০৪:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাগান মালিকদের ক্ষোভ

সি ন্ডি কে টে র কবলে দেশের চা শিল্প

পঞ্চগড় এলাকায় নিয়ম বিবর্জিত পদ্ধতিতে নিম্নমানের চা উৎপাদন, চোরাচালান, বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, বাজার নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধের উচ্চ হারসহ নানা সংকটে ধ্বংসের প্রান্তে দেশের চা শিল্প। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসকল সমস্যার সমাধান না হলে অনেক চা বাগান বন্ধ হয়ে যাবে এবং চা শিল্প ধ্বংসের মুখে পতিত হবে বলে জানিয়েছে চা বাগানের মালিকদের সংগঠন টি প্লান্টার।
আজ রোববার সিলেটের চা বাগানের মালিকদের সংগঠন টি প্লান্টার সংবাদ সম্মেলন করে চা শিল্পের এ সংকটের কথা তুলে ধরে। সংবাদ সম্মেলনে সিলেট বিভাগের ২৫টি চা বাগান মালিক ও তাদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন চা বাগান মালিক মোহাম্মদ মুফতি হাসান।
বাগান মালিকদের দাবি, চা শিল্পে একটি বড় সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। যারা সিন্ডিকেট করছে তারা লাভবান হতে গিয়ে চা শিল্পকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই অনেক চা বাগান বন্ধ হয়ে যাবে। চা বাগান মালিকরা বলেন, চা দেশের অন্যতম প্রাচীন শিল্প। ঐতিহ্যগতভাবে এটি একটি রপ্তানিমুখর শিল্প। যদিও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার ফলে রপ্তানি কমেছে। তবে চা শিল্প দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। এই চা শিল্পের ওপর কয়েক লক্ষ শ্রমিক, কর্মচারীর জীবন জীবিকা নির্ভরশীল। পরোক্ষভাবে আরো কয়েক লক্ষ লোক চা শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে চা শিল্প কঠিনতম পরিস্থিতিতে নিমজ্জিত। যা এই শিল্পের টিকে থাকার ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে।
বাগান মালিকরা আরও বলেন, দেশের বাইরে থেকে খুবই নিম্নমানের চা চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আসা, নিয়ম বিবর্জিত পদ্ধতিতে পঞ্চগড় এলাকায় খুবই নিম্নমানের চা উৎপাদন এবং আইন, বিধি নিষেধ অমান্য করে পঞ্চগড় এলাকায় সরাসরি ফ্যাক্টরি থেকে চা বিক্রয়, মজুরী, তেল, রেশন, ঔষধ (এগ্রো ক্যামিকেল) ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, কয়েকটি বড় প্যাকেটিয়ার দ্বারা নিলাম বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধের উচ্চ হারের কারণে চা শিল্পে চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে চা বাগান মালিকরা বলেন, রোগবালাই দমনে ঔষধ, সার এবং বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে কিন্তু নিলামমূল্য তারচেয়েও বেশি মাত্রায় কমেছে। বর্তমানে নিলামমূল্য ১৭০-১৭৫ টাকা থেকে নেমে ১০০-১১০ টাকায় এসেছে। এমনকি ১০০ টাকার নীচেও নিলামে বিক্রি হচ্ছে। চায়ের এই নিলাম মূল্য দিয়ে লাভের প্রশ্নই উঠে না। উৎপাদন খরচ বহন করাই কোনভাবে সম্ভব নয়।
চা শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উল্লেখ করে বাগান মালিকরা বলেন, এমন সংকট চলতে থাকলে এতো বিনিয়োগ বিফলে যাবে। পাট, টেক্সটাইল শিল্পের মতো চা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে চা শিল্পের সংকট সমাধানের কথাও উল্লেখ করেন বাগান মালিকরা।
বক্তারা বলেন, কেজি প্রতি চায়ের ন্যূনতম মূল্য ৩৫০-৪০০ টাকা নির্ধারণ, ভালো মানের চা নিলামে বিডিং, দেশের বাইরে থেকে চোরাই পথে চা আসা বন্ধ এবং পঞ্চগড় এলাকায় চা উৎপাদনের মান এবং আইন ও বিধিসম্মতভাবে চা বাজারজাত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়াও ছোট বাগানকে প্যাকেজিং এর জন্য আর্থিক সহযোগীতা, প্যাকেজিংয়ের ন্যূনতম পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত ও কৃষি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের হার কমাতে হবে ও শর্তাবলী সহজ করার দাবি জানান তারা।
প্রসঙ্গত, ১৮৫৪ সালে সিলেটে মালনীছড়া চা বাগানের মাধ্যমে দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। সিলেটের তিন জেলায় ১৩৫টি চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯২, হবিগঞ্জে ২৪ ও সিলেটে ১৯টি চা বাগান রয়েছে।
বিষয়

বাগান মালিকদের ক্ষোভ

সি ন্ডি কে টে র কবলে দেশের চা শিল্প

প্রকাশিত: ০৫:৩৫:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
পঞ্চগড় এলাকায় নিয়ম বিবর্জিত পদ্ধতিতে নিম্নমানের চা উৎপাদন, চোরাচালান, বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, বাজার নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধের উচ্চ হারসহ নানা সংকটে ধ্বংসের প্রান্তে দেশের চা শিল্প। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসকল সমস্যার সমাধান না হলে অনেক চা বাগান বন্ধ হয়ে যাবে এবং চা শিল্প ধ্বংসের মুখে পতিত হবে বলে জানিয়েছে চা বাগানের মালিকদের সংগঠন টি প্লান্টার।
আজ রোববার সিলেটের চা বাগানের মালিকদের সংগঠন টি প্লান্টার সংবাদ সম্মেলন করে চা শিল্পের এ সংকটের কথা তুলে ধরে। সংবাদ সম্মেলনে সিলেট বিভাগের ২৫টি চা বাগান মালিক ও তাদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন চা বাগান মালিক মোহাম্মদ মুফতি হাসান।
বাগান মালিকদের দাবি, চা শিল্পে একটি বড় সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। যারা সিন্ডিকেট করছে তারা লাভবান হতে গিয়ে চা শিল্পকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই অনেক চা বাগান বন্ধ হয়ে যাবে। চা বাগান মালিকরা বলেন, চা দেশের অন্যতম প্রাচীন শিল্প। ঐতিহ্যগতভাবে এটি একটি রপ্তানিমুখর শিল্প। যদিও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার ফলে রপ্তানি কমেছে। তবে চা শিল্প দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। এই চা শিল্পের ওপর কয়েক লক্ষ শ্রমিক, কর্মচারীর জীবন জীবিকা নির্ভরশীল। পরোক্ষভাবে আরো কয়েক লক্ষ লোক চা শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে চা শিল্প কঠিনতম পরিস্থিতিতে নিমজ্জিত। যা এই শিল্পের টিকে থাকার ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে।
বাগান মালিকরা আরও বলেন, দেশের বাইরে থেকে খুবই নিম্নমানের চা চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আসা, নিয়ম বিবর্জিত পদ্ধতিতে পঞ্চগড় এলাকায় খুবই নিম্নমানের চা উৎপাদন এবং আইন, বিধি নিষেধ অমান্য করে পঞ্চগড় এলাকায় সরাসরি ফ্যাক্টরি থেকে চা বিক্রয়, মজুরী, তেল, রেশন, ঔষধ (এগ্রো ক্যামিকেল) ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, কয়েকটি বড় প্যাকেটিয়ার দ্বারা নিলাম বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধের উচ্চ হারের কারণে চা শিল্পে চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে চা বাগান মালিকরা বলেন, রোগবালাই দমনে ঔষধ, সার এবং বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে কিন্তু নিলামমূল্য তারচেয়েও বেশি মাত্রায় কমেছে। বর্তমানে নিলামমূল্য ১৭০-১৭৫ টাকা থেকে নেমে ১০০-১১০ টাকায় এসেছে। এমনকি ১০০ টাকার নীচেও নিলামে বিক্রি হচ্ছে। চায়ের এই নিলাম মূল্য দিয়ে লাভের প্রশ্নই উঠে না। উৎপাদন খরচ বহন করাই কোনভাবে সম্ভব নয়।
চা শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উল্লেখ করে বাগান মালিকরা বলেন, এমন সংকট চলতে থাকলে এতো বিনিয়োগ বিফলে যাবে। পাট, টেক্সটাইল শিল্পের মতো চা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে চা শিল্পের সংকট সমাধানের কথাও উল্লেখ করেন বাগান মালিকরা।
বক্তারা বলেন, কেজি প্রতি চায়ের ন্যূনতম মূল্য ৩৫০-৪০০ টাকা নির্ধারণ, ভালো মানের চা নিলামে বিডিং, দেশের বাইরে থেকে চোরাই পথে চা আসা বন্ধ এবং পঞ্চগড় এলাকায় চা উৎপাদনের মান এবং আইন ও বিধিসম্মতভাবে চা বাজারজাত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়াও ছোট বাগানকে প্যাকেজিং এর জন্য আর্থিক সহযোগীতা, প্যাকেজিংয়ের ন্যূনতম পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত ও কৃষি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের হার কমাতে হবে ও শর্তাবলী সহজ করার দাবি জানান তারা।
প্রসঙ্গত, ১৮৫৪ সালে সিলেটে মালনীছড়া চা বাগানের মাধ্যমে দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। সিলেটের তিন জেলায় ১৩৫টি চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯২, হবিগঞ্জে ২৪ ও সিলেটে ১৯টি চা বাগান রয়েছে।