অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারোনার লড়াইয়ে ২-২ গোলে সমতা। চূড়ান্ত নিষ্পত্তি লড়াইয়ের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। আরও এক ইউরোপীয় ক্লাসিক উপহার দিল বায়ার্ন মিউনিখ ও রিয়াল মাদ্রিদ। ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতার সফল দুই দলের লড়াইয়ে কেউ হারেনি, জেতেনিও কেউ।
কাল রাতে ম্যাচের শুরু হতে না হতেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল বায়ার্ন মিউনিখের, কিন্তু রিয়াল গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিনের সেভ রক্ষা করে দলটিকে। এরপর প্রথম বিশ মিনিট একতরফা খেলেছে জার্মান ক্লাবটি। কিন্তু সুযোগ পেয়েই এগিয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদ, ভিনিসিয়াস জুনিয়রের গোলে।
ম্যাচে গোল হয়েছে চারটি; দল দুটো প্রত্যেকেই দুটো করে। রিয়ালের পক্ষে একাই গোল দুটো করেছেন ভিনিসিয়াস, অন্যদিকে বায়ার্নের পক্ষে গোল করেছেন লেরয় সানে ও হ্যারি কেইন।
আগামী বুধবার চূড়ান্ত হবে কে যাচ্ছে ফাইনালে। সেদিন রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে মুখোমুখি হবে দল দুটো।
ম্যাচ শুরুর ৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই আন্দ্রি লুনিনের কঠিন পরীক্ষা নেয় বায়ার্ন। তবে রিয়াল গোলরক্ষক ছিলেন প্রস্তুত, হ্যারি কেইনের পাস বক্সে পেয়ে ওয়ান-অন-ওয়ানে সানের নেওয়া শট পা দিয়ে রুখে দেন তিনি।
খানিক বাদে পরপর দুই মিনিটে আরও দুটি শট নেয় বায়ার্ন। কেইনের দুর্বল প্রচেষ্টা সহজেই ঠেকান লুনিন, আর ভালো পজিশন থেকে উড়িয়ে মারেন সানে।
প্রথম ২০ মিনিটে প্রতিপক্ষের একচেটিয়া আধিপত্যের সামনে দু-একবার আক্রমণে উঠলেও প্রতিবারই বক্সের বাইরে বল হারিয়ে ফেলে রিয়াল। এই অংশের শেষ মুহূর্তেই প্রথম কর্নার পায় তারা। তবে টনি ক্রুসের ছোট করে নেওয়া কিকে বল পেয়ে উড়িয়ে মারেন ভিনিসিয়াস।
অবশ্য চার মিনিট পর এই দুজনের দারুণ বোঝাপড়াতেই এগিয়ে যায় রিয়াল। প্রতিপক্ষের রক্ষণের সামান্য ফাঁক পেয়ে দারুণ এক থ্রু পাস বাড়ান জার্মান মিডফিল্ডার ক্রুস, আর বক্সে ছুটে গিয়ে প্রথম ছোঁয়ায় নিচু শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ভিনিসিয়াস।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে সেমি-ফাইনালে টানা তিন মৌসুমে গোল করলেন ভিনিসিয়াস। এর আগে এই কীর্তি আছে ইয়ারি লিটমেনেন, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও কেভিন ডে ব্রুইনের।
গোলের সঙ্গে ছন্দও যেন কিছুটা ফিরে পায় রিয়াল। পরের ১০ মিনিটে চাপ ধরে রাখে তারা, যদিও আর তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি এই সময়ে। বিরতির আগে দুই দলই একটি করে বিপজ্জনক পজিশনে ফ্রি কিক পায়, কিন্তু কেউ গোলরক্ষকের পরীক্ষা নিতেও পারেনি।
প্রথমার্ধে গোলের উদ্দেশ্যে সাত শট নিয়ে একটিও কাজে লাগাতে পারেনি বায়ার্ন, সেখানে রেয়াল এক শটেই সাফল্য খুঁজে নেয়। বিরতির পর অবশ্য চার মিনিটেই দুবার জালে বল পাঠিয়ে ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেয় স্বাগতিকরা।
৫৩তম মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে সমতা টানেন সানে। বাঁ দিক থেকে এক ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে বক্সে ঢুকে জোরাল শটে কাছের পোস্ট দিয়ে গোলটি করেন জার্মান ফরোয়ার্ড।
ওই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই দ্বিতীয় গোল হজম করে রিয়াল। বক্সে জামাল মুসিয়ালাকে ফাউল করে বসেন লুকাস ভাসকেস, সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। নিখুঁত স্পট কিকে দলকে এগিয়ে নেন দারুণ ছন্দে থাকা কেইন।
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কেইনের মোট গোল হলো আটটি; কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। প্রতিযোগিতাটিতে এর আগে কখনোই এক আসরে এত গোল করেননি এই ইংলিশ তারকা।
বায়ার্নের জার্সিতে চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে কেইনের গোল হলো ৪৩টি।
তৃতীয় গোলের জন্য আরও চাপ বাড়ায় বায়ার্ন। পরপর দুই মিনিটে দারুণ দুটি সুযোগ পায় তারা; তবে কেইনের শট রুডিগারের পায়ে প্রতিহত হওয়ার পর এরিক ডায়ারের সোজাসুজি হেড ঠেকিয়ে দেন লুনিন।
৭৮তম মিনিটে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে ভীতি ছড়ান ভিনিসিয়াস। খানিক আগে ক্রুসের বদলি নামা লুকা মদ্রিচের থ্রু বল বক্সে বুক দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কোনাকুনি শট নেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড, রুখে দেন মানুয়েল নয়ার।
৮৩তম মিনিটে ভিনিসিয়াসের সফল স্পট কিকে সমতায় ফেরে রিয়াল। বক্সে আরেক ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রদ্রিগোকে ডিফেন্ডার কিম মিন-জায়ে ফাউল করলে পেনাল্টিটি পায় সফরকারীরা।
২০২১-২২ মৌসুমের শুরু থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই নিয়ে ৩১টি গোলে সরাসরি জড়িয়ে ভিনিসিয়াসের নাম (১৫টি করে গোল ও অ্যাসিস্ট), যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি।
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এখন পর্যন্ত অপরাজিত রিয়াল এ নিয়ে ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটে সাতটি গোল করল, যা করতে পারেনি আর কোনো দল।
আগের ১০ মৌসুমে নকআউট পর্বে তিনবার মুখোমুখি হয় দল দুটি এবং প্রতিটিতেই জয়ী রিয়াল; প্রতিবার দুই লেগের হিসাবে মোট ৬ ম্যাচ, যার পাঁচটিতে জেতে রিয়াল, অন্যটি ড্র।