পিএসসির ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। মাত্র ৮ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকাতে। সেখানেই কুলির কাজ করতেন। একসময় ফুটপথে ঘুমিয়ে নিদারুন কষ্ট করেছেন তিনি। এরপর গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। তারপর জড়িয়ে পড়েন পিএসসির প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। অর্জন করেছেন বিপুল সম্পদ। সঙ্গে ক্ষমতাও। চেয়েছিলেন ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে। দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য প্রচার প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
তবে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে উঠে আসে ভয়ংকর তথ্য। প্রায় একযুগ আগে থেকে বিপিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের সঙ্গে জড়িত এই সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের গল্প সিনেমাকেও হার মানাবে। রহস্যেঘেরা সৈয়দ আবেদ আলী জীবন গ্রামের বাড়ী এসে নেমে পড়েন উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায়। রাজনীতির মাঠে ময়দানে কোটি টাকার গাড়ীতে চড়ে গণসংযোগ করেন সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। এলাকায় দান খয়রাত করতেন বাবা ছেলে দু’হাত ভরে। সৈয়দ আবেদ আলী জীবন তার গ্রামের বাড়ীতে কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ীর পাশে করেছেন মসজিদ। এছাড়াও তিনি রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণাধীন। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামের কিনেছেন বিপুল সম্পদ। স্থানীয়রা জানান ঢাকায়ও তার একাধিক বাড়ী রয়েছে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা রয়েছে তার থ্রি স্টর হোটেল।
সামান্য একজন ড্রাইভার থেকে হঠাৎ করে এমন বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়ায় তার সম্পর্কে জানার কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। সৈয়দ আবেদ আলী জীবন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক। কিন্তু এলাকার মানুষ জানতোই না। গত কোরবানির ঈদে দামী গাড়িতে চড়ে ১০০ জনকে এক কেজি করে মাংস বন্টন করেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই দামি, ঝকঝকে। পড়েছেন ভারতের শিলং। তারপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি।
সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেই অভিযুক্ত কর্মচারীদের একজন পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন।
তবে এসব ব্যপারে সৈয়দ আবেদ আলী জীবেনর ব্যবহৃত নম্বর ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামের নম্বরে একাধিক বার ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। তাদের গ্রামের বাড়িও তালাবদ্ধ। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আবেদ আলী পরিবারের সবাই ইউরোপের ভিসা করে রেখেছে আগেই। যেকোনো সময় দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রধান কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করব।
সূত্র: দেশ টিভি