১২:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারুন, সানজিদা, আজিজুল ও ছাত্রলীগের দায় পেয়েছে তদন্ত কমিটি

শাহবাগ থানায় আটকে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধরের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তদন্তে সাময়িক বরখাস্ত অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের দায় পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

পাশাপাশি পুলিশের এডিসি সানজিদা আফরিন, তার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক এবং ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদেরও দায় পাওয়া গেছে।

তদন্ত কমিটি সূত্র বলছে, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনার তদন্ত শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

৯ সেপ্টেম্বর রাতে বারডেম হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে শাহবাগ থানায় আটকে ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশের রমনা বিভাগের তৎকালীন এডিসি হারুন অর রশিদ এই মারধরে নেতৃত্ব দেন। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম মোস্তফাকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হকের স্ত্রী ডিএমপির এডিসি (অতিরিক্ত উপকমিশনার) সানজিদা আফরিন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি চিকিৎসা নিতে ওই দিন সন্ধ্যায় বারডেম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পেতে তিনি সহকর্মী হিসেবে এডিসি হারুন অর রশিদের সহায়তা নেন। এ সময় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে এসে এডিসি হারুনকে মারধর করেন তাঁর স্বামী আজিজুল।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হাসপাতাল থেকে নেওয়ার পর শাহবাগ থানার ওসির কক্ষে আটকে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধর করে পুলিশ। এডিসি হারুনের নেতৃত্বে শাহবাগ থানার পরিদর্শক গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করেন।

এই ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে ডিএমপি। কমিটির সভাপতি ডিএমপি সদর দপ্তরের উপপুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) আবু ইউসুফ। অপর দুই সদস্য রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শাহেন শাহ ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ) মো. রফিকুল ইসলাম। কমিটিকে প্রথমে ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্তু তদন্ত শেষ না করতে পারায় আরও পাঁচ দিন সময় বাড়ানো হয়। সোমবার এই পাঁচ দিন শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কমিটি ইতিমধ্যে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করেছে। ঘটনাস্থল বারডেম হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করেছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় এডিসি হারুন ও সানজিদা, রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক, ছাত্রলীগের চার নেতা, শাহবাগ থানার পরিদর্শক গোলাম মোস্তফাসহ যাঁদের যতটুকু দায় পাওয়া গেছে, তদন্ত প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব উল্লেখ করা হয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের ঘটনার সূত্রপাত ব্যক্তিগত একটি বিষয় ঘিরে। এই ঘটনা ঘিরে যেভাবে একাধিক পুলিশ সদস্য ও রাষ্ট্রপতির এপিএস জড়িয়েছেন এটিকে তারা ভালো চোখে নেননি। সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণ সন্তোষজক ছিল না। পুলিশ মনে করে, যে ক্যাডারের কর্মকর্তাই হোক, দায়দায়িত্ব নিরূপণ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া অন্যদের কাছে একটি বার্তা দেওয়া যাবে। অনেকে এও বলছেন, হাসপাতালের মতো জায়গায় এমন পরিস্থিতি ঘটানো উচিত হয়নি।

এদিকে বারডেম হাসপাতালে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা তুলে ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন সেখানকার একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা। সেই চিঠিতে বলা হয়, বারডেমের ইটিটি রুমের সামনে সেদিন মারামারি হচ্ছিল। নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওয়ারেছ আলী দু’পক্ষকে অনুরোধ করে মারামারি থামান। পরে ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে দু’পক্ষকেই থানায় নিয়ে যায়।

ঘটনার পরদিন রোববার ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ঘটনা সম্পর্কে অবগত করে চিঠি দেন সিকিউরিটি সুপারভাইজার ওয়ারেছ আলী। তিনি চিঠিতে লেখেন, শনিবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে আসা একদল দর্শনার্থী ইটিটি (এক ধরনের শারীরিক পরীক্ষা) কক্ষের সামনে মারামারি করেন। হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শন করে এসে তিনি এই মারামারি দেখতে পান। দু’পক্ষকে অনুরোধ করে তিনি মারামারি থামাতে সমর্থ হন। মারামারিতে লিপ্ত ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে প্রথমে তারা জানাতে রাজি ছিলেন না। পরে অনুরোধ করলে তারা পরিচয় দেন। এতে জানা যায়, একজন রাষ্ট্রপতির এপিএস ও অন্যজন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তিনি ৯৯৯-এ ফোন করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রমনা ও শাহবাগ থানার পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়।

সূত্র : প্রথম আলো

বিষয়

হারুন, সানজিদা, আজিজুল ও ছাত্রলীগের দায় পেয়েছে তদন্ত কমিটি

প্রকাশিত: ০৩:৫৮:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

শাহবাগ থানায় আটকে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধরের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তদন্তে সাময়িক বরখাস্ত অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের দায় পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

পাশাপাশি পুলিশের এডিসি সানজিদা আফরিন, তার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক এবং ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদেরও দায় পাওয়া গেছে।

তদন্ত কমিটি সূত্র বলছে, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনার তদন্ত শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

৯ সেপ্টেম্বর রাতে বারডেম হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে শাহবাগ থানায় আটকে ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশের রমনা বিভাগের তৎকালীন এডিসি হারুন অর রশিদ এই মারধরে নেতৃত্ব দেন। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম মোস্তফাকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হকের স্ত্রী ডিএমপির এডিসি (অতিরিক্ত উপকমিশনার) সানজিদা আফরিন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি চিকিৎসা নিতে ওই দিন সন্ধ্যায় বারডেম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পেতে তিনি সহকর্মী হিসেবে এডিসি হারুন অর রশিদের সহায়তা নেন। এ সময় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে এসে এডিসি হারুনকে মারধর করেন তাঁর স্বামী আজিজুল।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হাসপাতাল থেকে নেওয়ার পর শাহবাগ থানার ওসির কক্ষে আটকে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধর করে পুলিশ। এডিসি হারুনের নেতৃত্বে শাহবাগ থানার পরিদর্শক গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করেন।

এই ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে ডিএমপি। কমিটির সভাপতি ডিএমপি সদর দপ্তরের উপপুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) আবু ইউসুফ। অপর দুই সদস্য রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শাহেন শাহ ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ) মো. রফিকুল ইসলাম। কমিটিকে প্রথমে ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্তু তদন্ত শেষ না করতে পারায় আরও পাঁচ দিন সময় বাড়ানো হয়। সোমবার এই পাঁচ দিন শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কমিটি ইতিমধ্যে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করেছে। ঘটনাস্থল বারডেম হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করেছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় এডিসি হারুন ও সানজিদা, রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক, ছাত্রলীগের চার নেতা, শাহবাগ থানার পরিদর্শক গোলাম মোস্তফাসহ যাঁদের যতটুকু দায় পাওয়া গেছে, তদন্ত প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব উল্লেখ করা হয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের ঘটনার সূত্রপাত ব্যক্তিগত একটি বিষয় ঘিরে। এই ঘটনা ঘিরে যেভাবে একাধিক পুলিশ সদস্য ও রাষ্ট্রপতির এপিএস জড়িয়েছেন এটিকে তারা ভালো চোখে নেননি। সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণ সন্তোষজক ছিল না। পুলিশ মনে করে, যে ক্যাডারের কর্মকর্তাই হোক, দায়দায়িত্ব নিরূপণ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া অন্যদের কাছে একটি বার্তা দেওয়া যাবে। অনেকে এও বলছেন, হাসপাতালের মতো জায়গায় এমন পরিস্থিতি ঘটানো উচিত হয়নি।

এদিকে বারডেম হাসপাতালে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা তুলে ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন সেখানকার একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা। সেই চিঠিতে বলা হয়, বারডেমের ইটিটি রুমের সামনে সেদিন মারামারি হচ্ছিল। নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওয়ারেছ আলী দু’পক্ষকে অনুরোধ করে মারামারি থামান। পরে ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে দু’পক্ষকেই থানায় নিয়ে যায়।

ঘটনার পরদিন রোববার ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ঘটনা সম্পর্কে অবগত করে চিঠি দেন সিকিউরিটি সুপারভাইজার ওয়ারেছ আলী। তিনি চিঠিতে লেখেন, শনিবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে আসা একদল দর্শনার্থী ইটিটি (এক ধরনের শারীরিক পরীক্ষা) কক্ষের সামনে মারামারি করেন। হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শন করে এসে তিনি এই মারামারি দেখতে পান। দু’পক্ষকে অনুরোধ করে তিনি মারামারি থামাতে সমর্থ হন। মারামারিতে লিপ্ত ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে প্রথমে তারা জানাতে রাজি ছিলেন না। পরে অনুরোধ করলে তারা পরিচয় দেন। এতে জানা যায়, একজন রাষ্ট্রপতির এপিএস ও অন্যজন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তিনি ৯৯৯-এ ফোন করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রমনা ও শাহবাগ থানার পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়।

সূত্র : প্রথম আলো