রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছের অঞ্চল বুচিডং থেকে প্রায় ১০০ মুসলিমকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। তাদের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রাখাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নারিনজারা নিউজ।
ওই ১০০ জনের মধ্যে পা জুন চং গ্রামের ১৫ জন, তাত মা চং গ্রামের ৫৫ জন, নাগা কায়িং তাওক গ্রামের ৩৩ জন এবং কায়ুক ফিউ তং গ্রামের ১০ জন রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি গ্রামে প্রবেশ করে জান্তা বাহিনী। এরপর তারা প্রায় ১০০ জনকে ধরে নিয়ে যায়।
বয়স্ক এক মুসলিম ব্যক্তি নারিনজারা নিউজকে বলেছেন, “সেনারা গ্রামে এসে তাদের আটক করে। আটককৃতদের বেশিরভাগই তরুণ। তাদের ৫৩৫তম এবং ৩৫৩তম ব্যাটালিয়নে নিয়ে যাওয়া হয়। সেনারা আরও গ্রামবাসীকে আটকের হুমকি দিয়ে গেছে। এতে গ্রামবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বয়স্ক ব্যক্তি নারিনজারা নিউজকে আরও বলেছেন, “আরও মানুষকে আটকের হুমকি দেওয়ায় গ্রামের তরুণরা সব পালিয়ে যাচ্ছে।”
জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গিয়ে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করার মাধ্যমে এসব গ্রামবাসীর মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এজন্য জান্তা বাহিনীর বিচার দাবি করেছেন এই মুসলিম বৃদ্ধ।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল মংডুর মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর কমান্ডাররা। ওই বৈঠকে সেনা কমান্ডাররা মুসলিম নেতাদের প্রস্তাব দেন, যদি তারা জান্তা বাহিনীর হয়ে কাজ করেন; তাহলে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে।
মংডুর ময়ো থু গি গ্রামের ৫নং বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নে বৈঠকটি হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন জান্তার ডিভিশন কমান্ডার থুরেন তুন এবং বিভাগীয় প্রশাসক নায়ো ও। তাদের আয়োজিত এ বৈঠকে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ওই মুসলিম নেতা নারিনজারা নিউজকে বলেছেন, “বৈঠকে কমান্ডার থারুন তুন আমাদের বলেছেন, রাখাইনের মানুষের (বৌদ্ধ আরাকান আর্মি) কারণে আমরা মুসলিমরা ভুগছি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্র তুলে নেওয়া উচিত। এমনকি এই কমান্ডার আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন, যদি আমাদের গ্রামের কাছে যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে সেনারা আমাদের গ্রামে হামলা চালাবে না। তারা শুধুমাত্র রাখাইনের গ্রামে হামলা চালাবে। এজন্য আমরা যেন জান্তার হয়ে কাজ করি।”
তবে বৈঠকে উপস্থিত মুসলিম নেতাদের একটি অংশ বলেছেন, যদি তাদের সত্যিকার অর্থে মিয়ানমারের নাগরিকের মর্যাদা দেওয়া হয়; তাহলে তারা এই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখবেন। তবে বেশিরভাগ নেতা এতে রাজি হননি।
ওই নেতা নারিনজারাকে আরও বলেছেন, “কিছু নেতা আমাদের সত্যিকার নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তবে রাখাইনের মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বেশিরভাগ নেতা। তা সত্ত্বেও সেনা কমান্ডার তাদের আহ্বান জানিয়েছেন, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতে।”