নানা আইনী ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লেও ডনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা যে বিন্দুমাত্র কমেনি তার প্রমাণ আইওয়া অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান ককাসে তার বিশাল জয়।
আইওয়ায় প্রত্যাশিত ভোটের প্রায় ৯০ শতাংশ পড়েছে। যেখানে ট্রাম্পে পক্ষে পড়ে ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসের পক্ষে ২১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালির পক্ষে ১৯ শতাংশ ভোট পড়ে।
রিপাবলিকান প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে শামিল হওয়া উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামী সোমবার মাত্র ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এর অর্থ, ট্রাম্পের পক্ষে ভোট আরো বাড়লো।
আইওয়াতে ট্রাম্পের এই বড় জয় কেনো নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে উল্লেখযোগ্য তা বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি।
রিপাবলিকান পার্টি এখনো ট্রাম্পের দল:
রীতিমত রেকর্ড ভেঙে আইওয়ায় জিতেছেন ট্রাম্প। তিনি এই রাজ্যের ৯৯ কাউন্টির মধ্যে মাত্র একটিতে হেরেছেন। তাও এক ভোটে।
তাছাড়া, এর আগে আইওয়ায় রিপাবলিকান ককাসে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন ১৯৮৮ সালে বব ডোল। তিনি ১২ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে জয়ী হয়েছিলেন। ট্রাম্প তার থেকেও অনেকটা বেশি ব্যবধানে এবার জিতেছেন। ট্রাম্প জিতেছেন ৩০ শতাংশ ব্যবধানে।
কেনো ভোটাররা হুমড়ি খেয়ে ট্রাম্পকে ভোট দিলেন তার একটি কারণ ব্যাখ্যায় সিবিএস নিউজ বলেছে, রিপাবলিকান ককাসে ভোট দেওয়া প্রায় অর্ধেক ভোটার নিজেদের ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ক্যাম্পেইনের অংশ মনে করেন।
তাই সোমবার তরুণ-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই নির্বিশেষে সবাই ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন।
তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত হেরে যাওয়া প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোটাররা মনে রাখে না। কিন্তু ট্রাম্পের বেলায় বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। গত নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও তিনি সব সময় আলোচনায় থেকেছেন। বরং কখনো কখনো বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তুলনায় তাকে নিয়ে খবর বেশি হয়েছে। যদিও তার বেশিরভাগই নেতিবাচক কারণে। কিন্তু ট্রাম্প সব সময় খবরে থেকেছেন।
তার উপর, তিনি আইওয়া এমনকি, পুরো দেশের ভোটারদেরও এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে তিনি হারেননি। সোমবার যারা আইওয়া ককাসে গেছে তাদের একটি বড় অংশ সিবিএস কে বলেছেন, তাদের বিশ্বাস ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আসল জয়ী ছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের ৯০ শতাংশ সমর্থক সেটাই বিশ্বাস করেন।
ট্রাম্পের বিজয় একটি অসাধারণ পরিবর্তন:
রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে ট্রাম্পের প্রভাবশালী অবস্থান অকাট্য – তবে আধুনিক আমেরিকান রাজনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এখানে তার বিজয় এক কথায় অসাধারণ।
কারণ, তিন বছর আগে বিতর্কের মেঘে ঢাকা পড়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদ শেষ করেছিলেন ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জো বাইডেনের কাছে নিজের পরাজয় তিনি চ্যালেঞ্জ জানান এবং সেই চ্যালেঞ্জের জেরেই ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল দাঙ্গার মত নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে।
দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুইটি ফৌজদারি মামলা চলছে।
এখন, আইওয়া ককাসে জিতে তিনি প্রথমবারের মত নভেম্বরের প্রেসিডন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী হওয়ার পথে প্রথমবার দীপ্ত পদক্ষেপ রাখলেন।
যদিও রিপাবলিক দল থেকে প্রার্থী হতে হলে তাকে এখনো অনেকটা পথ যেতে হবে। আগামী সপ্তাহে নিউ হ্যাম্পশায়ারের প্রাইমারিতে নিকি হ্যালির কাছ থেকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন তিনি। জনমত জরিপে দেখা গেছে, এক সময় নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রভাবশালী অবস্থানে থাকা ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বর্তমানে অনেকটাই কমে গেছে।
আইওয়া ককাসে ট্রাম্পের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া যায়নি:
আইওয়া ককাসে ভোট শুরু হওয়ার পর সবাই একটা প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতে চাইছিলেন, ট্রাম্পের পর কে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবেন। ডিস্যান্টিস দ্বিতীয় স্থান জিতেছেন। যদিও তৃতীয় হওয়া হ্যালির চেয়ে মাত্র ২ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে এবং ট্রাম্পের থেকে ৩০ শতাংশ ভোট পেছনে থেকে। অথচ, ডিস্যান্টিস আইওয়াতে জিততে অনেক সময় ও সম্পদ ব্যয় করেছিলেন।
ট্রাম্পের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে আইনি ঝামেলা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হতে পারার যোগ্যতা ধরে রাখা। না পারলে ডিস্যান্টিস অথবা হ্যালি হবেন তার বিকল্প রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
সূত্র: বিবিসি