ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। টানা চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় নারী ও শিশুসহ এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েল গাজার রাফাহতেও হামলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে লন্ডনসহ বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন লাখো মানুষ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল দক্ষিণ গাজার রাফাহতে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় গাজার যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হাজার হাজার মানুষ বিশ্বজুড়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। ফিলিস্তিনপন্থি পতাকা ও ব্যানার নিয়ে হাজার হাজার মানুষ স্পেনের মাদ্রিদের রাস্তায় মিছিল করে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানায়।
স্পেনের রাজধানীতে আতোচা ট্রেন স্টেশন থেকে কেন্দ্রীয় প্লাজা দেল সোল স্কোয়ার পর্যন্ত বড় ব্যানারের পেছনে মিছিল সমাবেশের মাধ্যমে এই প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। সামনে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা।
অনেকের কাছে থাকা প্ল্যাকার্ডগুলোতে ‘ফিলিস্তিনের জন্য শান্তি’ এবং ‘ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ উপেক্ষা করবেন না’ বলেও লেখা ছিল।
প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের মন্ত্রিসভার অন্তত ছয়জন মন্ত্রীও এদিনের এই বিক্ষোভে অংশ নেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন বামপন্থি সুমার দলের। তাদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সমাজতান্ত্রিক দলের পরিবহনমন্ত্রী অস্কার পুয়েন্তেও বিক্ষোভে অংশ নেন।
প্রতিবাদ-বিক্ষোভের শুরুতে পুয়েন্তে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, নিরপরাধদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ এবং হামলার অবসান প্রয়োজন, আমাদের অবশ্যই সমস্ত বন্দির মুক্তি অর্জন করতে হবে।’
প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন (পিএসসি) অনুসারে, যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেখানে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়।
লন্ডন থেকে আল জাজিরার হ্যারি ফাউসেট বলেছেন, আয়োজকদের মতে গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আকারের দিক থেকে শনিবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভটি শীর্ষ তিনের মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফাউসেট বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহতে ইসরায়েলের উদ্দেশ্যমূলক সামরিক অভিযানের আগে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ গাজার পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের একটি ইঙ্গিত। ইউগভের একটি জরিপে দেখা যাচ্ছে- যুক্তরাজ্যের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করে।’
তিনি আরও বলেন, মিছিলের মূল অংশটি লন্ডনে ইসরায়েলি দূতাবাসের বাইরে পৌঁছেছিল এবং সেখানে সংহতি বক্তৃতা ও প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে লন্ডনে বিক্ষোভের জন্য দেড় হাজারেরও বেশি পুলিশ কর্মকর্তা রাস্তায় নেমেছিলেন। মেট্রোপলিটন পুলিশের মতে, প্ল্যাকার্ড-সম্পর্কিত অপরাধ, কর্মকর্তাদের ওপর হামলা এবং মুখের আবরণ অপসারণ করতে অস্বীকার করার দায়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই গ্রেপ্তার সত্ত্বেও সিংহভাগ বিক্ষোভকারীই বিক্ষোভের সময় শান্তিপূর্ণ অবস্থায় ছিল এবং সম্পূর্ণ আইন মেনে আচরণ করেছিল।
অবশ্য ইসরায়েলপন্থি দলগুলো যুক্তরাজ্যে ফিলিস্তিনপন্থি এই গণআন্দোলনকে ইহুদি-বিরোধী হিসেবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
এছাড়া সুইডেনসহ অন্যান্য দেশেও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে লোকেরা ইসরায়েলকে রাফাহ আক্রমণ না করার দাবি জানায় এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়।
ইসরায়েলে বিক্ষোভ
এদিকে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব এবং পশ্চিম জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের বাইরেও বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা বন্দি বিনিময় চুক্তি এবং ইসরায়েলে অবিলম্বে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, গাজায় আটক থাকা ১০০ জনেরও বেশি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার চুক্তির বিষয়ে আরও আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য কায়রোতে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল না পাঠানোর বিষয়ে নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়।
বন্দি ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার ফোরাম নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তটিকে অবশিষ্ট বন্দিদের জন্য ‘মৃত্যুদণ্ড’ বলে অভিহিত করেছে।
তবে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু এই মুহূর্তে ইসরায়েলে নির্বাচনের দাবির নিন্দা করেছেন। তিনি আরও বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক ‘চাপ কাজ করছে’। তিনি দাবি করেন, সেনাবাহিনী ‘গাজার এমন এলাকায় পৌঁছেছে যা শত্রুরা কখনও কল্পনাও করেনি’।
নেতানিয়াহুর দাবি, ‘যে আমাদেরকে রাফাহতে হমলা না করতে বলছে, সে আসলে আমাদের কান হারাতে বলছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রাফাহ আক্রমণ করবে।’
মূলত দক্ষিণ গাজার এই রাফাহ শহরে এখন দশ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বাস করছেন। এমনকি বন্দিদের মুক্তির জন্য হামাসের সাথে একটি চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা হলেও রাফাহতে হামলার কথা জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।