০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেনাবাহিনীকে হটিয়ে রাখাইন দখলের দাবি আরাকান আর্মির

সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেওয়ার দাবি করেছে ওই অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করে আসা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। রাখাইন ছাড়াও মিয়ানমারের চীন ও ভারত সীমান্ত লাগোয়া একাধিক রাজ্যের বেশিরভাগ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সামরিক বাহিনীর সাথে লড়াইরত সেখানকার বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলো।

থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইরাবতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরাকান আর্মি (এএ) বলেছে, তারা রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরের মধ্যে অন্তত ১৫টি এবং প্রতিবেশী চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরের দখল সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। এই দুই রাজ্যে সেনাবাহিনীর ১৪২টি সামরিক চৌকির দখলও নিয়েছে তারা।

এছাড়াও দেশটির দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় স্যাগাইং অঞ্চলের ভারত সীমান্তের কাছের শহর খামপাতও দখল করেছে সেখানকার বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলো। শহরটির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ২২৮ ও ৩৯১ এর প্রায় ২০০ সৈন্য লড়াই করছে। বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে স্থল ও আকাশপথে হামলা চালাচ্ছে সামরিক বাহিনী।

আরাকান আর্মির এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৪৫ দিন ধরে রাখাইন ও চিন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে বিদ্রোহীরা। এ সময় রাখাইনের রাজধানী সিত্তের একটি এবং অন্য ১৪টি শহরের সামরিক ঘাঁটিগুলোর দখল নিয়েছে তারা। এছাড়া চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরে জান্তা বাহিনীর ১৭টি ঘাঁটির দখলও নিয়েছে বিদ্রোহীরা।

উত্তর রাখাইন রাজ্যের ম্রাউক ইউ, পাকতাও ও মংডু শহরে এবং দক্ষিণ চিনের পালেতওয়াতে সামরিক বাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ চলছে। গত বুধবার ম্রাউক ইউ শহরের কোয়ে থাউং গির্জার কাছে আরাকান আর্মি ও সামরিক বাহিনীর মাঝে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এই সংঘাতে জান্তা বাহিনীর ব্যাপক সংখ্যক সদস্যের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পরে বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় মিয়ানমারের জান্তা।

রাখাইনের ম্রাউক ইউ শহরের বাসিন্দারা বলেছেন, পায়ার ওয়াক, ইওয়ার হং তাও, পিপিন কোন ও মং থার কোন গ্রামে সামরিক বাহিনীর বিমান থেকে হামলা চালানো হয়েছে।

স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেছেন, বিমান হামলায় কোনও বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে কিছু বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও গির্জার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরাবতি বলছে, চলতি সপ্তাহে মংডু এবং পাকতাও শহরে সামরিক বাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে পালেতওয়ায় জান্তা বাহিনীর একটি প্রধান ঘাঁটিতে আরাকান আর্মি টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে গোষ্ঠীটি। ইতিমধ্যে এই শহরে জান্তার দুটি শক্তিশালী ঘাঁটির দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি।

দেশটির এই সংবাদমাধ্যম বলছে, মঙ্গলবার পালেতওয়া শহরের প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সিনলেৎওয়ার একটি জান্তা ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহীরা। পালেতওয়ার একজন বাসিন্দা বলেছেন, সিনলেৎওয়ার গ্রামের বাসিন্দারা জঙ্গলে পালিয়ে গেছেন। ওই এলাকায় ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।

দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির রাজনৈতিক দল এনএলডি নির্বাচনে জয়ের পর ক্ষমতায় তাদের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর ঠিক আগে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। তারপর থেকেই দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়েছে দেশটির বেসামরিক জনগণ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর।

বিষয়

সেনাবাহিনীকে হটিয়ে রাখাইন দখলের দাবি আরাকান আর্মির

প্রকাশিত: ০৫:০৭:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেওয়ার দাবি করেছে ওই অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করে আসা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। রাখাইন ছাড়াও মিয়ানমারের চীন ও ভারত সীমান্ত লাগোয়া একাধিক রাজ্যের বেশিরভাগ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সামরিক বাহিনীর সাথে লড়াইরত সেখানকার বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলো।

থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইরাবতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরাকান আর্মি (এএ) বলেছে, তারা রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরের মধ্যে অন্তত ১৫টি এবং প্রতিবেশী চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরের দখল সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। এই দুই রাজ্যে সেনাবাহিনীর ১৪২টি সামরিক চৌকির দখলও নিয়েছে তারা।

এছাড়াও দেশটির দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় স্যাগাইং অঞ্চলের ভারত সীমান্তের কাছের শহর খামপাতও দখল করেছে সেখানকার বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলো। শহরটির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ২২৮ ও ৩৯১ এর প্রায় ২০০ সৈন্য লড়াই করছে। বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে স্থল ও আকাশপথে হামলা চালাচ্ছে সামরিক বাহিনী।

আরাকান আর্মির এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৪৫ দিন ধরে রাখাইন ও চিন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে বিদ্রোহীরা। এ সময় রাখাইনের রাজধানী সিত্তের একটি এবং অন্য ১৪টি শহরের সামরিক ঘাঁটিগুলোর দখল নিয়েছে তারা। এছাড়া চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরে জান্তা বাহিনীর ১৭টি ঘাঁটির দখলও নিয়েছে বিদ্রোহীরা।

উত্তর রাখাইন রাজ্যের ম্রাউক ইউ, পাকতাও ও মংডু শহরে এবং দক্ষিণ চিনের পালেতওয়াতে সামরিক বাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ চলছে। গত বুধবার ম্রাউক ইউ শহরের কোয়ে থাউং গির্জার কাছে আরাকান আর্মি ও সামরিক বাহিনীর মাঝে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এই সংঘাতে জান্তা বাহিনীর ব্যাপক সংখ্যক সদস্যের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পরে বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় মিয়ানমারের জান্তা।

রাখাইনের ম্রাউক ইউ শহরের বাসিন্দারা বলেছেন, পায়ার ওয়াক, ইওয়ার হং তাও, পিপিন কোন ও মং থার কোন গ্রামে সামরিক বাহিনীর বিমান থেকে হামলা চালানো হয়েছে।

স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেছেন, বিমান হামলায় কোনও বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে কিছু বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও গির্জার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরাবতি বলছে, চলতি সপ্তাহে মংডু এবং পাকতাও শহরে সামরিক বাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে পালেতওয়ায় জান্তা বাহিনীর একটি প্রধান ঘাঁটিতে আরাকান আর্মি টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে গোষ্ঠীটি। ইতিমধ্যে এই শহরে জান্তার দুটি শক্তিশালী ঘাঁটির দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি।

দেশটির এই সংবাদমাধ্যম বলছে, মঙ্গলবার পালেতওয়া শহরের প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সিনলেৎওয়ার একটি জান্তা ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহীরা। পালেতওয়ার একজন বাসিন্দা বলেছেন, সিনলেৎওয়ার গ্রামের বাসিন্দারা জঙ্গলে পালিয়ে গেছেন। ওই এলাকায় ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।

দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির রাজনৈতিক দল এনএলডি নির্বাচনে জয়ের পর ক্ষমতায় তাদের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর ঠিক আগে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। তারপর থেকেই দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়েছে দেশটির বেসামরিক জনগণ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর।