দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় প্রকাশিত প্রার্থীদের সম্পদের অস্বাভাবিক তথ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এই সংসদ নির্বাচনে ১৮ জন প্রার্থী ১০০ কোটির টাকার বেশি সম্পদের মালিক বলে জানায় সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘নির্বাচনী হলফনামায় তথ্যচিত্র, জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এমন উদ্বেগের কথা বলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
প্রার্থীদের সম্পদের পাহাড় প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, এটা খুবই সিরিয়াস ব্যাপার, আমরা খুবই আমোদিত হচ্ছি এই সংখ্যাগুলো দেখে। আমরা দুটো সমাজ তৈরি করছি। একটা সমাজ সম্পদশালী, আরেকটা সমাজ দিনে আনে দিন খায় এর মতো। অনেক সময় দিন এনে দিনে (খাবার) জুটছে না এমন পরিস্থিতি দেশে বিরাজ করছে। এটা দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, এটা কী করে সম্ভব। আমি টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে জিজ্ঞাসা করেছি, আমি অবাস্তব বা ইল্যুশন দেখছি কি না।
তিনি বলেন, এটা তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপার ছিল না। এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা, অঙ্গীকার ছিল না। আমাদের সাম্যের অঙ্গীকার ছিল। এত অল্প সময়ের মধ্যে এত সম্পদ বাড়ানো কীভাবে কিছু কিছু মানুষের জন্য সম্ভব হয়েছে। এটা আমাদের দেশের সম্পদ থেকেই কেউ নিয়ে নিচ্ছে। একটা অসম সমাজ আমরা তৈরি করেছি।
সুলতানা কামাল মনে করেন, হলফনামায় যে তথ্যগুলো এসেছে তার মাধ্যমে এই বার্তা যাচ্ছে যে, শাসকগোষ্ঠী ক্রমশ মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বলে যেই দল নিজেদের দাবি করছে, তাদের হাতে যখন দেশ, তখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কত বাইরে কাজ করছি। কত বাইরে এক একেকটি বিষয় চলছে। যেখানে আমাদের প্রতিনিধিত্ব যারা করছেন, তারা আমাদের কী অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছেন সেটার একটা বার্তা দেখতে পাচ্ছি। সেটা খুব সুখকর বার্তা নয়।
প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে টিআইবি জানায়, এবারের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এক হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১৬৪ প্রার্থীরই বার্ষিক আয় এক কোটি টাকার ওপরে। আর ১০০ কোটির টাকার বেশি সম্পদের মালিক ১৮ জন। গত ৫ ও ১৫ বছরে কারও কারও সম্পদ কয়েক হাজার গুণ বেড়েছে।
এসময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে ব্যবসা ও রাজনীতি একাকার হয়ে গেছে। যেটা রাজনীতি সেটাই ব্যবসা, যেটা ব্যবসা সেটাই রাজনীতি হয়ে গেছে। রাজনীতিতে যারা আসেন তারা অনেকেই ব্যবসার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেন, ব্যবসায়ীরা রাজনীতে প্রবেশের মাধ্যমে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেন। যার ফলে অনেক সিদ্ধান্ত, অনেক আইন, নীতি পরিবর্তন জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে করা হয়েছে, এটা বলা কঠিন।
সূত্র : জাগো নিউজ