শাপলা বিলের সঙ্গে সংযুক্ত হলে ভালো হবে। বিলের পশ্চিম অংশের জায়গা দখল করে বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে- এগুলো শুরুতেই উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। বিলের বাকি অংশ যুক্ত করা হলে লাল শাপলা বিলটি তিন উপজেলার শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্র এবং নিরাপদ অতিথি পাখির আশ্রয় কেন্দ্র হবে। এছাড়া পাখির আগমন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।
জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরের চারটি বিল ২০১৪ সালে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর কাছে লাল শাপলার বিল হিসেবে স্থানীয় জাতীয় ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তুলে ধরা হয়। বর্তমানে বিলে ছায়া সৃষ্টির জন্য আমার সংগঠন কাজ করছে। এছাড়া বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে বিলের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে, অতিথি পাখিদের বাসস্থান তৈরি হবে। এতে আরো নতুন নতুন প্রজাতির অতিথি পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীর দেখা মিলবে।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, এ বিলের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে। পর্যটকদের জন্য ঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন আরো একটি পার্কিং স্থান নির্মাণ হবে, পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য এক কিলোমিটার রাস্তা আরসিসি পাকা করণের কাজ শুরু হবে। বিলের পশ্চিম পাশের বেড়ি বাঁধছিল না, তা করা হয়েছে। এখন বাঁধটি উঁচু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পাখির আবাসস্থল ও পর্যটকদের জন্য ছায়া সৃষ্টির লক্ষ্যে জৈন্তা ফটোগ্রাফি সোসাইটি মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে ও তাদের অর্থায়নে বনায়ন সৃষ্টি করা হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে বিলটি হয়ে উঠবে নিরাপদ অতিথি পাখির আবাসস্থল এবং উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
বিষয়

অতিথি পাখিতে মুখরিত লাল শাপলার বিল

প্রকাশিত: ১১:০৬:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
পানির ওপরে ফুটে আছে হাজারো লাল শাপলা ফুল। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। সৌন্দর্যে অভিভূত হয় মন। এ যেন মাটির পৃথিবীতে এক খণ্ড স্বর্গ। সপ্তাহের সাত দিনেই পাখিডাকা ভোর থেকে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ লাল শাপলার বিল এলাকা। পাশের সড়কে দাঁড়িয়েও যতদূর চোখ যাবে, সবুজের মাঝে রক্তিম আভা হাতছানি দিচ্ছে। বিলের কালচে পানিতে সবুজ পাতার ওপর মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে লাল শাপলা। আর সেই ফুলের কলিতে ঠোকর দিয়ে, পানিতে মাছ ধরে আর স্নান করে সময় কাটাচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি। এমন মনোরম আর চোখ ধাঁধানো দৃশ্য দেখা মেলে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবির হাওরের লাল শাপলার বিলে। লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য্য আর পাখির কিচিরমিচির শব্দ মন কাড়ে পর্যটকদের। প্রতিদিন এমন সৌন্দর্য দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন হাজারো পর্যটক। নৌকা নিয়ে ডিবির হাওর ঘুরে লাল শাপলা ও অতিথি পাখি দেখছেন ভ্রমনপিপাসুরা। 
সম্প্রতি ডিবির হাওর ঘুরে দেখা গেছে, লাল শাপলার বিলটিতে অসংখ্য অতিথি পাখি। পাখিগুলোর মধ্যে আছে বালি হাঁস, শামুকখোল, মেটে মাথাটিটি, সাদা বক, কানি বক, মাছ রাঙ্গা, নীলকণ্ঠী, জল ময়ূর, সরালি হাঁসসহ অসংখ্য প্রজাতির পাখি। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন এ বছর তুলনামূলকভাবে জৈন্তাপুরের লাল শাপলা বিলে বেশি অতিথি পাখির দেখা মিলেছে। বিগত বছরগুলোতে কম পাখি দেখা গেলেও বর্তমানে বিলের পশ্চিম পাশের বাঁধ নির্মাণের কারণে পানি আটকে রাখায় অতিথি পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
লাল-সবুজে বির্স্তীর্ণ এ শাপলা বিলটি দূর থেকেই চোখ পড়ে পর্যটকদের। কাছে গেলে ধীরে ধীরে সবুজের পটভূমিতে লালের অস্তিত্ব আরো গাঢ় হয়ে খো দেয় বাহারি সৌন্দর্য। সূর্যের আভাকেও যেন হার মানিয়েছে। সাতলা বিলের পানিতে লতা পাতা গুল্ম ভরা শত সহস্র লাল ও সাদা শাপলা। এ যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশিকাঁথা। লাল শাপলা বিলে দেখা মিলেছে বালিহাঁস, শামুকখোল, মেটে মাথাটিটির ঝাঁকসহ অসংখ্য অতিথি পাখির। তারা পানিভর্তি বিলে ডুব দিচ্ছে, সাঁতার কাটছে এবং বিলজুড়ে নিরাপদে নড়াচড়া করছে। খানিক পর বিশ্রাম নিচ্ছে দল বেঁধে। পর্যটকেরাও এমন দৃশ্য উপভোগ করছেন নৌকায় চড়ে। যেন লাল শাপলার বিলগুলোতে পর্যটকদের স্বাগত জানাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিগুলো। সারাদিন দেখা মেলে অতিথি পাখির। বেশি চোখে পড়ে বালিহাঁস।
প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে এ বিলের নৌকার মাঝি হারুন মিয়া জানান, জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর লাল শাপলা বিল নাম পরিচিতি পাওয়ার আগে এবং পরে কিছু লোক পাখি শিকার করতেন। স্থানীয় সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মীদের তৎপরতায় বিলে প্রাণীর প্রতি দরদ বেড়েছে সবার। এখন আর পাখি শিকার হচ্ছে না। পাখিরা বিলে খাবার খেয়ে এখন নিরাপদেই থাকতে পারে। লাল শাপলার রাজ্যে যেন পাখির রাজ্যে রূপান্তর হচ্ছে।
এলাকার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, বিলটির পশ্চিম বাঁধটি আরো প্রশস্ত ও উঁচু করা প্রয়োজন। এছাড়া পাশের অবশিষ্ট ভূমি শাপলা বিলের সঙ্গে সংযুক্ত হলে ভালো হবে। বিলের পশ্চিম অংশের জায়গা দখল করে বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে- এগুলো শুরুতেই উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। বিলের বাকি অংশ যুক্ত করা হলে লাল শাপলা বিলটি তিন উপজেলার শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্র এবং নিরাপদ অতিথি পাখির আশ্রয় কেন্দ্র হবে। এছাড়া পাখির আগমন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।
জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরের চারটি বিল ২০১৪ সালে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর কাছে লাল শাপলার বিল হিসেবে স্থানীয় জাতীয় ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তুলে ধরা হয়। বর্তমানে বিলে ছায়া সৃষ্টির জন্য আমার সংগঠন কাজ করছে। এছাড়া বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে বিলের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে, অতিথি পাখিদের বাসস্থান তৈরি হবে। এতে আরো নতুন নতুন প্রজাতির অতিথি পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীর দেখা মিলবে।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, এ বিলের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে। পর্যটকদের জন্য ঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন আরো একটি পার্কিং স্থান নির্মাণ হবে, পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য এক কিলোমিটার রাস্তা আরসিসি পাকা করণের কাজ শুরু হবে। বিলের পশ্চিম পাশের বেড়ি বাঁধছিল না, তা করা হয়েছে। এখন বাঁধটি উঁচু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পাখির আবাসস্থল ও পর্যটকদের জন্য ছায়া সৃষ্টির লক্ষ্যে জৈন্তা ফটোগ্রাফি সোসাইটি মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে ও তাদের অর্থায়নে বনায়ন সৃষ্টি করা হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে বিলটি হয়ে উঠবে নিরাপদ অতিথি পাখির আবাসস্থল এবং উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।