০৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাতের আঁধারে ‘সাদা পাথর’ লুট, হুমকির মুখে পর্যটন কেন্দ্র

»দিনে দুপুরে চুরি হয়ে যাচ্ছে সাদা পাথর
»জড়িত পুলিশ, বিজিবি ও কথিত সংবাদকর্মী
»হুমকির মুখে পর্যটন কেন্দ্র সাদা পাথর

সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে রয়েছে সাদা পাথর নামক পর্যটন কেন্দ্র। এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুভ্র বিছানা সাজিয়ে আছে অসংখ্য সাদাপাথর। মাঝখানে স্বচ্ছ নীল জ্বল, চারদিকে ঘিরে আছে অসংখ্য অগণিত ছোট-বড় পাহাড়। পাহাড়ের উপরে যেন আছড়ে পড়েছে মেঘ। এছাড়াও চারপাশে আছে সবুজ প্রকৃতি। অপূর্ব এ স্থানটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আনন্দ ভ্রমণ করতে আসেন। কিন্তু পাথর উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও কয়েকমাস ধরে রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যাচ্ছে এখানকার সাদাপাথর।

প্রতিনিয়ত সাদাপাথর চুরি হওয়ার ফলে সৌন্দর্য হারাচ্ছে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা। ওই এলাকায় বিজিবির ক্যাম্প রয়েছে, রয়েছে রোপওয়েতে (বাংকারে) আরএনবি । অপরদিকে ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর নামক এলাকায়ও রয়েছে বিজিবির অস্থায়ী চেকপোস্ট, ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি, কালাইরাগ বিজিবি ক্যাম্প। এরপরে ধলাই সেতু সংলগ্ন এলাকায় কালাসাদক ক্যাম্প। এতোকিছু থাকার পরও সাদাপাথর চুরি হয়। সবাই যেখানে সাধু, তাহলে কী ভুত? এসে রাতের আধাঁরে খেয়ে সাফ করছে এসব পাথর! প্রশ্ন জনমনে।

প্রশ্নের উত্তরের খোঁজ করতে সরজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, টানা বন্যা ও কারফিউয়ের কারনে সাদা পাথর পর্যটন স্পট বন্ধ থাকে, সেই সুযোগে ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির কিছু অসাধু সদস্যের যোগসাজশেই একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চুরি করে এসব পাথর । রাতের আধারে ম্যানেজ পদ্ধতি অবলম্বন করে বারকি নৌকা দিয়ে সাদা পাথর পর্যটন স্পট থেকে পাথর এনে নদীর পশ্চিম পাড়ে ভোলাগঞ্জ গুচ্ছগ্রাম এলাকায় নদীর কিনারে রাখা হয়। এবং টুকের বাজার ইসলামপুর ঈদগাহ বরাবর নদীর পাড়ে জমা করে।  অপরদিকে নদীর পূর্বপাড়ের কালাইরাগ, নতুন বাজার, দয়ার বাজার, লিলাইবাজার, কলাবাড়ী (সুজনের ঘাট) নামক স্থানের বিভিন্ন যায়গায় পাথর স্তুপ করে রাখে।

সকাল হওয়ার পূর্বে স্তুপাকারে রাখা সেই পাথর পে-লোডার মেশিন দিয়ে ট্রাকে বুঝাই করে কিছু পাথর ধুপাগোল নামক এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং কিছু স্থানীয় স্টোন ক্রাশার মিলে ভাঙ্গা হয় । যে সব পাথর ট্রাকে বুঝাই করা সম্ভব হয়না সেগুলো ইঞ্জিন চালিত ট্রলি ও ট্রাক্টর দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয় এবং সকাল হয়ে গেলে অবশিষ্ট যে পাথর সরানো যায়না সেগুলো নদীর কিনারেই পরে থাকে। সরজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। এবং সরাসরি সাদা পাথরে গিয়ে দেখা যায় দিনে দুপুরে বারকি নৌকা দিয়ে সাদা পাথর নিয়ে আসছে কিছু দুষ্কৃতকারীরা এবং একজন পুলিশ সদস্যকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরকম একটি ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রায়ই দিনে ও রাতের আঁধারে সাদাপাথর চুরি করছে একটি মহল। নেপথ্যে রয়েছেন ধলাই নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের বেশ-কয়েকজন প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ী ও কথিত কয়েকজন সাংবাদিক। সাদা পাথর স্পট থেকে পাথর আনার জন্য নৌকা প্রতি ৫শত টাকা করে চাঁদা দিয়ে পুলিশ’কে ম্যানেজ করেন বারকি শ্রমিক ও পাথর ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে জমা করা পাথর সরানোর জন্য ম্যানেজ পদ্ধতি অবলম্বন করেন ট্রাক প্রতি মোটা অংকের এমাউন্ট দিয়ে।

ইতিপূর্বে  উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকতা শিপলু কুমার দে বাদী হয়ে পাথর চুরির সাথে সংশ্লিষ্টদের নামে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামীরা হলেন- উপজেলার এরশাদ মিয়া, শাহাবুদ্দিন, দুলাল মিয়া, রাসেল আহমদ, মঈনুদ্দিন, তোয়াহিদ মিয়া, সাজ্জাদ মিয়া, রফিক মিয়া, আব্দুল হান্নান, আমিন রশিদ, ফারুকুজ্জামান, লায়েক মাহমুদ, আল সুবেল, সমর মিয়া, ইকবাল মিয়া, রাজু আহমদ এবং আব্দুল আহাদ। এদের মধ্যে অনেকেই আদালত থেকে জামিন নিয়ে পুনরায় আরো বেশি আগ্রাসী হয়ে শুরু করেছেন পাথর লুটপাট।

কোম্পানীগঞ্জ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জুনায়েদ ইভান জানান, গেলো ২৪ জুলাই রাত ২ ঘটিকায় ইসলামপুর শাহী ইদগাহ সংলগ্ন ধলাই নদীর পাড়ে সাদা পাথর থেকে পাথর চুরি করে এনে রাখে পাথর খেকুরা। এসময় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর উপস্থিতি ঠের পেয়ে পালিয়ে যায় তারা। তখন ছাত্রলীগ পুলিশকে খবর দিয়ে প্রায় ৩০০ ফুট পাথর ধরিয়ে দেয়। অবৈধ কার্য়কলাপের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ ছাত্রলীগ অতীতের ন্যয় সর্বদা সোচ্ছার থাকবে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার নবাগত ওসি মোহাম্মদ বদিউজ্জামান বলেন, আমি দায়িত্বে আসার পর থেকে পুলিশ নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে। পাথর চুরি বন্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি, সাদা পাথর থেকে একটি বালুও যেতে দেওয়া হবেনা৷

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজ আবিদা সুলতানা বলেন, পাথর চুরি বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ওসিসহ আমরা স্ব-শরীরে স্পট পরিদর্শন করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আশা করছি শিগ্রই পাথর চুরি বন্ধে পজেটিভ ফলাফল আমরা দিতে পারবো।

রাতের আঁধারে ‘সাদা পাথর’ লুট, হুমকির মুখে পর্যটন কেন্দ্র

প্রকাশিত: ১১:০৬:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪
»দিনে দুপুরে চুরি হয়ে যাচ্ছে সাদা পাথর
»জড়িত পুলিশ, বিজিবি ও কথিত সংবাদকর্মী
»হুমকির মুখে পর্যটন কেন্দ্র সাদা পাথর

সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে রয়েছে সাদা পাথর নামক পর্যটন কেন্দ্র। এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুভ্র বিছানা সাজিয়ে আছে অসংখ্য সাদাপাথর। মাঝখানে স্বচ্ছ নীল জ্বল, চারদিকে ঘিরে আছে অসংখ্য অগণিত ছোট-বড় পাহাড়। পাহাড়ের উপরে যেন আছড়ে পড়েছে মেঘ। এছাড়াও চারপাশে আছে সবুজ প্রকৃতি। অপূর্ব এ স্থানটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আনন্দ ভ্রমণ করতে আসেন। কিন্তু পাথর উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও কয়েকমাস ধরে রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যাচ্ছে এখানকার সাদাপাথর।

প্রতিনিয়ত সাদাপাথর চুরি হওয়ার ফলে সৌন্দর্য হারাচ্ছে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা। ওই এলাকায় বিজিবির ক্যাম্প রয়েছে, রয়েছে রোপওয়েতে (বাংকারে) আরএনবি । অপরদিকে ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর নামক এলাকায়ও রয়েছে বিজিবির অস্থায়ী চেকপোস্ট, ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি, কালাইরাগ বিজিবি ক্যাম্প। এরপরে ধলাই সেতু সংলগ্ন এলাকায় কালাসাদক ক্যাম্প। এতোকিছু থাকার পরও সাদাপাথর চুরি হয়। সবাই যেখানে সাধু, তাহলে কী ভুত? এসে রাতের আধাঁরে খেয়ে সাফ করছে এসব পাথর! প্রশ্ন জনমনে।

প্রশ্নের উত্তরের খোঁজ করতে সরজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, টানা বন্যা ও কারফিউয়ের কারনে সাদা পাথর পর্যটন স্পট বন্ধ থাকে, সেই সুযোগে ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির কিছু অসাধু সদস্যের যোগসাজশেই একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চুরি করে এসব পাথর । রাতের আধারে ম্যানেজ পদ্ধতি অবলম্বন করে বারকি নৌকা দিয়ে সাদা পাথর পর্যটন স্পট থেকে পাথর এনে নদীর পশ্চিম পাড়ে ভোলাগঞ্জ গুচ্ছগ্রাম এলাকায় নদীর কিনারে রাখা হয়। এবং টুকের বাজার ইসলামপুর ঈদগাহ বরাবর নদীর পাড়ে জমা করে।  অপরদিকে নদীর পূর্বপাড়ের কালাইরাগ, নতুন বাজার, দয়ার বাজার, লিলাইবাজার, কলাবাড়ী (সুজনের ঘাট) নামক স্থানের বিভিন্ন যায়গায় পাথর স্তুপ করে রাখে।

সকাল হওয়ার পূর্বে স্তুপাকারে রাখা সেই পাথর পে-লোডার মেশিন দিয়ে ট্রাকে বুঝাই করে কিছু পাথর ধুপাগোল নামক এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং কিছু স্থানীয় স্টোন ক্রাশার মিলে ভাঙ্গা হয় । যে সব পাথর ট্রাকে বুঝাই করা সম্ভব হয়না সেগুলো ইঞ্জিন চালিত ট্রলি ও ট্রাক্টর দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয় এবং সকাল হয়ে গেলে অবশিষ্ট যে পাথর সরানো যায়না সেগুলো নদীর কিনারেই পরে থাকে। সরজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। এবং সরাসরি সাদা পাথরে গিয়ে দেখা যায় দিনে দুপুরে বারকি নৌকা দিয়ে সাদা পাথর নিয়ে আসছে কিছু দুষ্কৃতকারীরা এবং একজন পুলিশ সদস্যকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরকম একটি ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রায়ই দিনে ও রাতের আঁধারে সাদাপাথর চুরি করছে একটি মহল। নেপথ্যে রয়েছেন ধলাই নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের বেশ-কয়েকজন প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ী ও কথিত কয়েকজন সাংবাদিক। সাদা পাথর স্পট থেকে পাথর আনার জন্য নৌকা প্রতি ৫শত টাকা করে চাঁদা দিয়ে পুলিশ’কে ম্যানেজ করেন বারকি শ্রমিক ও পাথর ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে জমা করা পাথর সরানোর জন্য ম্যানেজ পদ্ধতি অবলম্বন করেন ট্রাক প্রতি মোটা অংকের এমাউন্ট দিয়ে।

ইতিপূর্বে  উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকতা শিপলু কুমার দে বাদী হয়ে পাথর চুরির সাথে সংশ্লিষ্টদের নামে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামীরা হলেন- উপজেলার এরশাদ মিয়া, শাহাবুদ্দিন, দুলাল মিয়া, রাসেল আহমদ, মঈনুদ্দিন, তোয়াহিদ মিয়া, সাজ্জাদ মিয়া, রফিক মিয়া, আব্দুল হান্নান, আমিন রশিদ, ফারুকুজ্জামান, লায়েক মাহমুদ, আল সুবেল, সমর মিয়া, ইকবাল মিয়া, রাজু আহমদ এবং আব্দুল আহাদ। এদের মধ্যে অনেকেই আদালত থেকে জামিন নিয়ে পুনরায় আরো বেশি আগ্রাসী হয়ে শুরু করেছেন পাথর লুটপাট।

কোম্পানীগঞ্জ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জুনায়েদ ইভান জানান, গেলো ২৪ জুলাই রাত ২ ঘটিকায় ইসলামপুর শাহী ইদগাহ সংলগ্ন ধলাই নদীর পাড়ে সাদা পাথর থেকে পাথর চুরি করে এনে রাখে পাথর খেকুরা। এসময় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর উপস্থিতি ঠের পেয়ে পালিয়ে যায় তারা। তখন ছাত্রলীগ পুলিশকে খবর দিয়ে প্রায় ৩০০ ফুট পাথর ধরিয়ে দেয়। অবৈধ কার্য়কলাপের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ ছাত্রলীগ অতীতের ন্যয় সর্বদা সোচ্ছার থাকবে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার নবাগত ওসি মোহাম্মদ বদিউজ্জামান বলেন, আমি দায়িত্বে আসার পর থেকে পুলিশ নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে। পাথর চুরি বন্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি, সাদা পাথর থেকে একটি বালুও যেতে দেওয়া হবেনা৷

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজ আবিদা সুলতানা বলেন, পাথর চুরি বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ওসিসহ আমরা স্ব-শরীরে স্পট পরিদর্শন করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আশা করছি শিগ্রই পাথর চুরি বন্ধে পজেটিভ ফলাফল আমরা দিতে পারবো।