১০:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে কারণে গ্রেপ্তার কেজরিওয়াল

দিল্লির বহুল আলোচিত মদ নীতি সংক্রান্ত আবগারি দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হয়েছেন আলোচিত মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আলোচিত এ রাজনীতিককে গ্রেপ্তার করে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইডি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে মদ নীতি কেলেঙ্কারি মামলার ‌‌‘‘ষড়যন্ত্রকারী’’ বলে অভিহিত করেছে।

ইডি বলছে, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও আম আদমি পার্টির নেতা মণীশ সিসোদিয়া এবং সঞ্জয় সিং মদ নীতি তৈরিতে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) নেতা কে. কবিতা।

কথিত ষড়যন্ত্র অনুযায়ী, দিল্লিতে এমন এক মদ নীতি তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়; যা দক্ষিণ ভারতের একটি মদের লবিকে সুবিধা দেবে। ইডির তথ্য অনুযায়ী, এর বিনিময়ে সেই ‘‘দক্ষিণ লবি’’ আম আদমি পার্টিকে ১০০ কোটি রুপি দেবে।

পরে মামলার কয়েকজন অভিযুক্ত ও সাক্ষীর বক্তব্যে কেজরিওয়ালের নাম ওঠে আসে। কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে ইডির চাওয়া রিমান্ড নোট ও চার্জশিটে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশটির কেন্দ্রীয় এই তদন্ত সংস্থা বলেছে, মদ নীতি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত বিজয় নায়ার প্রায়ই কেজরিওয়ালের অফিসে যেতেন এবং বেশিরভাগ সময় সেখানেই কাটাতেন। নায়ার মদ ব্যবসায়ীদের বলতেন যে, তিনি কেজরিওয়ালের সাথে মদ নীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, নায়ারই কেজরিওয়ালের সাথে মদ কোম্পানি ইন্দোস্পিরিটের মালিক সমীর মাহেন্দ্রুর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

সেই সাক্ষাতে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় পরবর্তীতে কেজরিওয়ালের সাথে মাহেন্দ্রুর ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করেন। ভিডিও কলে কেজরিওয়াল মাহেন্দ্রুকে বলেছিলেন, নায়ার তার ‘‘সন্তান’’, যাকে তিনি বিশ্বাস করেন।

‘‘দক্ষিণ লবির’’ প্রথম অভিযুক্ত এবং বর্তমানে এই মামলার সাক্ষী রাঘব মাগুন্তা বলেছিলেন, তার বাবা ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির সাংসদ। তিনিও মদ নীতি সম্পর্কে আরও জানতে কেজরিওয়ালের সাথে দেখা করেছিলেন।

সিসোদিয়ার সাবেক ব্যক্তিগত সচিব সি অরবিন্দ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ২০২১ সালের মার্চে তিনি সিসোদিয়ার কাছে মন্ত্রীদের জমা দেওয়া একটি খসড়া প্রতিবেদন পেয়েছিলেন। সিসোদিয়া তাকে ফোন করার পর তিনি কেজরিওয়ালের বাড়িতে যান। ওই সময় দিল্লির এই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি সেখানে সত্যেন্দ্র জৈনকে দেখেছেন এবং নথি পেয়েছেন। পরে এই ঘটনায় তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন বলে জানিয়েছিলেন।

যেভাবে গ্রেপ্তার কেজরিওয়াল
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার কেজরিওয়ালের বাড়িতে যান ইডির ১২ সদস্যের একটি দল। ওই সময় তাদের কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট ছিল। বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে দুই ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই সময় কেজরিওয়াল ও তার স্ত্রীর মোবাইল ফোন জব্দ করা হয় এবং দুটি ট্যাব এবং একটি ল্যাপটপ থেকে ডাটা ট্রান্সফার করে নেওয়া হয়।

যখন বাড়ির ভেতর কেজরিয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল তখন বাইরে দিল্লি পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সদস্য এবং সিআরপিএফের কয়েকটি দলকে মোতায়েন করা হয়। ওই সময় বাইরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

তখন কেজরিওয়ালের বাড়ির বাইরে যে কয়েকজন নেতাকর্মী জড়ো হয়েছিলেন তাদেরও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কেজরিয়াল প্রথম কোনো মুখমন্ত্রী যিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।

সূত্র: এনডিটিভি

বিষয়

যে কারণে গ্রেপ্তার কেজরিওয়াল

প্রকাশিত: ০৩:০১:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪

দিল্লির বহুল আলোচিত মদ নীতি সংক্রান্ত আবগারি দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হয়েছেন আলোচিত মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আলোচিত এ রাজনীতিককে গ্রেপ্তার করে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইডি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে মদ নীতি কেলেঙ্কারি মামলার ‌‌‘‘ষড়যন্ত্রকারী’’ বলে অভিহিত করেছে।

ইডি বলছে, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও আম আদমি পার্টির নেতা মণীশ সিসোদিয়া এবং সঞ্জয় সিং মদ নীতি তৈরিতে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) নেতা কে. কবিতা।

কথিত ষড়যন্ত্র অনুযায়ী, দিল্লিতে এমন এক মদ নীতি তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়; যা দক্ষিণ ভারতের একটি মদের লবিকে সুবিধা দেবে। ইডির তথ্য অনুযায়ী, এর বিনিময়ে সেই ‘‘দক্ষিণ লবি’’ আম আদমি পার্টিকে ১০০ কোটি রুপি দেবে।

পরে মামলার কয়েকজন অভিযুক্ত ও সাক্ষীর বক্তব্যে কেজরিওয়ালের নাম ওঠে আসে। কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে ইডির চাওয়া রিমান্ড নোট ও চার্জশিটে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশটির কেন্দ্রীয় এই তদন্ত সংস্থা বলেছে, মদ নীতি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত বিজয় নায়ার প্রায়ই কেজরিওয়ালের অফিসে যেতেন এবং বেশিরভাগ সময় সেখানেই কাটাতেন। নায়ার মদ ব্যবসায়ীদের বলতেন যে, তিনি কেজরিওয়ালের সাথে মদ নীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, নায়ারই কেজরিওয়ালের সাথে মদ কোম্পানি ইন্দোস্পিরিটের মালিক সমীর মাহেন্দ্রুর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

সেই সাক্ষাতে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় পরবর্তীতে কেজরিওয়ালের সাথে মাহেন্দ্রুর ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করেন। ভিডিও কলে কেজরিওয়াল মাহেন্দ্রুকে বলেছিলেন, নায়ার তার ‘‘সন্তান’’, যাকে তিনি বিশ্বাস করেন।

‘‘দক্ষিণ লবির’’ প্রথম অভিযুক্ত এবং বর্তমানে এই মামলার সাক্ষী রাঘব মাগুন্তা বলেছিলেন, তার বাবা ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির সাংসদ। তিনিও মদ নীতি সম্পর্কে আরও জানতে কেজরিওয়ালের সাথে দেখা করেছিলেন।

সিসোদিয়ার সাবেক ব্যক্তিগত সচিব সি অরবিন্দ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ২০২১ সালের মার্চে তিনি সিসোদিয়ার কাছে মন্ত্রীদের জমা দেওয়া একটি খসড়া প্রতিবেদন পেয়েছিলেন। সিসোদিয়া তাকে ফোন করার পর তিনি কেজরিওয়ালের বাড়িতে যান। ওই সময় দিল্লির এই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি সেখানে সত্যেন্দ্র জৈনকে দেখেছেন এবং নথি পেয়েছেন। পরে এই ঘটনায় তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন বলে জানিয়েছিলেন।

যেভাবে গ্রেপ্তার কেজরিওয়াল
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার কেজরিওয়ালের বাড়িতে যান ইডির ১২ সদস্যের একটি দল। ওই সময় তাদের কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট ছিল। বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে দুই ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই সময় কেজরিওয়াল ও তার স্ত্রীর মোবাইল ফোন জব্দ করা হয় এবং দুটি ট্যাব এবং একটি ল্যাপটপ থেকে ডাটা ট্রান্সফার করে নেওয়া হয়।

যখন বাড়ির ভেতর কেজরিয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল তখন বাইরে দিল্লি পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সদস্য এবং সিআরপিএফের কয়েকটি দলকে মোতায়েন করা হয়। ওই সময় বাইরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

তখন কেজরিওয়ালের বাড়ির বাইরে যে কয়েকজন নেতাকর্মী জড়ো হয়েছিলেন তাদেরও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কেজরিয়াল প্রথম কোনো মুখমন্ত্রী যিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।

সূত্র: এনডিটিভি