০৮:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা

বিশেষ প্রতিনিধি:

প্রায় এক বছর ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ। অফিসে কেউ আসেন, কেউ না। কার চাকরি আছে আর কার নেই; তাও জানা নেই। অফিসে আসলেও হাতে থাকে না কোনো কাজ। আর না আসলেও নেই জবাবদীহিতা। নেই কোনো প্রোটোকল। এমন যাচ্ছেতাই অবস্থা সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়)।

পথচলার শুরুতেই নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে সিলেটের প্রথম এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। দীর্ঘ এক বছর ধরে এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা চললেও তা নিরসনের উদ্যোগ নিচ্ছেন না প্রশাসন। সম্প্রতি দুই দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

এমন পরিস্থিতিতে চাকরি স্থায়ীকরণ, বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও কর্মস্থলে কর্মচারীদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ ৩ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করছেন তারা। সবশেষ (২৭ সেপ্টেম্বর) প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। এর আগে সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ও আগেরদিন রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) এ কর্মসূচি পালন করে তারা। দুই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৮৩ জন কর্মচারী স্বাক্ষর প্রদান করেছেন। আন্দোলনরতরা জানিয়েছেন অনতিবিলম্বে ৩ দফা দাবিতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

জানা গেছে, দেশের চতুর্থ এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা ২০১৮ সালে। সে বছরের ১৪ নভেম্বর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়। পরিচালক (অর্থ) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) নঈমুল হক চৌধুরীকে। পরবর্তীতে তিনি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পান। নিজস্ব ক্যাম্পাস ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই এ দুজনের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। অনুমোদিত ১১২টি পদের বিপরীতে ২৪২জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেন এ দুই কর্মকর্তা। জনবল নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে।

এমন পরিস্থতিতে গত বছরের আগস্ট মাসে চাকরি হারান নঈমুল হক চৌধুরী। পরবর্তীতে একই বছরের অক্টোবরে মেয়াদ শেষ হওয়ায় চলে যান উপাচার্য মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী। এ দুই চৌধুরীর অধ্যায়ের অবসানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন প্রফেসর ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। আর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মোহাম্মদ ফজলুর রহমান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভাইস চ্যান্সেলর চলেন নিজের গতিতে। সপ্তাহে দুইদিন এসে হাজিরা দিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোনো সপ্তাহে দেখাই মিলে না তাঁর। আর রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করলেও তাকে মানেন না কেউ। অধীনস্তদের তদারকিতে তাঁরও মন নেই। বর্তমানে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

এ দুই কর্মকর্তা দায়িত্ব গ্রহণের একবছর পেরিয়ে গেলেও অচলাবস্থার অবসান ঘটছে না। উল্টো একবছর ধরে বন্ধ রয়েছে বেতন-ভাতা। মানবেতর জীবনযাপন করছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। সমস্যা সমাধানে কয়েক দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হচ্ছে না। এদিকে দীর্ঘদিন যাবত বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এখানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বেতন-ভাতা নিয়মিত করণ ও চাকুরি স্থায়ী করণের দাবি জানিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বারবার ভাইস চ্যান্সেলরের সাথে সাক্ষাৎ করলেও তিনি কেবল আশ্বস্তই করে যাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সিমেবি কর্মচারী পরিষদ’ এ কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে।

সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী পরিষদ এর সদস্য সচিব নাদিম সীমান্ত জানান, ৩ দফা দাবি আদায়ে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমারা একের পর এক কর্মসূচি চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

তিনি জানান, আমাদের দাবিগুলো হলো নিঃশর্তে সকল পর্যায়ের কর্মচারীদের চাকুরী স্থায়ীকরণ। প্রায় ১ বছর যাবত বেতন বন্ধ থাকায় কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই অনতিবিলম্বে সকল বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধসহ বেতন-ভাতা নিয়মিত করা এবং কর্মস্থলে কর্মচারীদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবিলম্বে নিজস্ব স্থায়ী জায়গায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিষয়

সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা

প্রকাশিত: ০১:২২:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি:

প্রায় এক বছর ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ। অফিসে কেউ আসেন, কেউ না। কার চাকরি আছে আর কার নেই; তাও জানা নেই। অফিসে আসলেও হাতে থাকে না কোনো কাজ। আর না আসলেও নেই জবাবদীহিতা। নেই কোনো প্রোটোকল। এমন যাচ্ছেতাই অবস্থা সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়)।

পথচলার শুরুতেই নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে সিলেটের প্রথম এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। দীর্ঘ এক বছর ধরে এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা চললেও তা নিরসনের উদ্যোগ নিচ্ছেন না প্রশাসন। সম্প্রতি দুই দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

এমন পরিস্থিতিতে চাকরি স্থায়ীকরণ, বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও কর্মস্থলে কর্মচারীদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ ৩ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করছেন তারা। সবশেষ (২৭ সেপ্টেম্বর) প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। এর আগে সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ও আগেরদিন রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) এ কর্মসূচি পালন করে তারা। দুই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৮৩ জন কর্মচারী স্বাক্ষর প্রদান করেছেন। আন্দোলনরতরা জানিয়েছেন অনতিবিলম্বে ৩ দফা দাবিতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

জানা গেছে, দেশের চতুর্থ এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা ২০১৮ সালে। সে বছরের ১৪ নভেম্বর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়। পরিচালক (অর্থ) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) নঈমুল হক চৌধুরীকে। পরবর্তীতে তিনি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পান। নিজস্ব ক্যাম্পাস ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই এ দুজনের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। অনুমোদিত ১১২টি পদের বিপরীতে ২৪২জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেন এ দুই কর্মকর্তা। জনবল নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে।

এমন পরিস্থতিতে গত বছরের আগস্ট মাসে চাকরি হারান নঈমুল হক চৌধুরী। পরবর্তীতে একই বছরের অক্টোবরে মেয়াদ শেষ হওয়ায় চলে যান উপাচার্য মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী। এ দুই চৌধুরীর অধ্যায়ের অবসানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন প্রফেসর ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। আর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মোহাম্মদ ফজলুর রহমান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভাইস চ্যান্সেলর চলেন নিজের গতিতে। সপ্তাহে দুইদিন এসে হাজিরা দিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোনো সপ্তাহে দেখাই মিলে না তাঁর। আর রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করলেও তাকে মানেন না কেউ। অধীনস্তদের তদারকিতে তাঁরও মন নেই। বর্তমানে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

এ দুই কর্মকর্তা দায়িত্ব গ্রহণের একবছর পেরিয়ে গেলেও অচলাবস্থার অবসান ঘটছে না। উল্টো একবছর ধরে বন্ধ রয়েছে বেতন-ভাতা। মানবেতর জীবনযাপন করছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। সমস্যা সমাধানে কয়েক দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হচ্ছে না। এদিকে দীর্ঘদিন যাবত বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এখানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বেতন-ভাতা নিয়মিত করণ ও চাকুরি স্থায়ী করণের দাবি জানিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বারবার ভাইস চ্যান্সেলরের সাথে সাক্ষাৎ করলেও তিনি কেবল আশ্বস্তই করে যাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সিমেবি কর্মচারী পরিষদ’ এ কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে।

সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী পরিষদ এর সদস্য সচিব নাদিম সীমান্ত জানান, ৩ দফা দাবি আদায়ে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমারা একের পর এক কর্মসূচি চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

তিনি জানান, আমাদের দাবিগুলো হলো নিঃশর্তে সকল পর্যায়ের কর্মচারীদের চাকুরী স্থায়ীকরণ। প্রায় ১ বছর যাবত বেতন বন্ধ থাকায় কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই অনতিবিলম্বে সকল বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধসহ বেতন-ভাতা নিয়মিত করা এবং কর্মস্থলে কর্মচারীদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবিলম্বে নিজস্ব স্থায়ী জায়গায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।