১১:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিস্তা-গঙ্গার পানি বন্টন নিয়ে মোদিকে মমতার হুঁশিয়ারি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি সমঝোতা স্মারক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদিকে লিখেছেন চিঠি। তিস্তা ও ফারাক্কার পানি বাংলাদেশকে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিরোধিতা করেছেন তিনি। একতরফা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে ভারত জুড়ে আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “কেন্দ্র যদি না শোনে, একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তবে বাংলাজুড়ে আন্দোলন চলবে, দেশজুড়ে আন্দোলন চলবে।”

সোমবার (২৪ জুন) রাজ্যের সচিবালয় নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে তিস্তা-ফরাক্কার জল বণ্টন নিয়ে কেন্দ্রীয় পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। মমতা বলেন, “পানির আরেক নাম জীবন। তারা (কেন্দ্র) জানে না যে উত্তরবঙ্গের একাংশের মানুষ আগামী দিন খাবার পানি পাবে না। তিস্তায় পানি নেই। ভাবছে গায়ের জোরে। উত্তরবঙ্গ থেকে জিতেছি বলে উত্তরবঙ্গের মানুষকে বঞ্চিত করবো।”

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার পানি বিক্রি করে দিচ্ছে। সিকিম যখন তিস্তা নদীর ওপর ১৪টি হাইড্রো পাওয়ার (জল বিদ্যুৎ) করেছে তখন তারা (কেন্দ্রীয় সরকার) চোখে দেখেনি। আর এখন বলছে সব পানি দিয়ে দাও। কিন্তু দিতে তো আপত্তি নেই। আমার থাকলে তো দেবো। আমি বন্ধুত্ব করতে চাই কিন্তু বাংলাকে বিক্রি করে দেওয়ার স্বার্থে নয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে যথেষ্ট ভালোবাসি। তাদের জন্য আমরা ছিটমহল করে দিয়েছি। আমি নিজে যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখন ভারত-বাংলাদেশ রেলওয়ে সার্ভিস করে দিয়েছি। বাস সার্ভিস পরিষেবা চালু করেছি।”

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাকে বঞ্চনা ও ভাতে মারার অভিযোগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য ভাতে মারার চক্রান্ত চলছে। আবার বলছে তিস্তার পানি দেবে।”

মমতা জানান, “বাংলাকে বঞ্চনা ও বাংলার পানি বিক্রি দেওয়ার অর্থ হলো আগামী দিন গঙ্গার ভাঙ্গন আরও বাড়বে, মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে। এমনকি ফারাক্কায় ড্রেজিং করে না। ফলে কলকাতা বন্দর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, লাখ লাখ মানুষের জীবিকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ফারাক্কা নিয়ে আবার চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে, আমাদের জানানো হয়নি। বাংলাকে বাদ দিয়ে আগেই এই বিষয়গুলো নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। আর ফারাক্কা চুক্তির কারণে আমরা ‘৯৬ সাল থেকে কষ্ট ভোগ করছি। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যে রুপি দেওয়ার কথা ছিল তা দেওয়া হয়নি।”

আত্রাই নদীর ওপর বাংলাদেশের সীমানায় বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে মমতা বলেন, “আত্রাই নদী দিয়ে এক সময় পানি আসত। তখন বালুরঘাট তথা গোটা দক্ষিণ দিনাজপুুরবাসী সেই পানি পেত। কিন্তু চীনকে দিয়ে বাংলাদেশ সেখানে একটা বাঁধ তৈরি করে পুরো পানিটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি বারবার চিঠি দিয়ে এর প্রতিবাদ করেছি।”

নরেন্দ্র মোদিকে লেখা চিঠিতে মমতা বলেছেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) সম্প্রতি ভারত সফরে এসেছিলেন সেই প্রসঙ্গে আপনাকে লিখছি। গঙ্গা ও তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে আপনাদের মধ্যে। কিন্তু রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে এই ধরনের আলোচনা প্রত্যাশিত নয়, সেটা গ্রহণযোগ্যও নয়।”

তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, “আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভৌগোলিকভাবে এই সম্পর্ক। সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও আমাদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। আমি বাংলাদেশের মানুষকে শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। কিন্তু পানি অত্যন্ত দামি সম্পদ। এটা মানুষের লাইফলাইন। এই সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে আমরা আপোস করতে পারি না। এই ধরনের চুক্তি হলে বাংলার মানুষ সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন

তিস্তা-গঙ্গার পানি বন্টন নিয়ে মোদিকে মমতার হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ০১:২৫:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি সমঝোতা স্মারক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদিকে লিখেছেন চিঠি। তিস্তা ও ফারাক্কার পানি বাংলাদেশকে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিরোধিতা করেছেন তিনি। একতরফা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে ভারত জুড়ে আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “কেন্দ্র যদি না শোনে, একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তবে বাংলাজুড়ে আন্দোলন চলবে, দেশজুড়ে আন্দোলন চলবে।”

সোমবার (২৪ জুন) রাজ্যের সচিবালয় নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে তিস্তা-ফরাক্কার জল বণ্টন নিয়ে কেন্দ্রীয় পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। মমতা বলেন, “পানির আরেক নাম জীবন। তারা (কেন্দ্র) জানে না যে উত্তরবঙ্গের একাংশের মানুষ আগামী দিন খাবার পানি পাবে না। তিস্তায় পানি নেই। ভাবছে গায়ের জোরে। উত্তরবঙ্গ থেকে জিতেছি বলে উত্তরবঙ্গের মানুষকে বঞ্চিত করবো।”

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার পানি বিক্রি করে দিচ্ছে। সিকিম যখন তিস্তা নদীর ওপর ১৪টি হাইড্রো পাওয়ার (জল বিদ্যুৎ) করেছে তখন তারা (কেন্দ্রীয় সরকার) চোখে দেখেনি। আর এখন বলছে সব পানি দিয়ে দাও। কিন্তু দিতে তো আপত্তি নেই। আমার থাকলে তো দেবো। আমি বন্ধুত্ব করতে চাই কিন্তু বাংলাকে বিক্রি করে দেওয়ার স্বার্থে নয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে যথেষ্ট ভালোবাসি। তাদের জন্য আমরা ছিটমহল করে দিয়েছি। আমি নিজে যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখন ভারত-বাংলাদেশ রেলওয়ে সার্ভিস করে দিয়েছি। বাস সার্ভিস পরিষেবা চালু করেছি।”

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাকে বঞ্চনা ও ভাতে মারার অভিযোগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য ভাতে মারার চক্রান্ত চলছে। আবার বলছে তিস্তার পানি দেবে।”

মমতা জানান, “বাংলাকে বঞ্চনা ও বাংলার পানি বিক্রি দেওয়ার অর্থ হলো আগামী দিন গঙ্গার ভাঙ্গন আরও বাড়বে, মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে। এমনকি ফারাক্কায় ড্রেজিং করে না। ফলে কলকাতা বন্দর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, লাখ লাখ মানুষের জীবিকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ফারাক্কা নিয়ে আবার চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে, আমাদের জানানো হয়নি। বাংলাকে বাদ দিয়ে আগেই এই বিষয়গুলো নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। আর ফারাক্কা চুক্তির কারণে আমরা ‘৯৬ সাল থেকে কষ্ট ভোগ করছি। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যে রুপি দেওয়ার কথা ছিল তা দেওয়া হয়নি।”

আত্রাই নদীর ওপর বাংলাদেশের সীমানায় বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে মমতা বলেন, “আত্রাই নদী দিয়ে এক সময় পানি আসত। তখন বালুরঘাট তথা গোটা দক্ষিণ দিনাজপুুরবাসী সেই পানি পেত। কিন্তু চীনকে দিয়ে বাংলাদেশ সেখানে একটা বাঁধ তৈরি করে পুরো পানিটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি বারবার চিঠি দিয়ে এর প্রতিবাদ করেছি।”

নরেন্দ্র মোদিকে লেখা চিঠিতে মমতা বলেছেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) সম্প্রতি ভারত সফরে এসেছিলেন সেই প্রসঙ্গে আপনাকে লিখছি। গঙ্গা ও তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে আপনাদের মধ্যে। কিন্তু রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে এই ধরনের আলোচনা প্রত্যাশিত নয়, সেটা গ্রহণযোগ্যও নয়।”

তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, “আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভৌগোলিকভাবে এই সম্পর্ক। সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও আমাদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। আমি বাংলাদেশের মানুষকে শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। কিন্তু পানি অত্যন্ত দামি সম্পদ। এটা মানুষের লাইফলাইন। এই সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে আমরা আপোস করতে পারি না। এই ধরনের চুক্তি হলে বাংলার মানুষ সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন