ইয়েমেনে হুতি যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে নতুন করে যৌথ সিরিজ বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দেশটিতে হুতিদের লক্ষ্যবস্তুতে এটি যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টম হামলা। আর ১১ জানুয়ারি যৌথ হামলা চালানোর পর এটি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দ্বিতীয় অভিযান।
পেন্টাগন জানিয়েছে, সোমবারের এ হামলায় ৮টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে যার মধ্যে একটি ভূগর্ভস্থ স্টোরেজ সাইট এবং হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র ও নজরদারি সক্ষমতার স্থাপনা রয়েছে। খবর-বিবিসি
ইরান-সমর্থিত হুতি যোদ্ধারা লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট দিয়ে যাতায়াতকারী ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোতে হামলা চালিয়ে আসছে। হুতিদের প্রতি এ অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তারা বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহ রক্ষার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে পেন্টাগনের জারি করা যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের লক্ষ্য উত্তেজনা কমানো এবং লোহিত সাগরে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা। আমরা বিশ্বের অন্যতম একটি অঞ্চলে জীবন ও বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহ রক্ষা করতে দ্বিধা করব না। ক্রমাগত হুমকির মুখে গুরুত্বপূর্ণ এ পানিপথ।
যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা ও নেদারল্যান্ডসের সমর্থনে এই হামলা চালানো হয়েছে। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ৪টি আরএএফ টাইফুন যুদ্ধবিমান সোমবারের হামলায় অংশ নিয়েছে।
হুতিরা ইয়েমেনের বেশির ভাগ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে। এই যোদ্ধারা ইসরায়েল অভিমুখে জাহাজগুলো লক্ষ্যবস্তু করে তাদের মিত্র হামাসকে সমর্থন করে আসছে। ১১ জানুয়ারি হুতিদের ওপর যৌথ অভিযানের পর হুতির পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে এজন্য চরম মূল্য দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা ওই সময় জানিয়েছিলেন- হুতিদের অস্ত্র ভাণ্ডার, কমান্ড সেন্টারসহ বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করা হয়েছে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের ব্যবহৃত সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করেও বোমা হামলা করা হয়েছে। জাহাজ থেকে ছোড়া হয়েছে তোমাহোক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এছাড়া হুতিদের প্রতিরোধে যুদ্ধবিমানও ব্যবহার করা হয়েছে।
ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানায়, তারা দক্ষিণ লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ১৮টি ড্রোনকে গুলি করে ধ্বংস করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের বাহিনীর সঙ্গে সেন্টকম দুটি জাহাজবিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ধ্বংস করেছে। বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার ও ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ইউএসএস গ্রেভলি, ইউএসএস ল্যাবুন, ইউএসএস মেসন এবং যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার এইচএমএস ডায়মন্ড থেকে জঙ্গি বিমানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে গুলি করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুতিদের হামলা মোকাবিলা করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক জোট গঠন করেছে। তাদের হামলা কিছু শিপিং লাইনকে দক্ষিণ আফ্রিকার চারপাশে দীর্ঘ সমুদ্রপথ বেছে নিতে এবং লোহিত সাগরকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে বাধ্য করেছে। হুতিরা বলেছে, ইসরায়েল গাজায় সংঘাত বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা তাদের হামলা চালিয়ে যাবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব মতে, জাহাজের পতাকাবাহী অবস্থা, ক্রুদের জাতীয়তা, জাহাজের উৎস এবং গন্তব্য বা জাহাজের মালিকানার ভিত্তিতে আক্রান্ত বাণিজ্যিক নৌযানগুলোর সঙ্গে ৫৫টি দেশের সরাসরি সংযোগ রয়েছে। হোয়াইট হাউস গত মাসে অভিযোগ করে, লোহিত সাগরে হুতিদের হামলায় ইরান ‘গভীরভাবে জড়িত’। তবে ইরান সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হুতিদের হামলার প্রতিক্রিয়ায় জ্বালানি জায়ান্ট বিপি গত মাসে জানায়, তারা লোহিত সাগর হয়ে সব গ্যাস এবং তেলের চালান সাময়িকভাবে স্থগিত করছে। হোম ফার্নিশিং জায়ান্ট আইকিয়া বলেছে, এটি শিগগির কাঁচামালের ঘাটতির মুখোমুখি হতে পারে। কারণ প্রধান জাহাজগুলো লোহিত সাগরকে এড়িয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছে।
লোহিত সাগর ভূমধ্যসাগর এবং ভারত মহাসাগরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ, যা ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সংক্ষিপ্ততম বাণিজ্য পথ। লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার নিন্দা করে এবং গ্যালাক্সি লিডার ছিনতাইয়ের মতো কর্মকাণ্ড অবিলম্বে অবসানের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি খসড়া প্রস্তাবে বুধবার দিনশেষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ভোট হওয়ার কথা।
সূত্র: বিবিসি